প্রথম পাতা
ডিবিতে পরিবর্তনের হাওয়া
শুভ্র দেব
২৯ অক্টোবর ২০২৪, মঙ্গলবারবাংলাদেশ পুলিশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটগুলোর একটি ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। আর ডিএমপি’র গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ঢাকার অপরাধ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে ডিবি। কিন্তু বছরের পর বছর ডিবি’র বিরুদ্ধে ছিল নানা অভিযোগ। জোরপূর্বক তুলে এনে মাসের পর মাস আটকে রাখা, আসামিদের নির্যাতন
করে টাকা আদায়, জমি দখলে সহযোগিতা, বিরোধী ঘরানার রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের ধরে এনে নির্যাতন করে স্বীকারোক্তি আদায়, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডসহ নানা স্পর্শকাতর অভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন সময়ে। ডিবিতে গোপন আয়নাঘর ছিল বলেও আলোচনা ছিল। বিশেষ করে ডিবি’র সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ থাকাকালে ডিবি সবচেয়ে বেশি সমালোচিত হয়।
৫ই আগস্ট সরকার পতনের পর হারুনের নানা অপকর্ম এবং ডিবি’র অনেক অজানা বিষয় সামনে আসতে শুরু করে। হারুনসহ তার সহযোগী ডিসি, এডিসি ও এসিরা গা ঢাকা দেন। অনেকে পালিয়ে যান। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর শুরু হয় পুলিশকে ঢেলে সাজানোর কাজ। তখন পর্যায়ক্রমে ডিবি’র প্রায় সকল কর্মকর্তাকে বদলি করা হয় পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে। বছরের পর বছর পুলিশের বিভিন্ন অগুরুত্বপূর্ণ স্থানে চাকরি করা পুলিশ কর্মকর্তাদের ডিবিতে এনে পদায়ন করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১লা সেপ্টেম্বর ডিবি’র অতিরিক্ত কমিশনারের দায়িত্ব দেয়া হয় বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের ১৭তম ব্যাচের কর্মকর্তা ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিককে। তিনি দায়িত্ব নিয়েই নানামুখি উদ্যোগ নিয়েছে ডিবিকে গণমুখি করার। এতে পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে।
সূত্রগুলো বলছে, পুলিশ কর্মকর্তা রেজাউল দায়িত্ব গ্রহণের পর ডিবিকে কলঙ্কমুক্ত করার কাজ শুরু করেন। একদিকে ভেঙে পড়া পুলিশ বাহিনী অন্যদিকে অপকর্মের সদর দপ্তর ডিবিকে পুনরায় সংগঠিত করার চ্যালেঞ্জ। তখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিতে নিহতের ঘটনায় একের পর এক মামলা শুরু হয়। এসব মামলায় আসামি হন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তার মন্ত্রী পরিষদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের প্রভাবশালী নেতাকর্মীরা। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে চ্যালেঞ্জ নিয়ে মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার করা শুরু করে ডিবি। সবমিলিয়ে এখন পর্যন্ত প্রায় দুই শতাধিক আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সূত্র বলছে, সারা দেশে ৮টি রেঞ্জ পুলিশের অধীনে ৫২৯টি থানা রয়েছে। এ ছাড়া ৭টি মেট্রোপলিটন পুলিশের অধীনে ১১০টি থানা আছে। আন্দোলনে নিহত হয়েছেন এমন ভুক্তভোগীদের স্বজনরা দেশের প্রায় বিভিন্ন থানায় মামলা করেছেন। ঢাকার বিভিন্ন থানায় যেসব মামলা হয়েছে সেসব মামলায় বিগত সরকারের প্রভাবশালীরা আসামি হয়েছেন। ঢাকার বাইরের মামলায়ও অনেক প্রভাবশালীদের আসামি করা হয়েছে। কিন্তু যখন বিভিন্ন মেট্রোপলিটন ও রেঞ্জ পুলিশের আসামি গ্রেপ্তার নিয়ে কোনো তোড়জোড় ছিল না তখন সবার আগে এগিয়ে আসে ডিএমপি’র ডিবি। হেভিওয়েট আসামিদের গ্রেপ্তারের পাশাপাশি রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। পাশাপাশি থানা পুলিশের গ্রেপ্তার করা আসামিদের হেফাজতে রেখে নিরাপত্তা দিয়েছে ডিবি।
ডিবি’র একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকার পতনের পর ডিবিকে নানাভাবে ঢেলে সাজানো হয়েছে। সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার হারুনের আমলে যেসব অনিয়ম ছিল সেগুলো এখন আর নেই। কর্মকর্তা-কর্মচারী থেকে শুরু করে, কাজের ধরন, পলিসি সর্বত্রই পরিবর্তন হয়েছে। অপ্রতুল জনবল নিয়ে ঢাকার ৮টি জোন ও দুটি সাইবার ডিভিশনের কাজ চলছে। অনেক বিভাগেই এখন ডিসি পদমর্যাদার কর্মকর্তা নাই। একেকজন ডিসি ২ থেকে ৩টি ডিভিশনের দায়িত্বে আছেন। একইভাবে এডিসি ও এসি পদমর্যাদার কর্মকর্তারাও প্রয়োজনের তুলনায় অর্ধেকের চেয়ে কম। এর নিচে পুরাতন পরিদর্শক, এসআই, এএসআই ও কনস্টেবল পদের পুলিশ সদস্যদের বদলি করা হয়েছে। যাদেরকে বদলি করা হয়েছে তাদের স্থানে নতুনরা এসে যোগ দিচ্ছেন। বিশেষ করে ডিবি’র কনস্টেবল থেকে শুরু করে অতিরিক্ত কমিশনার পর্যন্ত সবাই নতুন। তাই তারা অপরাধ নিয়ন্ত্রণের জন্য নতুন করে সোর্স তৈরিসহ অন্যান্য কাজ করছেন। পাশাপাশি প্রতিটি এলাকার দায়িত্বে থাকা ডিসি, এডিসি, এসি, পরিদর্শক, এসআইসহ অন্যরা গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করে ক্রাইম ডাটা তৈরি, অপরাধীর তালিকা তৈরি, ভিআইপি আসামিদের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন। ডিএমপি’র বিভিন্ন ডিভিশনে এলাকাভিত্তিক চোর, ডাকাত, খুনি, ছিনতাইকারীসহ অন্যান্য অপরাধের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের ওপর নজরদারি, গ্রেপ্তার করছেন। এ ছাড়া সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে ডিবি। প্রতিদিনই ভুক্তভোগীরা বিভিন্ন অভিযোগ নিয়ে সাইবার কর্মকর্তাদের কাছে আসছেন।
ডিবি’র অতিরিক্ত কমিশনার রেজাউল করিম মল্লিক মানবজমিনকে বলেন, আমি নির্যাতিত, অবহেলিত এক পুলিশ কর্মকর্তা। প্রায় ১৮ বছর আমি কষ্ট সহ্য করেছি। পুলিশের যত অগুরুত্বপূর্ণ পদ আছে সেখানে আমাকে পদায়ন করা হতো। ছুটি দেয়া হতো না। আমাকে তারা এতটাই কষ্ট দিয়েছে আমার বাবা, মা ও বড় ভাইয়ের মৃত্যুর সময় তাদেরকে দেখতে দেয়নি।পিবিআইয়ের সিলেট বিভাগের দায়িত্বে থাকাকালীন সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাচন ছিল। তখন আমি বিএনপি প্রার্থী আরিফুল হকের পক্ষে কাজ করবো এই ভেবে আমাকে রাতারাতি রংপুরে বদলি করে দেয়া হয়। সবই সহ্য করেছি একটা ভালো দিনের প্রত্যাশায়। দীর্ঘ ১৮ বছর পর এসব সহ্য করার পর ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে হাজারো শহীদের রক্তের বিনিময়ে স্বৈরাচারী সরকারের পতন হয়েছে। এখন আমি ওই কষ্টগুলো ভুলে গিয়ে সরকার ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশ অনুযায়ী আইন শৃঙ্খলার যে দায়িত্ব-কর্তব্য আছে সেটি স্বাভাবিকভাবে করছি। এখন আমার একটাই টার্গেট। অপরাধ নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখা। এই দেশের মানুষের জন্য কিছু করা।
তিনি বলেন, ডিবিতে সাধারণ মানুষ যেন সুবিচার পায়, অন্যায় জুলুম থেকে বাঁচতে পারে সেটি নিশ্চিত করেছি আমি। এমনকি আমিও আইনের ঊর্ধ্বে না। কোনো কর্মকর্তা যদি আইন লঙ্ঘন করে, তারা যদি কোনো দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত হয় তবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো।
WE ALL RESPECT YOU SIR
গজী গোলাম দস্তগীরের বাসায় যে ঘটনা ঘটল তা এই সরকারের ভাবমুর্তিকে দারুন ভাবে ক্ষুন্ন করেছে বলে আমি মনে করি। অনতিবিলম্ব এর একটা উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত হওয়া প্রয়োজন এবং দোষীদের কঠোর শাস্তির ব্যবস্হা করা হোক। স্বরাষ্টমন্ত্রনালয় এ বিষয়ে কি পদক্ষেপ নিল তা আমরা জানতে পারলাম না। সকল সেনসিটিভ বিষয়ে আমরা সরকারের কাছ থেকে তথ্য জানতে চাই। আমাদের কে তথ্য দিন। তথ্য জানা আমাদের অধিকার।
এদেশে অনেক মল্লিকের প্রয়োজন।
নতুন ডিবি প্রধানের জন্য শুভ কামনা রহিল। আল্লাহ আপনার সহায় হোন।
ধন্যবাদ স্যার আমাদের দেশকে এগিয়ে নেন এটাই চাওয়া আমাদের।চুর বাটপার চিটার এদের কোন স্তান এদেশের মাটিতে নাই আপনে এগিয়ে যান দুয়া করি আপনার জন্য।
অবিশ্বাস্য। তবে যদি পরিবর্তন হয় তবে দেশের জন্য মঙলজনক। বাঙালী দুর্নীতি দেখে ও দুর্নীতি করে অভ্যস্ত, তাই দুর্নীতিমুক্ত শাসন ব্যবস্থার উপকারিতা উপলব্ধি কথতে পারছে না । আমরা দুর্নীতিমুক্ত দেশে প্রবাসে আছি এর পরম শান্তি আমরা উপলব্ধি করছি । কোটি কোটি টাকা নাই কিন্ত সচ্ছল ভাবে বেঁচে আছি শান্তিতে ।