প্রথম পাতা
ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় ভোগান্তি
স্টাফ রিপোর্টার
২৭ অক্টোবর ২০২৪, রবিবার
কমলাপুরে টানা দুইদিন ধরে ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়ে ভোগান্তিতে পড়ছেন যাত্রীরা। বৃহস্পতিবার রাতে পঞ্চগড় এক্সপ্রেস ট্রেনটি কমলাপুরে লাইনচ্যুত হওয়ার পর থেকেই শিডিউল বিপর্যয়ে পড়েছে ট্রেন। শুক্রবার ও গতকালও দিনভর ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা পর্যন্ত শিডিউল বিপর্যয় হয়েছে। এতে কমলাপুর স্টেশনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে যাত্রীদের।
গতকাল ঢাকা-সিলেট রুটে আন্তঃনগর জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস, ঢাকা-তকাকান্দি রুটে চলাচলকারী অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস, তুরাগ কমিউটার ট্রেনের যাত্রা বাতিল করা হয়। এদিন সকাল থেকেই সব ধরনের ট্রেনের শিডিউলে বিপর্যয় ঘটেছে। প্রতিদিন কমলাপুর স্টেশন হয়ে ১৮২টি ট্রেন চলাচল করে। অধিকাংশ ট্রেন শুধু একটি রেক দিয়ে চালানো হয়। ফলে একটি ট্রেন সময়মতো না ছাড়লে পরের ট্রেনটিও দেরিতে যায়। রোববারের মধ্যে শিডিউল বিপর্যয় নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে আশা করছে রেল কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া যাত্রীদের টিকিটের রিফান্ড যথাসময়ে দেয়া হবে বলেও জানানো হয়।
বিলম্বে ট্রেন ছাড়ার কারণে অধিকাংশ যাত্রীকে স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে বসে থাকতে দেখা যায়। মোহায়মিনুল নামের রংপুরের এক যাত্রী বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে স্টেশনে বসে আছি। ট্রেন কখন ছাড়বে তাও জানি না। আরেক যাত্রী সামিয়া আক্তার বলেন, সকাল সাড়ে ৮টা থেকে স্টেশনে বসে আছি। দুপুর হলেও ট্রেন ছাড়েনি। বাচ্চা নিয়ে স্টেশনে বসে থাকা কষ্টের। শিহাব নামের আরেক যাত্রী বলেন, ছোট বোনের ভর্তি পরীক্ষার জন্য ঢাকায় এসেছি। সকাল ৯টা থেকে অপেক্ষা করছি। দুপুর ২টা বাজে, এখনো ট্রেন ছাড়েনি।
বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা থেকে পঞ্চগড়গামী আন্তঃনগর ট্রেন পঞ্চগড় এক্সপ্রেস (৭৯৩) লাইনচ্যুতির ঘটনায় ঢাকার সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগে বিপর্যয় তৈরি হয়। প্রায় ৭ ঘণ্টা পর লাইন ঠিক করা হলেও শুক্রবার সকাল থেকে ঢাকা ছেড়ে যাওয়া সবগুলো ট্রেন শিডিউল বিপর্যয়ে পড়ে। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার আনোয়ার হোসেন বলেন, বৃহস্পতিবার রাত ১২টায় পঞ্চগড় এক্সপ্রেসের ৪টি বগি লাইনচ্যুত হয়। তবে কোনো বগি উল্টে যায়নি; কেউ হতাহত হয়নি। এর আগে বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লোকাল ট্রেন গোপীবাগে লাইনচ্যুত হয়। সে সময় ঢাকা-খুলনা লাইনে প্রায় সাড়ে ৫ ঘণ্টা ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পঞ্চগড় এক্সপ্রেস ট্রেনটি সাধারণ সময়ের প্রায় আধা ঘণ্টা বিলম্বে বৃহস্পতিবার ঢাকা রেলওয়ে স্টেশন ছাড়ে। প্ল্যাটফর্ম পার হওয়ার ২ মিনিটের মধ্যে ঝাঁকুনি অনুভব হয় এবং ট্রেনটি থামানো হয়। পরে দেখা যায় ট্রেনের বিভিন্ন কোচের কয়েকটি বগি লাইনচ্যুত হয়। ট্রেনের গতি কম ছিল বলে কেউ আহত হয়নি।
এদিকে রেললাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় রেলের অটোমেটিক অপারেশন কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে ট্রেন ছাড়ার কারণে সময় লাগছে বেশি। তবে গতকাল অটোমেটিক সিগন্যাল দুপুর ১২টায় আবার চালু হয়েছে। ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনের ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার বলেন, স্বয়ংক্রিয় যে অপারেশন ব্যবস্থা ছিল তা ১২টায় পুনঃস্থাপন হয়েছে। এখন থেকে যে ট্রেনগুলো চলছে সেগুলো স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল ব্যবস্থায় ছেড়ে যাচ্ছে। ম্যানুয়ালি অপারেশন করায় ট্রেন বিলম্ব হয়েছে। যার কারণে যাত্রীদের ভোগান্তি হয়েছে। আশা করি রোববারের মধ্যে এটি পুরোপুরি ঠিক হয়ে যাবে।
কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন সূত্র বলেছে, পঞ্চগড় এক্সপ্রেস লাইনচ্যুত হওয়ায় ঢাকা থেকে পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলের রুটের সবগুলো ট্রেন আটকা পড়ে বিভিন্ন স্টেশনে। বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ট্রেনগুলো গাজীপুরের জয়দেবপুর, পুবাইল ও টঙ্গী, নরসিংদীর জিনারদি ও ঘোড়াশাল; ঢাকার বিমানবন্দর, তেজগাঁও ও ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে আটকে থাকে শুক্রবার দিনভর। এতে অনেক ট্রেন প্রায় ৫-৭ ঘণ্টা বিলম্বে কমলাপুর থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে যায়। একইদিনে দু’টি ট্রেনের লাইনচ্যুতির ঘটনা তদন্তে বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক (রেল) মোহাম্মদ মহিউদ্দিন আরিফকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে রেলওয়ে।
পাঠকের মতামত
এই সরকার তো জনতার সরকার, ওনারা তে বাস মালিকদের স্বার্থে রেল ব্যবস্থাকে ধ্বংশ করবেন বলে বিশ্বাস করি না , কিন্তু রেল লাইন মেন্টেন্যান্সে কোন তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না । ফলে ট্রেন লাইনচ্যুতি অহরহ ঘটছে ।