প্রথম পাতা
স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সরকারকে চাপে রাখার সিদ্ধান্ত
মতানৈক্য কমাতে একাধিক বৈঠকে বসবে বিএনপি-কমিশন
কিরণ শেখ
১৯ এপ্রিল ২০২৫, শনিবার
পাঁচ কমিশনের দেয়া সংস্কার প্রস্তাবের ওপর ঐক্যমতে পৌঁছাতে বিএনপি’র সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের একাধিক বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এমন আভাস দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।
এরমধ্যে বৃহস্পতিবার বিএনপি’র সঙ্গে প্রথম দিন আলোচনা করেছে কমিশন। দিনব্যাপী আলাপচারিতায় কোনো সুরাহা হয়নি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি উভয়পক্ষ। কিছু কিছু বিষয়ে কমিশনের সঙ্গে কাছাকাছি ঐকমত্যে পৌঁছেছে বিএনপি। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে মতভিন্নতাও রয়েছে। আলোচনায় কোনো সুরাহা না হওয়ার বৈঠক চালিয়ে যাওয়ার কথা জানানো হয়েছে। আগামীকাল রোববার বিএনপি’র সঙ্গে দূরত্ব কমিয়ে আনতে দ্বিতীয়দিনের আলোাচনায় বসবে কমিশন। ওদিকে বৃহস্পতিবার রাতে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির এক বৈঠকে সমমনা সকল দলের সঙ্গে আলোচনা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ডিসেম্বরে নির্বাচন দিতে সরকারকে চাপে রাখতে এ সিদ্ধান্ত।
আলোচনার বিষয়ে এক বিবৃতিতে কমিশন বলছে, বিএনপি ২৩শে মার্চ তাদের প্রস্তাব কমিশনে জমা দিয়েছে। তার প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার দলটির সঙ্গে আলোচনায় বসে কমিশন। আগামী কাল সকাল ১১টায় বিএনপি’র সঙ্গে দ্বিতীয়দিনের আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে সকালে বিএনপি’র সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক শুরুর আগে জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার বলেন, বিএনপি’র সঙ্গে আজকে (বৃহস্পতিবার) প্রথম আলোচনা শুরু হতে যাচ্ছে। আমরা জানি না, এই আলোচনা একদিনে শেষ হবে না কী আরও প্রয়োজন পড়বে। কিন্তু কমিশনের পূর্ণ প্রস্তুতি রয়েছে এই আলোচনা একাধিক দিন চালিয়ে যাওয়ার।
বৈঠক সূত্র জানায়, বিএনপি অনেক বিষয়েই কমিশনের কিছু কিছু প্রস্তাব সংশোধিত আকারে মেনে নিয়েছে। কমিশনের অনেকগুলো প্রস্তাবের কিছু কিছু অংশ যৌক্তিকও মনে করেছে দলটি। তবে দলীয় ফোরামে আলাপ-আলোচনা করে কমিশনকে জানাবেন নেতারা। এছাড়া রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিতে সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায় বিচার- এই শব্দগুলো গ্রহণ করতে চায় বিএনপি।
ওদিকে বিএনপি’র দলীয় সূত্র জানায়, বৈঠকে বিচার বিভাগের ম্যাজিস্ট্রেটদের বেতন-ভাতার বিষয়ে সংবিধানের আর্টিকেল ১৪৭-এ অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলা হয়েছে। এখন ওই আর্টিকেলে রাষ্ট্রপতি এবং বিচারপতিসহ অন্যদের কোথায় নেয়া হবে। যারা সাংবিধানিক পদধারী যেমন- রাষ্ট্রপতি, স্পিকার, প্রধানমন্ত্রী তাদেরটা সংবিধানে থাকতে পারে। এছাড়া সবার বেতন-ভাতা সংবিধানে উল্লেখ করতে হবে কেন- বলেও প্রশ্ন রাখেন বিএনপি নেতারা। এদের জন্য আলাদা আইন হতে পারে বলেও মত দিয়েছে দলটি। এছাড়া বৈঠকে বিচারকদের বয়স ৭০ বছর করার প্রসঙ্গে বিএনপি নেতারা বলেন, এটা যদি করা হয় তাহলে অন্যান্য সাংবিধানিক পদেও একই দাবি উঠতে পারে। এ ইস্যুটাও পরবর্তী সংসদে উপস্থাপন হতে পারে। সেখানে এটার সুরাহা হতে পারে।
সূত্র আরও জানায়, বৈঠকে বিএনপি নেতারা বলেন, সংবিধান সংশোধনের বিষয়ে বিএনপি একমত। কিন্তু এখনতো এই সংবিধান সংশোধন করা সম্ভব হবে না। এটা একমাত্র সংসদেই করা সম্ভব হবে। এটা না করলে সংবিধান লঙ্ঘন হবে। কারণ এই সংবিধানের মাধ্যমেই শপথ নিয়েছেন বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। সবকিছু পরিচালিতই হচ্ছে এই সংবিধানের মাধ্যমে। এখন যে অধ্যাদেশের মাধ্যমে জুডিশিয়াল নিয়োগ কমিশন গঠন করেছে। এখন ওই আইনই যদি বৈধ না হয় তাহলে কমিশন কীভাবে বৈধ হবে।
বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ মানবজমিনকে বলেন, সংবিধানের মূলনীতি, রাষ্ট্র পরিচালনায় মূলনীতি, ফান্ডামেন্টাল রাইটস এবং আইন বিভাগের- এগুলো সম্পর্কে আলোচনা করেছি। বাকিটা রোববার হবে।
প্রসঙ্গত, রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে দুই ধাপে ১১টি কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। গত ১৫ই ফেব্রুয়ারি কমিশনগুলোর সুপারিশ নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য গঠনের লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে কমিশনের কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর থেকে সংসদ ভবনের এলডি হলে কমিশনের সহ-সভাপতি ও সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজের নেতৃত্বে কমিশন সদস্যরা আলাদা আলাদাভাবে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করছেন। সংস্কার কমিশনগুলোর করা সুপারিশ চূড়ান্ত করতে গত ২০শে মার্চ থেকে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করে কমিশন। এই পর্যন্ত তারা ১১টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক শেষ করেছে।
সরকারকে চাপে রাখার সিদ্ধান্ত: সংসদ নির্বাচনের ইস্যুকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তেমন গুরুত্বই দিতে চাইছে না বলে মনে করছে বিএনপি। নির্বাচন নিয়ে সরকার সিরিয়াসও নয় বলে মনে করা হচ্ছে। এজন্য সরকারকে অব্যাহত চাপে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। এই অবস্থায় দলটি যুগপৎ আন্দোলনে সমমনা দলসহ অন্যান্য সকল দলের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দুই সপ্তাহব্যাপী এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। আজ বিকাল থেকে এ বৈঠক শুরু হবে। এছাড়া দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের নিয়ে চলতি মাসের শেষে কিংবা আগামী মাসের শুরুতে সংবাদ সম্মেলনের পরিকল্পনা করছে বিএনপির। এই সংবাদ সম্মেলন থেকে দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত এবং তারা আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চায়, সরকারকে এই বার্তা দেয়া হবে। বৃহস্পতিবার রাতে দলের চেয়ারপারসনের গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিএনপি’র সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। এতে লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
সূত্র জানায়, সংসদ নির্বাচন নিয়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের দল, জোট ও নির্বাচন বর্জনকারী অন্যান্য দলগুলোর অবস্থান স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। তারা সকলেই কাছাকাছি অবস্থান করছে। এখন সবাইকে এক প্ল্যাটফর্মে আনার উদ্যোগ গ্রহণের মধ্য দিয়ে সেটাকে আরও জোরালো করা হবে। এছাড়া স্থায়ী কমিটির সদস্যরা বৈঠকে সমপ্রতি আগামী রোজার আগেই জামায়াতে ইসলামীর নির্বাচন দাবির বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। তারা জামায়াতের এমন অবস্থানকে ইতিবাচকভাবেই দেখছেন।