দেশ বিদেশ
২২ বছর ধরে আওয়ামী লীগ নেতাদের দখলে বিএনপি পরিবারের জায়গা
স্টাফ রিপোর্টার, কিশোরগঞ্জ থেকে
১৩ অক্টোবর ২০২৪, রবিবারকিশোরগঞ্জের মিঠামইনে এক বিএনপি নেতার পরিবারের অন্তত ৬০ লাখ টাকা মূল্যের ৬ শতাংশ জায়গা প্রভাবশালী তিন আওয়ামী লীগ নেতা গত ২২ বছর ধরে দখলে রেখেছেন। উপজেলার গোপদীঘি ইউনিয়নের গোপদীঘি বাজারের এই জায়গায় দোকানঘর বানিয়ে ব্যবসা করছেন দখলদার তিন আওয়ামী লীগ নেতা ও তাদের পরিবার। বছরের পর বছর ধরে জায়গাটি দখলমুক্ত করতে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন জায়গার মালিক বিএনপি নেতা মো. মামুন মিয়া ও তার পরিবারের সদস্যরা। এরপরও প্রভাবশালী এসব আওয়ামী লীগ নেতা ও তাদের পরিবারের কাছ থেকে জায়গাটি উদ্ধার করা যায়নি। দখলদাররা হচ্ছেন- গোপদীঘি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি মীরফত আলী মীরের দুই ভাতিজা মোবারক মীর ও সুজাতুল
মীর, ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আশরাফ উদ্দিন এবং ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি আব্দুস সাত্তার। অন্যদিকে জায়গার মালিক মো. মামুন মিয়া মিঠামইন উপজেলা বিএনপি’র সাবেক যুগ্মসাধারণ সম্পাদক ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক। মো. মামুন মিয়া জানান, তার বাবা আবুল হাশেম ১৯৮৮ সালে গোপদীঘি বাজারে ১০ শতাংশ জায়গা কিনেন। তখন জায়গাটিতে গর্ত থাকায় সেখানে কোনো স্থাপনা তৈরি না করে খালি রেখে দেন। ২০০০ সালে তার বাবা আবুল হাশেম মারা যান। বিএনপি নেতা মামুন মিয়ার অভিযোগ, ২০০২ সালে জাল দলিল তৈরি করে তাদের ১০ শতাংশ জায়গার মধ্যে ৬ শতাংশ জায়গা দখলে নেন স্থানীয় প্রভাবশালী তিন আওয়ামী লীগ নেতা হাবিবুল্লাহ মীর, হাবিবুর রহমান হবি ও আব্দুস সাত্তার। সে সময় মামুনের পরিবার এতে বাধা দিলেও বিষয়টি সমঝোতার মাধ্যমে মীমাংসা করার আশ্বাস দিয়ে তারা জায়গার দখল ধরে রাখেন। পরবর্তীতে বাধা-নিষেধ উপেক্ষা করে দখল করা জায়গায় তিনজনে তিনটি ঘর তৈরি করে সেসব ঘরে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেন। তখন জাল দলিলের ব্যাপারে মামুনের বড় ভাই আবুল খায়ের রতন আদালতে মামলা করলে এ মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে আব্দুস সাত্তার কিছুদিন জেল খাটেন। কিন্তু কোনোভাবেই তাদের কাছ থেকে জায়গা দখলমুক্ত করা যায়নি। ভুক্তভোগী বিএনপি নেতা মামুন মিয়া বলেন, দখলদাররা স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদের আশীর্বাদপুষ্ট হওয়ায় জায়গার প্রকৃত মালিক হওয়া সত্ত্বেও আমরা আমাদের জায়গাটি ফেরত পাইনি। বর্তমানে জায়গাটির দাম অন্তত ৬০ লাখ টাকা। গত ২২ বছর ধরে তারা জায়গাটি দখলে রেখে দোকানপাট তুলে সেখানে ব্যবসা করছে। এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সম্প্রতি রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর আবারো নিজেদের জায়গা ফেরৎ চান মামুন মিয়া। এ বিষয়ে গত ৪ঠা সেপ্টেম্বর গোপদীঘি ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে এক শালিস হয়। শালিসে উভয়পক্ষকে জায়গার দলিল উপস্থাপনের কথা বলা হয়। পরবর্তীতে ২০শে সেপ্টেম্বর মো. মামুন মিয়া কাগজপত্র জমা দেন। অন্যদিকে দখলকারীরা একটি দলিল জমা দিলেও রেজিস্ট্রি অফিসের ইনডেক্সের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। সর্বশেষ গত ৬ই অক্টোবর শালিসে মো. মামুন মিয়ার পক্ষে রায় দেয়া হয়। রায়ের পরও জায়গার দখল বুঝে পাচ্ছেন না মো. মামুন মিয়া। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, স্থানীয় বিএনপি’র একটি পক্ষ বর্তমানে দখলকারীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে। এ কারণে তারা ২২ বছরের দখলদারিত্ব এখনো বজায় রেখে চলেছেন। এ ব্যাপারে গোপদীঘি ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বলেন, উভয়পক্ষের কাগজপত্র দেখে মো. মামুন মিয়ার মালিকানার বিষয়টি শালিসানগণ নিশ্চিত হয়েছেন। অন্যদিকে তার প্রতিপক্ষের কাগজপত্র নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে।