ঢাকা, ১৩ নভেম্বর ২০২৪, বুধবার, ২৮ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিঃ

শরীর ও মন

কপালের পাশ (Temple) থেকে চুল পড়া

অধ্যাপক ডা. এসএম বখতিয়ার হ কামাল
১২ অক্টোবর ২০২৪, শনিবার

অ্যান্ড্রোজেনেটিক অ্যালোপেশিয়া (ধহফৎড়মবহবঃরপ ধষড়ঢ়বপরধ) বা বয়সজনিত চুল পড়ার একদম প্রাথমিক লক্ষণ হলো কপালের পাশের চুল পাতলা হয়ে যাওয়া। সারা স্ক্যাল্প (ংপধষঢ়) থেকেই চুল উঠতে থাকে এবং কপালের পাশে মনে হয় টাক পড়ে যাচ্ছে। কপালের একদিক বা দুদিকেই শুরু হতে পারে। এর সঙ্গে সাধারণত হেয়ারলাইন পিছিয়ে যায়, বা উইডোজ পিক (রিফড়ংি ঢ়বধশ কপালের মাঝখানে ‘ঠ’ আকৃতির হেয়ারলাইন) দেখা যায়। এটি মহিলাদের থেকে পুরুষদের মধ্যে বেশি দেখা যায় এবং বয়সের সঙ্গে এর প্রবণতা বেড়ে যায়। সময়ে চিকিৎসা না করালে এটি স্থায়ী সমস্যা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
কারণ: কপালের পাশ থেকে চুল পড়তে শুরু করলে  সম্ভবত বয়সজনিত চুল পড়ার সমস্যায় ভুগছেন। এটা ছাড়া আরও কিছু কারণ থাকতে পারে।

১. মেল প্যাটার্ন বল্ডনেস /এমপিবি (গধষব চধঃঃবৎহ ইধষফহবংং /গচই): বয়সজনিত এই চুল পড়ার সমস্যাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় অ্যান্ড্রোজেনেটিক অ্যালোপেশিয়া (অহফৎড়মবহবঃরপ অষড়ঢ়বপরধ)। এটি জেনেটিক (মবহবঃরপ) কারণে পুরুষদের কপালের পাশ থেকে চুল পড়া শুরু হয়। হেয়ার ফলিকলের (যধরৎ ভড়ষষরপষব) ডাইহাইড্রোটেস্টোস্টেরোন (ফরযুফৎড়ঃবংঃড়ংঃবৎড়হব/উঐঞ) হরমোনের প্রতি অতিরিক্ত সংবেদনশীলতার ফলে এই রোগটি হয়। গবেষণায় দেখা গেছে যে ৩০-৫০ বছর বয়সী পুরুষদের মধ্যে ৫৮% এই রোগে ভোগেন। এটি কপালের পাশের চুলে প্রথম দেখা দেয়।

২. অন্যান্য কারণ  
ক. অ্যালোপেশিয়া এরিয়াটা (অষড়ঢ়বপরধ অৎবধঃধ): এই রোগে হঠাৎ করে মাথার বিভিন্ন জায়গার চুল উঠে ফাঁকা হয়ে যেতে থাকে। কপালের পাশ থেকেও খাবলা করে চুল উঠে যেতে পারে।
খ. স্কারিং অ্যালোপেশিয়া (ঝপধৎৎরহম অষড়ঢ়বপরধ): একে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় বলে প্রাইমারি সিকাট্রিশিয়াল অ্যালোপেশিয়া (ঢ়ৎরসধৎু পরপধঃৎরপরধষ ধষড়ঢ়বপরধ)। এর মধ্যে পড়ে এক গুচ্ছ চুলের রোগ যেগুলোতে হেয়ার ফলিকল স্থায়ীভাবে নষ্ট হয়ে গিয়ে তার জায়গায় দেখা দেয় ফাইব্রাস টিস্যু (ভরনৎড়ঁং ঃরংংঁব)।
গ. স্ট্রেস (ঝঃৎবংং): আমাদের দেহের ওপর কোনো অতিরিক্ত স্ট্রেস পড়লে চুলের বৃদ্ধির পর্যায়ে বাধা পড়ে টেলোজেন (ঃবষড়মবহ) এবং টেলোজেন এফ্লুভিয়াম (ঃবষড়মবহ বভভষাঁরঁস) দেখা দেয়। বৃদ্ধির পর্যায়ে থাকা চুলগুলো খুব শিগগিরই বিশ্রামের পর্যায়ে চলে যায় এবং তাড়াতাড়ি ঝরে পড়ে। এর ফলে কপালের পাশের চুলও পাতলা হয়ে যায়। স্ট্রেসের জন্য কপালের পাশের চুল পড়ে যাওয়া মহিলাদের মধ্যে বেশি দেখা যায়, কারণ:
১) প্রসব পরবর্তী (চড়ংঃ চধৎঃঁস) চুল পড়া: প্রসবের পর মহিলাদের পুরো মাথা জুড়ে চুল ঝরা শুরু হয়, যা
কপালের পাশে বেশি হতে পারে।
২. ট্র্যাকশন অ্যালোপেশিয়া (ঞৎধপঃরড়হ অষড়ঢ়বপরধ): মহিলারা যখন চুল শক্ত করে টেনে ঝুঁটি বা খোঁপা বাঁধেন, তখন হেয়ার ফলিকলের উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে। কপালের পাশের চুলে টান পড়ার ফলে এখানকার চুল পাতলা হয়ে যেতে পারে।

লক্ষণ
* চুল পাতলা হয়ে যাওয়া;
* কপালের পাশের হেয়ারলাইন; পিছিয়ে যাওয়া।
* কপালের পাশে চুলের ফাঁক দিয়ে মাথার ত্বক দেখা যাওয়া
* চুলের ক্ষতি, দুর্বলতা ও সহজে ভেঙে যাওয়া। 
চিকিৎসাসমূহ: রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে হেয়ার ফলিকলগুলো সক্রিয় থাকার সম্ভাবনা বেশি। একবার ফাইব্রোসিস (ভরনৎড়ংরং) হয়ে গেলে ননইনভেসিভ (হড়হ-রহাধংরাব) চিকিৎসায় আর সাড়া পাওয়া যায় না।
আপনার কপালের পাশের চুল পড়ার কারণ ও ব্যাপকতা দেখে আপনাকে চিকিৎসার পরামর্শ দিতে পারেন।  আপনাকে ওষুধ, মাথায় লাগানো জেল ও ফোম (ঃড়ঢ়রপধষ মবষং ধহফ ভড়ধসং) আলাদাভাবে বা একসঙ্গে ব্যবহার করার নির্দেশ দিতে পারেন। আপনার চর্মবিশেষজ্ঞ যখন আপনার চুল পড়ার সঠিক কারণ ও ব্যাপ্তি নির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করবেন, তখন তিনি আপনাকে প্লেটলেট রিচ প্লাজমা থেরাপিরও (ঢ়ষধঃবষবঃ ৎরপয ঢ়ষধংসধ ঃযবৎধঢ়ু) পরামর্শ দিতে পারেন।
১. প্লেটলেট রিচ প্লাজমা /পিআরপি (চষধঃবষবঃ-জরপয চষধংসধ/চজচ): পিআরপি একটি নিরাপদ নন-সার্জিক্যাল চিকিৎসা পদ্ধতি যা কপালের পাশের চুল পড়ায় ভালো কাজ করে। এতে রোগীর রক্ত থেকে নেয়া প্লেটলেট ব্যবহার করে নতুন চুল গজানোতে সাহায্য করা হয়। মহিলা ও পুরুষ উভয়ের জন্যই টাক পড়া প্রতিরোধে এটি কার্যকরী।
২. মিনক্সিডিল (গরহড়ীরফরষ): রোগেন (জড়মধরহব) নামে জনপ্রিয়, এই ওষুধটি, চুল গজানোর চিকিৎসার জন্য এফডিএ (ঋউঅ) অনুমোদিত। মাথায় লাগানোর ফোম বা সল্যুশন (ঃড়ঢ়রপধষ ভড়ধস ড়ৎ ংড়ষঁঃরড়হ) হিসেবে কপালের পাশের চুল পড়ায় ব্যবহার করা যায়। 
৩. ফিনাস্টেরাইড (ঋরহধংঃবৎরফব): এটিও মাথায় লাগানোর ওষুধ হিসেবে চুল পড়ার জন্য এফডিএ অনুমোদিত। তবে ডাক্তাররা পুরুষ এবং মেনোপজ (সবহড়ঢ়ধঁংব) হয়ে যাওয়া মহিলাদের বয়সজনিত চুল পড়ার সমস্যায় এটি ব্যবহার করেন।
৪. কপালের পাশের হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট (ঐধরৎ ঞৎধহংঢ়ষধহঃ): এটি প্রাথমিক পর্যায়ে করা উচিত না, কারণ পরবর্তীকালে বয়সজনিত চুল পড়ার ফলে চুল আবার পাতলা হয়ে যেতে পারে। অন্য চিকিৎসায় সাড়া না পেলে শেষ বিকল্প হিসেবে এই সার্জারি করা যেতে পারে।

লেখক: চর্ম, যৌন ও অ্যালার্জি রোগ বিশেষজ্ঞ (সাবেক) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
কামাল হেয়ার অ্যান্ড স্কিন সেন্টার, ফার্মগেট, ঢাকা। প্রয়োজনে: ০১৭১১-৪৪০৫৫৮

শরীর ও মন থেকে আরও পড়ুন

শরীর ও মন সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status