দেশ বিদেশ
নবীন দালালের প্রতারণার ফাঁদ
চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি
৬ অক্টোবর ২০২৪, রবিবার
বিদেশ যাওয়ার জন্য পাসপোর্ট আর টাকা দিয়ে প্রতারিত হয়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রায় তিন শতাধিক যুবক। ইতালি, সুইডেন, সাইপ্রাস, রোমানিয়াসহ বিভিন্ন দেশে যেতে আগ্রহী যুবকদের স্বপ্ন পূরণ হয়নি আড়াই বছরেও। বিদেশে যেতে আগ্রহী যুবকদের স্বপ্ন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছেন আব্দুল লতিফ নবীন নামের এক দালাল। প্রতারণা করে হাতিয়েছেন ৫ কোটি টাকারও বেশি। প্রতারণায় অভিযুক্ত আব্দুল লতিফ নবীন চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার শংকরবাটি তেনু মণ্ডলপাড়ার শওকাত আলীর ছেলে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কাছে ধরনা দিয়েও টাকা পাচ্ছেন না ভুক্তভোগীরা। অভিযোগ উঠেছে, আগে আওয়ামী লীগ নেতাদের ছত্রছায়ায় থেকে এমন প্রতারণা শুরু করেন নবীন। এখন বিএনপিপন্থিদের প্রশ্রয় পাচ্ছেন। জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের ধাপাপাড়া গ্রামের ইউসুফ আলী ও আব্দুল লতিফ নবীন যৌথ মালিকানায় প্রতিষ্ঠান গড়ে বিদেশে লোক পাঠানোর নামে প্রতারণা শুরু করেন। শহরের শান্তি মোড়ে আলিশান অফিস করেন তারা। পরে নবীন সেখান থেকে বেরিয়ে গিয়ে রাজারামপুরে পাসপোর্ট অফিসের সামনে নতুন অফিস করেন। বছরের পর বছর পৃষ্ঠা ৮ কলাম ৪
এমন প্রতারণা করেও ধরাছোঁয়ার বাইরে অভিযুক্ত নবীন-ইউসুফ সিন্ডিকেট। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের মহাডাঙার সুমন আলী দেড় বছর আগে ইতালি যাওয়ার জন্য দুই লাখ টাকা দেন ইউসুফ আলীকে। ইউসুফ সেই পাসপোর্ট দেন নবীনকে। তবে দেড় বছরেও তিনি ভিসা দিতে পারেননি। শুধু সুমন নয়, শহরের মণ্ডলপাড়ার শাহরিয়ার আড়াই বছর আগে রোমানিয়া যাওয়ার জন্য ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা দেন। ভবানীপুরের নাহিদ, আমিনুলসহ প্রায় তিন শতাধিক যুবকের পাসপোর্ট আর টাকা নেন ইউসুফ। পরে তার হাতবদল হয়ে চলে যায় নবীনের কাছে। এ নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয় নবীন-ইউসুফের মধ্যে। বিষয়টি নিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র মোখলেসুর রহমানের নেতৃত্বে সমাধানের জন্য বসা হয়। ওইদিন উভয়পক্ষের মধ্যে সমাধানের জন্য একটি চুক্তি করা হয়। ইউসুফকে নবীন তার নিজ নামীয় ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ২ কোটি ৪০ লাখ টাকার তিনটি চেক দেন।
ব্যাংক চেক ও এগ্রিমেন্টের কপি মানবজমিন-এর হাতে এসেছে। এগ্রিমেন্টে নবীন স্বীকার করেছেন, রোমানিয়া ও সুইডেন পাঠানোর উদ্দেশ্যে বিভিন্ন সময় ২৫০টি পাসপোর্ট ও নগদ দুই কোটি চল্লিশ লাখ টাকা নিয়েছেন। চুক্তি মোতাবেক নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিদেশ পাঠাতে ব্যর্থ হওয়ায় তাদের মধ্যে একটি বিরোধ সৃষ্টি হয়। নবীন বলেন, ৩রা অক্টেবরের মধ্যে রোমানিয়া ও সুইডেনের ভিসা দিতে না পারলে সব টাকা ও পাসপোর্ট তিনি ফেরত দেবেন।
তবে নির্ধারিত সময়ে টাকা দিতে না পারায় বৃহস্পতিবার দুপুরে ইউসুফ আলীর বাড়িতে গিয়ে হট্টগোল করে ভূক্তভোগীরা। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
শাহরিয়ার নামে এক ভুক্তভোগী জানান, রোমানিয়া যাওয়ার জন্য আড়াই বছর আগে ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা ও পাসপোর্ট দিয়েছেন তিনি। এই পাসপোর্ট ও টাকা তিনি নবীন নামে আরেক দালালকে দিয়েছেন। ভিসা দেয়ার জন্য ৩০ বার সময় নিয়েও বিদেশ পাঠাতে পারেনি। টাকাও ফেরত দেয়নি। বিষয়টি নিয়ে পৌরসভায় বসা হয়েছিল। নবীন দালাল ৩রা অক্টোবর পর্যন্ত সময় নিয়েছিলেন। ভিসা দিতে না পারলে টাকা ফেরত দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে ভিসা দিতে পারেননি টাকাও ফেরত দেননি। এজন্য আমরা প্রায় ২শ’ জন ইউসুফের বাড়িতে গিয়েছিলাম। তবে থানা পুলিশ দায়িত্ব নিয়ে সোমবার টাকা ও পাসপোর্ট ফেরত দেবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন।
মুশফিক নামে আরেক যুবক বলেন, দেড় বছর আগে আমার ভাইকে বিদেশে পাঠানোর জন্য ইউসুফকে ১ লাখ টাকা দেই। সে সময় বলেছিল, দুই থেকে আড়াই মাসের মধ্যে বিদেশ যেতে পারবে। কিন্তু দেড় বছরেও ভাইকে বিদেশ নিতে পারেনি। এখন টাকা না দেয়ার জন্য ইউসুফ বাড়ি থেকে পালিয়েছেন।
এ বিষয়ে ইউসুফ আলী বলেন, আমি নবীনকে পাসপোর্ট আর টাকা দিয়ে বিপদে পড়ে গেছি। গত ৩রা অক্টোবর আমাকে ২৫০টি পাসপোর্ট আর ২ কোটি ৪০ টাকা দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু পাসপোর্ট আর টাকা দেয়নি। মানুষ আমার বাড়িতে এসে হট্টগোল করছে।
অভিযুক্ত নবীনের বক্তব্য জানতে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি এসএম জাকারিয়া বলেন, বিদেশে পাঠানোর কথা বলে অনেক মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন ইউসুফ। ভুক্তভোগীদের ভাষ্য মতে, কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। টাকা ফেরত পেতে ভুক্তভোগীরা তার বাড়িতে গিয়ে হট্টগোল করে। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। বিষয়টি নিয়ে সমাধানের প্রক্রিয়া চলছে।