ঢাকা, ৭ জুলাই ২০২৫, সোমবার, ২৩ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১০ মহরম ১৪৪৭ হিঃ

বাংলারজমিন

ঘাটাইলে ১২১৩ জন মুক্তিযোদ্ধার মধ্যে ৮ শতাধিকই ভুয়া, ভাতা তুলছেন সবাই

ঘাটাইল (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি
৫ অক্টোবর ২০২৪, শনিবার

টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলায় প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ছিল ৪০০ জনের কিছু ও বেশি। কিন্তু বর্তমানে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২১৩ জনে। তারা ভাতাসহ সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করছেন। অতিরিক্ত এই ৮ শতাধিক অমুক্তিযোদ্ধারা নানা অপকৌশলে মুক্তিযোদ্ধার তালিকাভুক্ত হয়েছেন বলে দাবি প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের। এইসব অমুক্তিযোদ্ধাদের সনদ বাতিল ও ভাতা বন্ধের দাবিতে বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহাদাত হোসেন অভিযোগ দায়ের করায় যাচাই-বাছাই হলেও কিছু অসাধু মুক্তিযোদ্ধার সাফাই সাক্ষীর ফলে তারা বহাল তবিয়তে থেকে যান। ফলে এসব অমুক্তিযোদ্বারা বীরদর্পে ভাতা উত্তোলনসহ সকল প্রকার সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে আসছেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহাদাৎ হোসেন বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আমরা ১৯৭২ সালে ৪০০ জনের কিছু বেশি মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে সম্মেলন করেছি। কিন্তু দুঃখের বিষয় সে তালিকা এখন উধাও হয়ে গেছে। উপজেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার তোফাজ্জল হোসেন বলেন, উপজেলায় স্বেচ্ছাসেবকসহ ৪৬৫ জন মুক্তিযোদ্ধা ছিল এখন ভাতা তুলছেন ১২১৩ জন। এটা রাষ্ট্রদ্রোহিতার সামিল।
প্রায় ৮ শতাধিক অমুক্তিযোদ্ধার বিষয়ে খোঁজখবর নিতে অনুসন্ধানে নামে মানবজমিন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য রাষ্ট্রীয় সকল সুযোগ-সুবিধাসহ জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান হিসাবে তাদের সন্তান নাতি-পুতিদের জন্য রাষ্ট্রীয় দাঁড় উন্মুক্ত থাকায় উপজেলার কিছু সুবিধাবাদী লোক মুক্তিযোদ্ধার তালিকাভুক্ত হতে হুমড়ি খেয়ে পড়ে এবং তারা জেলা ও উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা সংসদের দায়িত্বরত কর্মকর্তা ও তাদের সহযোগীসহ একটি চক্রের সঙ্গে মোটা অংকের টাকা লেনদেন করে পর্যায়ক্রমে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হন। উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল বাছেদ করিম জানায়, আমি একজন প্রকৃত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭৩ সালের অক্টোবর মাস থেকে  রাষ্ট্রীয় ভাতাসহ সকল সুবিধা ও জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান হিসাবে সম্মান পেয়ে আসছিলাম। কিন্তু পরিতাপের বিষয় ২০১৯ সালের নভেম্বর মাস থেকে আমার সেই ভাতা বন্ধ করে দেয়াসহ সকল কিছু কেড়ে নেয় নিশিরাতের অবৈধ সরকারের কিছু স্বার্থান্বেষী মহল। আমাদের মতো অনেক প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের বাদ দিয়ে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের স্থান করে দিয়েছে সরকারের কিছু দালাল, আমলা ও আওয়ামী এজেন্টরা।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ মজিবর রহমান জানায়, বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাহিরে মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দিতে লজ্জা বোধ করি। এখন ১২ শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পায়। এরা কারা। কোথা থেকে এলো। এদের বিচার হওয়া জরুরি। আমি বর্তমান সরকারের কাছে বিনীত অনুরোধ করবো যাদের ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে সরকারি কোষাগার থেকে মাসের পর মাস ভাতা দিয়ে যাচ্ছে তাদেরকে আইনের আওতায় এনে তাদের কাছ থেকে সমুদয় টাকা সরকারি কোষাগারে ফেরত নিয়ে রাষ্ট্রের সঙ্গে এমন প্রতারণার জন্য তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা করে কঠিন বিচারের আওতায় এনে বিচার করা জরুরি।

 নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক মুক্তিযোদ্ধা জানান, বিএনপি, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে ঘুরে ফিরে প্রত্যেকেই যার যার সুবিধা মতো অমুক্তিযোদ্ধাদের প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার তালিকাভুক্ত করেছেন। তবে এসব অমুক্তিযোদ্ধা মুক্তিযোদ্ধার তালিকাভুক্ত করার সবচাইতে বেশি অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে ২০১৭ সালের আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ের মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির বিরুদ্ধে। ওই সময় জেলা ও উপজেলার কতিপয় কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা সঠিক তালিকা প্রণয়নের কথা বলে আবেদনকৃত প্রায় ৮ শতাধিক অমুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা থেকে বাদ দেয়ার ভয় দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে অনৈতিক লেনদেন করে বাছাই কমিটির সদস্যরা একেকজন সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন। ফলে ওই বাছাই কমিটির সদস্য সচিব তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবুল কাশেম মুহাম্মদ শাহীন বাছাই কমিটিতে স্বাক্ষর না করে অনিয়মের বিষয়টি লিখিত আকারে কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেন। পরে ওই বাছাই কমিটির কাছে ২৩ জন চিহ্নিত রাজাকার, ৫২ জন অযুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এবং ২১ জন অশহীদ মুক্তিযোদ্ধা চিহ্নিত হলেও ওই সময়ে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের দায়িত্বপ্রাপ্তরা তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো তাদের অনেকের বন্ধ ভাতা চালু করার সুপারিশ করে উত্তোলনের ব্যবস্থা করে দেয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব অনিয়মের বিষয়ে ঘাটাইল উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার তোফাজ্জল হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়ে বলেন, নিজেদের সম্মান রক্ষার্থে এই সময়ে আমি কোনো বক্তব্য দিবো না। এ বিষয়ে ঘাটাইল উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের দায়িত্বপ্রাপ্ত সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইরতিজা হাসান বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই-বাছাই বিষয়টি পরিচালিত হয় জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের মাধ্যমে। ঘাটাইলে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে এসব অভিযোগ লিখিত আকারে পেলে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে পাঠানো হবে। কর্তৃপক্ষের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

পাঠকের মতামত

আমার জানামতে আমার এক নিকট আত্মিয় মুক্তিযোদ্ধা হওয়া সত্বেও ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা পায়নি শুধু ঘুষ বানিজ্য ও নানা অনিয়মের কারনে।

মো: আলম খান
৫ অক্টোবর ২০২৪, শনিবার, ১০:৫২ পূর্বাহ্ন

আমার বা‌ড়ি ঘাটাইল থানা। শুধু ঘাটাইল নয় ভূয়াপুর থানায় আ‌রো বে‌শি ভূয়া মু‌ক্তি‌যোদ্ধা। আমার নানা বীর প্রতীক। আমার চাচা বীর মু‌ক্তি‌যোদ্ধা মৃত‌্যর আ‌গে আমা‌কে ব‌লে‌ছে তাদের ভূয়া মু‌ক্তি‌যোদ্ধা‌দের মু‌ক্তি‌যোদ্ধা তৈ‌রি‌তে স্বাক্ষ‌্য দি‌তে বাধ‌্য করা হ‌য়ে‌ছে। স্বাক্ষ দি‌লে বৈধ সকল সু‌বিধা বন্ধ হ‌য়ে যাবে ও নানা ভা‌বে হয়রা‌নি করা হ‌বে। সরকারী দল যেহেতু চা‌চ্ছে তাই স্বাক্ষ দি‌তে বাধ‌্য। চাচা ব‌লে‌ছেন ভূয়া মু‌ক্তি‌যোদ্ধারা ত‌দের নানা হয়রা‌নি ও অসম্মান ক‌রে‌ছে। আ‌মি চাই দ্রুত এ‌দের বিরু‌দ্ধে ব‌্যবস্থা নেয়া হোক এখন কিছু বীর মু‌ক্তি‌যোদ্ধা জী‌বিত আ‌ছে। না হয় ভ‌বিষ‌্যতে শুধু ভূয়া মু‌ক্তি‌যোদ্ধাই জী‌বিত থাক‌বে।

খা‌লিদ
৫ অক্টোবর ২০২৪, শনিবার, ৯:৩৭ পূর্বাহ্ন

খুবই লজ্জাজনক ও বেদনাদায়ক।

Moni
৫ অক্টোবর ২০২৪, শনিবার, ৮:৫৮ পূর্বাহ্ন

আপাতত সবার ভাতা বন্ধ করা হোক। যাচাই বাচাইয়া পর প্রকৃতদের arrear দেয়া যাবে। ভুয়াদের পেটে জাতির একটি পয়সা ও যেন না যায় বরং ফেরতের ব্যবস্থা করুন।

A R Sarker
৫ অক্টোবর ২০২৪, শনিবার, ৭:৪৯ পূর্বাহ্ন

এসব ভাতা দেয়া এখন বন্দ করা উচিৎ অনেক তো খাইছেন!


৫ অক্টোবর ২০২৪, শনিবার, ৭:৩০ পূর্বাহ্ন

ভূয়া গুলারে বাদ দেন - তখন এরা কইয়া বেড়াইবো এইরকম স্বাধীনতা কী আমরা চেয়েছিলাম.........

Towhidul HASSAN
৫ অক্টোবর ২০২৪, শনিবার, ৭:২৩ পূর্বাহ্ন

বাংলারজমিন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

বাংলারজমিন সর্বাধিক পঠিত

দেনমোহর কমাতে অভিনব কৌশল/ তালাকের পর আবার বিয়ে, কিছুই জানে না গৃহবধূ

১০

মুরাদনগরে একই পরিবারের তিনজনকে পিটিয়ে হত্যা/ মোবাইল চোরকে সহযোগিতা করাই কাল হলো

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status