খেলা
জোড়া গোলে ৪৬তম শিরোপা উদ্যাপন মেসির
স্পোর্টস ডেস্ক
৪ অক্টোবর ২০২৪, শুক্রবার
ম্যাচে ছিল হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। তবে ইন্টার মায়ামির হাতে ছিল যে মেসি নামের জাদুকরী অস্ত্র। তাই শেষ হাসিটা হাসলো ইন্টার মায়ামিই। মাত্র পাঁচ মিনিটের মধ্যে দুই গোল করলেন লিওনেল মেসি। আর শেষ দিকে পেনাল্টি রুখে দিয়ে ইন্টার মায়ামির শিরোপা নিশ্চিত করলেন গোলকিপার ড্রেক ক্যালেন্ডার। উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে কলম্বাস ক্রুকে হারিয়ে এবারের সাপোর্টার্স শিল্ড জিতে নিলো ইন্টার মায়ামি। বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার সকালে এই ম্যাচে মায়ামি জেতে ৩-২ ব্যবধানে। এতে অর্জনে সমৃদ্ধ ক্যারিয়ারে মেসি পেলেন আরেকটি ট্রফির স্বাদ। ইউরোপের ক্লাব ফুটবল মাতানোর পাশাপাশি বিশ্বকাপ ও কোপা আমেরিকা রাঙানো মেসির ঝলমলে ক্যারিয়ারের ৪৬তম শিরোপা এটি। প্রথমার্ধের শেষ দিকে দুটি গোল করে মায়ামির জয়ের নায়ক মেসিই। মায়ামির আরেক তারকা লুইস সুয়ারেজ করেন দলের অন্য গোলটি। গোলবারে মায়ামির বরাবরের ভরসা ক্যালেন্ডার আরও একবার বড় অবদান রাখেন দলের জয়ে। ৪৫তম মিনিটে মাঝমাঠের কাছকাছি নিজদের অর্ধ থেকেই বিশাল লম্বা করে উঁচু বল বাড়িয়ে দেন জর্দি আলবা। কলম্বাস ক্রুর বক্সের কাছাকাছি সেটা বুক দিয়ে নামান মেসি। প্রতিপক্ষে দুই ডিফেন্ডারের মধ্য দিয়ে বল পায়ে এগিয়ে যান তিনি বক্সের ভেতর। এরপর আগুয়ান গোলকিপারের পাশ দিয়ে আলতো টোকায় বল পাঠিয়ে দেন জালে। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ের পঞ্চম মিনিটে কলম্বাসের বক্সের একটু বাইরে ফ্রি কিক পায় মায়ামি। সামনের মানব দেয়ালে পাশ দিয়ে নিখুঁত বাঁকানো শটে বল জালে পাঠিয়ে দেন মেসি। গোলকিপারের তাকিয়ে দেখা ছাড়া করার বেশি কিছু ছিল না। ধারাভাষ্যকারের চিৎকার, ‘চোখের পলকে ম্যাচের চিত্র পাল্টে দিলেন মেসি।’ যদিও ম্যাচের উত্তেজনা সেখানেই শেষ হয়নি। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই একটি গোল শোধ করে কলম্বাস। তবে এর মিনিট দুয়েক পরই গোলকিপারের ভুলে আবার গোল হজম করে তারা। উঁচু হয়ে আসা আপাত সহজ একটি বল ধরতে গিয়ে হাত থেকে ফসকে যায় কলম্বাস গোলকিপারের। কাছেই থাকা সুয়ারেজ হেডে বল পাঠান জালে। কলম্বাস লড়াই চালিয়ে যায় তবু। ৬১ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল করে ব্যবধান আবার কমায় তারা। তবে ৬৩তম মিনিটে ডিফেন্ডার রুডি কামাচো লাল কার্ড পেয়ে মাঠ ছাড়ায় বড় ধাক্কা খেতে হয় তাদের। তারপরও উজ্জীবিত পারফরম্যান্সে ম্যাচে ফেরার সুযোগ তারা পেয়েছিল। ৮৪তম মিনিটে পেনাল্টি পায় তারা। কিন্তু মায়ামি গোলকিপার ক্যালেন্ডার ডানদিকে ঝাঁপিয়ে ফিরিয়ে দেন শট। এরপর আর নাটকীয় কিছু হয়নি ম্যাচে। ৯০ মিনিট শেষে ১০ মিনিট যোগ করা সময়েও আর গোল হয়নি। ৩২ ম্যাচে ৬৮ পয়েন্ট নিয়ে সাপোর্টার্স শিল্ড নিশ্চিত করে মায়ামি। ২০২০ সালে মেজর লীগ সকারে (এমএলএস) যাত্রা শুরুর পর এই টুর্নামেন্টে তাদের প্রথম ট্রফি এটি, সব মিলিয়ে দ্বিতীয়। মেজর লীগ সকারে দুটি মূল ট্রফির একটি এই সাপোর্টার্স শিল্ড। আরেকটি হলো এমএলএস কাপ। নিয়মিত মৌসুমে ৩৪ ম্যাচজুড়ে সামগ্রিক পারফরম্যান্সে সবচেয়ে ধারাবাহিক দল পায় এই সাপোর্টার্স শিল্ড। এখন পর্যন্ত ১৬টি ভিন্ন দল এই ট্রফি জিতেছে।
ম্যাচ শেষে অ্যাপল টিভিকে মেসি বলেন, সাপোর্টার্স শিল্ড জয়ের পর এবার এমএলএস কাপ জয়ে চোখ রাখছেন তারা। মেসি বলেন, ‘আমি খুশি। যা করেছি আমরা, তা নিয়ে খুশি। মৌসুমের শুরুতে আমরা জানতাম যে, এই শিরোপার জন্য লড়াই করতে পারে এই দল। শুরু থেকেই আমরা নিয়ন্ত্রণ নিয়েছি, লক্ষ্য পূরণের মতো ফুটবলার আমাদের আছে। প্রথম লক্ষ্য পূরণ হলো, আমি খুশি। এখন আমরা তাকাচ্ছি পরেরটিতে।’ মেসির সঙ্গে জর্ডি আলবা, সার্জিও বুসকেটস, লুইস সুয়ারেজের মতো তারকারা যোগ দেওয়ার পর ইন্টার মায়ামির চিত্র বদলে গেছে। গত মৌসুমে প্রথমবার চালু হওয়া লীগস কাপ জিতে নেয় তারা। এবার জিতলো সাপোর্টার্স শিল্ড। মেজর লীগ সকারে ৩২ ম্যাচে মায়ামির সংগ্রহ ৬৮ পয়েন্ট। বাকি দুটি ম্যাচ জিতলে নিয়মিত মৌসুমে সবচেয়ে বেশি পয়েন্টের রেকর্ড গড়বে দলটি। ২০২১ সালে ৭৩ পয়েন্ট নিয়ে রেকর্ড গড়ে নিউ ইংল্যান্ড।
মেসি বললেন, এত তারকা যোগ দেওয়ার পর গোটা দলের মানসিকতা ও খেলার ধরনে পরিবর্তন আনাটা জরুরি ছিল। মায়ামি অধিনায়ক বলেন, ‘আমার মনে হয় কোচ জেরার্ডো মার্টিনোর সঙ্গে আমরা (মেসি, আলবা, সুয়ারেজ, বুসকেটস) যোগ হওয়ার পর আমাদের পরিকল্পনা ছিল মাঠে দাপট দেখানো এবং বল তাড়া করা, নিজেদের পায়ে বল রাখা। গুরুত্বপূর্ণ ফুটবলাররা যোগ হওয়ার পর খেলার ধরন ও মানসিকতার দিক থেকে দলটাকে গড়ে তোলার পরকিল্পনার ছিল। আমরা প্রতিটি ম্যাচেই এখন লড়াই করি।’ লীগস কাপ জয়ের পর সাপোর্টার্স শিল্ড জিতে উচ্ছ্বসিত কোচ টাটা মার্টিনোও। তিনি বলেন, ‘এক বছর হলো এই ক্লাবে এসেছি, খুবই ভালো লাগছে যে, তাকে (মেসি) নিয়ে দুটি ট্রফি জেতা হয়ে গেল।’ সাপোর্টার্স শিল্ড জেতায় এমএলএস কাপ প্লেঅফের পুরোটায় নিজেদের মাঠে খেলার সুযোগ পেল ইন্টার মায়ামি। মেজর লীগ সকারের ইস্টার্ন ও ওয়েস্টার্ন কনফারেন্সের ৯টি করে দল নিয়ে এমএলএস কাপ প্লেঅফ হয়ে থাকে। মেজর লীগ সকারের চ্যাম্পিয়নশিপ খেলা হলো এমএলএস কাপ।