শরীর ও মন
সঠিক কেশচর্চা
অধ্যাপক ডা. এস এম বখতিয়ার কামাল
৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, সোমবারগরমের দিনে ত্বক চর্চার পাশাপাশি চুল চর্চারও দরকার। প্রতিদিন কিছু নিয়ম মেনে কেশ চর্চা করলে অনেকটাই চুলের রুক্ষতা দূর করা যায়।
প্রতিদিনের যত্ন
*রোজ শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে নিন। এতে চুলের গোড়ায় ঘাম, ধুলো জমতে পারবে না। দুর্গন্ধও হবে না। রোজ শ্যাম্পু করায় চুল খসখসে হয়ে পড়লে একদিন অন্তর শ্যাম্পু করুন।
*শ্যাম্পুর দু’ঘণ্টা আগে তেল মাখুন। এসেনসিয়াল অয়েল চুলকে হেলদি রাখে। তাই স্বাভাবিক চুলে মাখুন ক্ল্যারি সেজ, সেডারউড, জেরানিয়ম, ল্যাভেন্ডার, সেমন, রোজমেরি অয়েল। শুষ্ক চুলে মাখতে পারেন জেরানিয়ম, ল্যাভেন্ডার, রোজমেরি, স্যান্ডালউড অয়েল। তেলতেলে চুলের জন্য সাইপ্রেস, ল্যাভেন্ডার, লেমন, পিপারমিন্ট, রোজমেরি অয়েল।
*শ্যাম্পুর পরের স্টেপ কন্ডিশনার ব্যবহার। পাতলা চুলে মাঝখান থেকে ডগা অবধি কন্ডিশনার মাখুন। মিনিটখানেক রেখে ধুয়ে নিন। মাঝারি বা ঘন চুলে ময়েশ্চারাইজ সমৃদ্ধ কন্ডিশনার মাখুন। ২-৩ মিনিট রেখে তারপর ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে একদিন ডিপ কন্ডিশনিং করুন।
*চুলে ব্রাশ করলে স্ক্যাল্প মাসাজ হয়। এতে চুলের গোড়ায় পর্যাপ্ত রক্ত সঞ্চালন ও অক্সিজেন সরবরাহ হয়। নতুন চুল গজায়। আবার বেশি ব্রাশ করলে ডগা ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বিশেষ করে ভিজে চুলে ব্রাশ করলে এই সমস্যা বাড়ে। সুতরাং চুলে বেশি ব্রাশ ব্যবহার না করাই মঙ্গল। করলেও ভিজে চুলে ব্রাশ করবেন না। সব সময় মোটা দাঁড়ার চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়াবেন।
*এই সময়ে ড্রায়ার নাই বা ব্যবহার করলেন। তাড়াতাড়ি চুল শুকোতে ভিজে চুলে কটন টি-শার্ট জড়িয়ে রাখুন খানিক্ষণ। তারপর পাখার নিচে থেকে চুল শুকয়ে নিন।
*নিয়মিত চুল ট্রিম করুন। চুলের ডগা ভেঙে যাওয়ার সমস্যা থেকে রেহাই মিলবে। রূপ বিশেষজ্ঞদের মতে, ৬ থেকে ৮ সপ্তাহ অন্তর ট্রিম করা উচিত।
*যারা চুল ডাই বা কালার করেন তারা মাসে একবার করুন। যখনই চুল ধোবেন তখনই কালার গার্ড ও ডিপ ময়েশ্চারাইজার সমৃদ্ধ শ্যাম্পু ব্যবহার করবেন।
*নিজেকে ফ্যাশনেবল দেখাতে ঘন ঘন চুলের স্টাইল বদলাবেন না। এতেও চুলের ক্ষতি হয়। পার্মিও, স্ট্রেটনিং, কার্লিং, ব্লিচিং থেকে দূরে থাকুন। বেশি টেনে রাবার ব্যান্ড দিয়ে বাঁধলেও গোড়া আলগা হয়ে চুল বেশি ওঠে।
*ডায়েটে যেন যথেষ্ট পরিমাণে ভিটামিন থাকে। চুলকে মজবুত বানাতে ভিটামিন সি, অক্সিজেনের জন্য আয়রন, নতুন কোষ তৈরির জন্য জিঙ্ক ও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুলের জন্য ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডযুক্ত খাবার রোজ খেতে হবে।
*জীবন থেকে ‘স্ট্রেস’ নামক রেনাগটিকে দূরে রাখুন। অতিরিক্ত স্ট্রেস চুল পড়ার কারণ। এর জন্য নিয়মিত যোগা, বাইকিং, মেডিটেশন’র মতো এক্সসারসাইজ করুন।
গরমের যত্ন
*ইউ ভি রশ্মি থেকে বাঁচতে স্কার্ফ, টুপি, ছাতা ব্যবহার করুন।
*তেল, শ্যাম্পু, কন্ডিশনার, কালার যা-ই ব্যবহার করুন তা যেন এসপিএফ সমৃদ্ধ হয়।
*প্রচুর পরিমাণে জল, ফ্রুট, ভেজ স্যুপ খান। এতে চুলের হারানো আর্দ্রতা ফিরে আসবে।
*গরমে চুল এমনিতেই শুকনো দেখায়। তাই বেশি হেয়ার কসমেটিকস না ব্যবহার করাই ভালো। বিশেষ করে সেগুলো যদি অ্যালকোহলযুক্ত হয়।
*সুইমিং পুলে নামার আগে শ্যাম্পু করবেন না। চুলের স্বাভাবিক তেল জলের ক্লোরিন থেকে চুলকে বাঁচায়। সাঁতার শেষে শাওয়ার নেয়ার সময় ভালো করে শ্যাম্পু করে নেবেন। তাহলেই চুলে জমে থাকা ক্লোরিন ধুয়ে যাবে।
*চুলের গোড়ায় ঘাম জমবে না যদি উঁচু করে পনিটেল, নটস বা বানস করেন। একই সঙ্গে রোদ, গরম হাওয়ায় চুল ফ্রিজ হয়ে যাওয়াও এড়ানো যাবে। ভালো থাকুন আপনি আর সঙ্গে ভালো থাকুক আপনার চুল।
লেখক: চর্ম, যৌন ও অ্যালার্জি রোগ বিশেষজ্ঞ (সাবেক) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
কামাল হেয়ার অ্যান্ড স্কিন সেন্টার, ফার্মগেট, ঢাকা। প্রয়োজনে: ০১৭১১-৪৪০৫৫৮