ঢাকা, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, রবিবার, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ রবিউস সানি ১৪৪৬ হিঃ

দেশ বিদেশ

পাবনায় যেভাবে ত্রাসের রাজত্ব গড়েছিলেন পিতা-পুত্র

রাজিউর রহমান রুমী, পাবনা/সাইদুর রহমান বকুল, বেড়া থেকে
২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, শুক্রবারmzamin

শামসুল হক টুকু। বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলা নিয়ে পাবনা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য। ছিলেন জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার, সাবেক স্বরাষ্ট্র ও বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী। আওয়ামী লীগ সরকারের টানা তিন আমলে  এলাকায় কায়েম করেছিলেন ত্রাসের রাজত্ব। গড়েছেন অবৈধ সম্পদের পাহাড়। কামিয়েছেন হাজার হাজার  কোটি টাকা। তার এসব অপকর্মের সহযোগী ছিলেন পুত্র আসিফ সামস রঞ্জন।  পিতার রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে হয়েছেন বেড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বেড়া পৌরসভার  মেয়র। পিতা-পুত্র   বেড়া ও সাঁথিয়ার মানুষের কাছে ছিলেন মূর্তিমান আতঙ্ক।  
এলাকাবাসী জানান, জাতীয় নির্বাচনে টুকুর বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, দোকান দখল ও বাড়ি-ভাঙচুরসহ পুলিশ দিয়ে নানা হয়রানি করা হয়। নির্বাচন এলেই তার আশীর্বাদপুষ্ট নেতারাই নির্বাচিত হতেন। সম্প্রতি উপজেলা নির্বাচনে বেড়া উপজেলায় তার আশীর্বাদপুষ্ট প্রার্থীর নিকট থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে তাকে বানিয়েছিলেন চেয়ারম্যান। 
পুত্র রঞ্জন  সাঁথিয়া সদরের সরকারি মৎস্য খামার দখল করে বানিয়ে ছিলেন গরুর খামার। এই মৎস্য খামার থেকে মাছের পোনা উৎপাদন করে মৎস্য চাষিদের মধ্যে বণ্টন করে মাছের উৎপাদন বাড়ানোর সরকারি প্রকল্প লাটে ওঠে। তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ ছিল এলাকার কৃষক। চতুরহাটে কৃষকরা কৃষিপণ্য বিক্রি করতে আসে, তাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টোল আদায় করা হতো। এই হাটে প্রতি মণ ফসলে তিন কেজি হারে বেশি অর্থাৎ ৪৩ কেজি পণ্য নেয়া হতো। এই জুলুমের প্রতিবাদে হাটে আসা কৃষক দুই দফা প্রতিবাদ মিছিল করে। কিন্তু তাতে কোনো প্রতিকার ছিল না। এই চতুর হাটের ইজারায় টেন্ডারে কাউকে অংশ নিতে দেয়া হতো না। নিজেরাই কয়েকটি সিডিউল কিনে ’নেগোসিয়েশন’ করে নামমাত্র মূল্যে হাট ইজারা নেয় রঞ্জনের নিজস্ব লোকের নামে। এতে প্রতি বছর সরকার কোটি টাকারও বেশি রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়। বেড়ার বৃশালিখায় অবৈধভাবে ঘাট দখলে রেখে মালামাল লোড-আনলোড করে হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রঞ্জনের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি, সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করে বিআইডব্লিউটিএর নিয়ন্ত্রণে নেয় ঘাটটি। ইজারা চূড়ান্ত হওয়ার পরেও গায়ের জোরে তিনি কাউকে ভিড়তে দিতেন না। এতে সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাতো।
টুকুর বাড়ির সামনে ইছামতী নদী দখল করে বালি দিয়ে ভরাট করে সুইমিংপুল বানানোর কাজ চলমান ছিল। তিনি দখল নিয়েছিলেন বেড়া বৃশালিখা  কোল ঘাট (নৌ-বন্দর)।   বেড়ার হুড়াসাগর নদী ও তার আশপাশের প্রায় এক’শ একর জমি দখল করে বানান টুকুর প্রয়াত স্ত্রীর নামে লুৎফর  নেসা ট্রাস্ট। নদী থেকে কোটি  কোটি টাকার বালু উত্তোলন করে বিক্রি করেছেন। এখনও হুড়াসাগর নদীর পাশে প্রায় দুই একর জায়গা দখল করে বালু উত্তোলন করে স্তূপ করে  রেখেছেন টুকু ও তার পরিবার।
বেড়া পৌরসভার পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া হুরাসাগর নদীতে যত বালু ও মাটি কাটা হয় তার সবই বিক্রি করে রঞ্জন। বাঘাবাড়ি বন্দর চালু রাখার জন্য প্রতি বছরই নদী খনন করতে হয়। এই খননের সময় যে বালু উত্তোলন করা হয় তা নদীতীরে সংরক্ষণ করে রাখা হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ড সেই স্তূপকৃত বালু টেন্ডারে বিক্রি করে। বেড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার সবুর আলী গত বছর ৪ কোটি ৭০ লাখ ঘনফুট বালু পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে টেন্ডারে বিক্রি করার প্রক্রিয়া করলে রঞ্জন তাকে বাধা দেয়। পরে ইউএনওকে অন্যত্র বদলি করা হয়। বেড়ার বিপ্লব নামের এক ব্যক্তি মেয়রের পক্ষে বালু বিক্রি করে। ট্রাকপ্রতি মেয়রকে দিতে হয় ২’শ টাকা। প্রতি বছর প্রায় ৫০ হাজার ট্রাক বালু ও মাটি এখান থেকে বিক্রি হয়। বড় পায়না মৌজার ৩৯ বিঘা খাস জমি ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমি (হুরাসাগর নদীতীর বরাবর) বেদখলে রেখেছে রঞ্জন। উঁচু দেয়াল দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে এই জমি।
বেড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডে একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল তাদের। আশনা ইন্টারপ্রাইজ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক রঞ্জন। ভাঙনকবলিত নদীতে বালুর বস্তা ও বোল্ডার ফেলা নিয়ে কারচুপির অভিযোগ আছে ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে। পানি উন্নয়ন বোর্ডেরও কাজের মান নিয়ে ব্যাপক অভিযোগ আছে। এই কারণে একযোগে ১৯ জন কর্মচারী অন্যত্র বদলির আবেদন করেছেন। আর এসব ঠিকাদারি কাজের প্রায় সবগুলোই রঞ্জনের নিয়ন্ত্রণে।

 

দেশ বিদেশ থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

দেশ বিদেশ সর্বাধিক পঠিত

মৌলভীবাজারে জাতীয় পার্টির সম্মেলন সম্পন্ন / ‘আমরা আওয়ামী লীগে নেই, বিএনপিতেও নেই

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status