ঢাকা, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, রবিবার, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ রবিউস সানি ১৪৪৬ হিঃ

দেশ বিদেশ

ঢাবিতে গণপিটুনিতে মৃত্যু

মা-বাবা-ভাইয়ের মৃত্যুতে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন তোফাজ্জল

বরগুনা প্রতিনিধি
২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, শুক্রবারmzamin

দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে চোর সন্দেহে তোফাজ্জল (৩২) নামে এক যুবককে আটক করে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। বাবা-মার মৃত্যুতে তিনি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে বেশ কয়েক বছর ধরেই ভবঘুরের মতো বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়াতেন। তার মৃত্যুর খবরে গ্রামের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম।

তোফাজ্জল বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার কাঁঠালতলী ইউনিয়নের তালুকের চরদুয়ানী গ্রামের মৃত আবদুর রহমানের ছেলে এবং কাঁঠালতলী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। ২০১১ সালে তোফাজ্জলের বাবা আবদুর রহমান, ২০১৩ সালে মা বিউটি বেগম এবং ২০২৩ সালে একমাত্র বড় ভাই পুলিশের এএসআই নাসির উদ্দিন মারা যান। প্রেম সংক্রান্ত বিষয়ে আরও আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছিলেন তোফাজ্জল। পরিবার ও অভিভাবকহীন হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতেন তিনি। মানসিক ভারসাম্য হারানোর আগে তিনি বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার কাঁঠালতলী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। তার এমন মৃত্যুর খবর শুনে উপজেলায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তোফাজ্জল বরিশাল বিএম কলেজ থেকে বাংলা বিষয়ে অনার্স মাস্টার্স শেষ করে বঙ্গবন্ধু ’ল কলেজে অধ্যায়ণরত ছিলেন। এ অবস্থায়ই মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন।

বুধবার রাত ৮টার দিকে চোর সন্দেহে তোফাজ্জলকে আটক করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফজলুল হক হলের শিক্ষার্থীরা। আনুমানিক রাত ১২টার দিকে তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে রাত ২টার দিকে তার মৃত্যুর খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তোফাজ্জলের চাচা ফজলুর রহমান জানান, তোফাজ্জলের বাবা আবদুর রহমান প্রায় ১০ বছর আগে মারা যায়, এর তিন বছর পরে মারা যায় তার মা। এরপর থেকেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। বড় ভাই নাসিরের আশ্রয়ে থাকতে শুরু করে। ভাইও দুই বছর আগে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। এরপরেই অভিভাবকশূন্য হয়ে পড়ে। বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাফেরা করে থাকেন তিনি। ভাই মারা যাওয়ার কিছুদিন পরে একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাকে মারধর করে বাজারের লোকজন। এরপরেই সে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে। প্রশাসনের মাধ্যমে বিষয়টি তদন্ত করে অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।

তোফাজ্জলের চাচাতো ভাই ফারুক হোসেন বলেন, আমরা গতকাল সকালে শুনেছি তোফাজ্জলকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এখন ঢাকা মেডিকেলে ময়নাতদন্তের জন্য নেয়া হয়েছে। চাচাতো ভাই শাহাদাত হোসেন থানার আনুষ্ঠানিকতা শেষে তার লাশ নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হবেন। মরদেহ আনার পর জানাজা শেষে বাবা মায়ের পাশে দাফন দেয়া হবে। তোফাজ্জলের বড় ভাই নাসিরের স্ত্রী শরীফা আক্তার বলেন, ভোররাতে অপরিচিত একটি ফোন নম্বর থেকে ফোন আসে আমার ফোনে। ফোনটা ধরার পরেই অপর প্রান্ত থেকে এক লোক তোফাজ্জল কি হয় সে কথা জানতে চায়। সে দেবর একথা বলার পরেই তিনি বলেন, সে চুরি করে ধরা পড়েছে। তাকে বাঁচাতে হলে ২ লাখ টাকা দিতে হবে। এরপর তারা ফোনে ধমক দিতে থাকে এবং বলে কোনো মিথ্যা কথা বলবেন না তাহলে সমস্যা হবে। তাদের সঙ্গে কথা বলার কয়েক ঘণ্টা পরে বিভিন্ন লোকজনে ফোন দিয়ে জানান তোফাজ্জল মারা গেছে। আমার দু’জন ছেলে রয়েছে। তারা বাবাহারা। তাদের একজন চাচা ছিল। তাও শেষ করে দিলো। আমরা আল্লাহর কাছে বিচার দিলাম। 

পাথরঘাটা থানার ওসি মো. আল মামুন বলেন, আমাকে ঢাকা থেকে ফোন দিয়ে জানিয়েছে একজন মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চোর সন্দেহে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে। এর পরে আমি নাম-ঠিকানা যাচাই করে জানতে পেরেছি তার বাড়ি কাঁঠালতলী এলাকার তালুক চরদুয়ানী গ্রামে। সে মানসিক ভারসাম্যহীন ছিল। তার পরিবারকে সংবাদ দিয়েছি। তারা ঢাকাতে যোগাযোগ করেছেন, সেখান থেকে তারা লাশ নিয়ে আসবেন। লাশের আইনি প্রক্রিয়া সেখান থেকেই শেষ করে পাঠাবেন তারা।
 

দেশ বিদেশ থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

দেশ বিদেশ সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status