বিশ্বজমিন
প্রথম রাষ্ট্রীয় সফরে ইরাকে মাসুদ পেজেশকিয়ান
মানবজমিন ডেস্ক
(৩ সপ্তাহ আগে) ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, বুধবার, ২:১৪ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১২:০০ পূর্বাহ্ন
প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর প্রথমবারের মতো ইরাক সফর করছেন ইরানের সংস্কারপন্থি নেতা মাসুদ পেজেশকিয়ান। মধ্যপ্রাচ্যে নানা সংকটের মধ্যে মাসুদের এই সফর বেশ গুরুত্বপূর্ণ। আশা করা হচ্ছে তার এই সফরের মাধ্যমে তেহরান এবং বাগদাদের সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে। স্থানীয় সময় বুধবার মাসুদ বাগদাদে পৌঁছাবেন বলে খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা এপি। এতে বলা হয়, অর্থনীতি, রাজনীতি এবং ধর্মীয় কারনে ইরাকের সঙ্গে ইরানের সম্পর্ক বেশ জটিল। বিশেষ করে ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মাধ্যমে ইরাকের সাবেক প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের পতনের পর তেহরান এবং বাগদাদের সম্পর্কে বেশ উত্তেজনা শুরু হয়। এছাড়া ১৯৮০ সালে ইরানে সাদ্দামের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধও তেহরান-বাগদাদের বৈরী সম্পর্কের একটি বড় কারণ হিসেবে দেখে বিশ্লেষকরা। তবে বাগদাদ বরাবরই তেহরানের সঙ্গে নিজের সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করেছে। বিশেষ করে ইরাকের শিয়া মতালম্বী মিলিশিয়া গোষ্ঠী ইরানকে সমর্থন করে। পেজেশকিয়ানের সফরের আগে বাগদাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পাশেই মঙ্গলবার রাতে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। যা উভয় দেশের সম্পর্কের জন্য উদ্বেগের কারণ। কেননা ইরাকে মার্কিন সেনাদের ঘাঁটি রয়েছে। আর যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ইরানের সম্পর্ক ভালো নয়। মাসুদের সফরকে কেন্দ্র করেই এ বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে কি না এ বিষয়টি এখনও স্পষ্ট নয়। এছাড়া এতে কোনো হতাহতের খবরও পাওয়া যায়নি। এবারের সফরে ইরানের প্রেসিডেন্ট কারবালা এবং নাজাফ শহরে শিয়াদের মাজার পরিদর্শন করবেন। ইরাকের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর বসরাকে ইরানের সাথে যুক্ত করতে একটি রেলপথ প্রকল্প নিয়ে আলোচনা করতে পারে দুদেশ। তেহরানের নিরাপত্তার পাশাপাশি অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদারের বিষয়ে আলাপ করবেন তারা। সফরের আগে ইরাকের একটি টিভি চ্যানেলে দেয়া সাক্ষাৎকারে এ কথা জানিয়েছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি। তিনি বলেছেন, আমরা ইরাকের সাথে আমাদের সীমান্ত নিরাপত্তার বিকাশ, উন্নয়ন এবং অগ্রগতি দেখতে চাই এবং এই লক্ষ্য অর্জনে যে কোনো অর্থনৈতিক প্রকল্পে ইরাক আমাদের সমর্থন পাবে। ইরাকের বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে বাগদাদের আমদানি করা ইরানের প্রাকৃতিক গ্যাসের সরবরাহ বজায় রাখার জন্য পার্শ্ববর্তী শিয়া পাওয়ার হাউসের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কও প্রয়োজন। এই সফরে ইরাকের অপরিশোধিত তেলের জন্য একটি বিনিময় চুক্তি সম্ভাবনাও রয়েছে। তবে নতুন করে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ফলে তেহরানের সাথে বাগদাদের পারমাণবিক সম্পর্ক তৈরির পথ সংকুচিত হতে পারে। রাশিয়াকে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহের অভিযোগে মঙ্গলবার নতুন করে যুক্তরাষ্ট্র সহ ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশের নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েছে তেহরান। ইরাকের কুর্দি যোদ্ধাদের লক্ষ্য করে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ফলে গত ছয় বছরে ইরাক ও ইরানের মধ্যে বেশ উত্তেজনা পরিলক্ষিত হয়েছে। যদিও ইরানের অভিযোগ হচ্ছে ইরাকে ইসরাইলি স্থাপনা রয়েছে। এ বছরের এপ্রিলে ইরাকের আকাশ সীমা ব্যবহার করে ইসরাইলের ওপর নজিরবিহীন ড্রোন হামলা চালায় ইরান। সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানি কনস্যুলেটে ইসরাইলি হামলার সন্দেহে তেল আবিবকে লক্ষ্য করে ওই হামলা চালায় তেহরান। দামেস্কে ওই হামলায় ইরানের দুই জেনারেল এবং পাঁচজন সরকারি কর্মকর্তা নিহত হয়েছিলেন। এছাড়া জুলাইতে ইরানের অভ্যন্তরে হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়াকে হত্যার জন্য ইসরাইলকেই দায়ী করেছে তেহরান। তারা তেল আবিবের বিরুদ্ধে প্রতিশোধের কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে এখন যে উত্তেজনা চলছে তাতে বেশ উদ্বিগ্ন ইরান। বিশেষ করে ইরাকে মার্কিন সেনাদের উপস্থিতি ইরানের জন্য বেশ উদ্বেগের বিষয়। এছাড়া হামাস-ইসরাইল যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে ইরাকে মার্কিন সামরিক ঘাঁটিগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করেছে শিয়া সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো। এর পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় এসব মিলিশিয়া গ্রুপগুলো লক্ষ্য করেও বিমান হামলা চালিয়েছে মার্কিন সেনারা। এমন পরিস্থিতিতে ইরান চাচ্ছে না ইরাকে মার্কিন সেনাদের উপস্থিতি থাকুক। এবারের সফরে এ বিষয়েও আলোচনা হতে পারে। কেননা ইরাকের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিবিদরাও এ আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন যে তাদের দেশে মার্কিন সেনাদের অবস্থান তারা সমর্থন করবেন কি না।