ঢাকা, ২১ এপ্রিল ২০২৫, সোমবার, ৮ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২১ শাওয়াল ১৪৪৬ হিঃ

প্রথম পাতা

কী ঘটেছিল সচিবালয়ে

স্টাফ রিপোর্টার
২৬ আগস্ট ২০২৪, সোমবার
mzamin

রোববার দিনভর দেশবাসীর চোখ ছিল সচিবালয়ে। আনসার সদস্যদের অবস্থানে অবরুদ্ধ ছিল প্রশাসনের কেন্দ্র সচিবালয়। অনেকটা দাবি মেনে নেয়ার পরও রাত অবধি গড়ায় আনসারদের কর্মসূচি। তারা অবস্থান না ছাড়ায় তৈরি হয় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। সচিবালয়ের শ’ শ’ কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে আটকা পড়েন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টা। আনসারের মহাপরিচালকও অবরুদ্ধ ছিলেন সচিবালয়ে। রাতে শিক্ষার্থীদের শক্ত প্রতিরোধে আনসাররা সচিবালয় এলাকা ছাড়েন। তার আগে সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। আনসারদের পিটুনির শিকার হন প্রতিবাদী ছাত্র-জনতা। প্রতিরোধের মুখে পালিয়ে যাওয়া আনসারদের কেউ কেউ জীবন রক্ষায় আশ্রয় নিয়েছিলেন সচিবালয়ে। আবার পালানোর পথে কেউ কেউ আটক হন পুলিশের হাতে। এমন ৩৯০ জন আনসার সদস্যকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। মামলা হয়েছে ৪০০০ জনের বিরুদ্ধে। 

চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে রোববার সকাল ৭টার পর থেকেই সচিবালয়ের চারপাশ ঘিরে অবস্থান নেন কয়েক হাজার আনসার সদস্য। জাতীয় প্রেস ক্লাবসহ আশপাশের এলাকায় তারা অবস্থান নেন। নিজেদের দাবির পক্ষে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেয়া আনসার সদস্য দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসেন। তারা সবাই বাহিনীর পোশাক পরে নিজেদের আইডি কার্ড ঝুলিয়ে কর্মসূচিতে যোগ দেন। অনেকে ব্যাগে করে অতিরিক্ত কাপড়, খাবারও নিয়ে এসেছিলেন। 
আনসারদের অবস্থানের মধ্যেই সকাল সাড়ে ৯টার মধ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা-সচিব এবং কর্মকর্তা কর্মচারীরা ভেতরে প্রবেশ করেন। এ সময় সচিবালয়ের ৫টি প্রবেশদ্বারে নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল পুলিশ, বিজিবি, সেনাবাহিনীসহ একাধিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সচিবালয়ের সামনে বিক্ষোভ জোরদার করেন আনসার সদস্যরা। দুপুরের পর সচিবালয়ে কাউকে প্রবেশ করতে বা বের হতে দিচ্ছিলেন না আনসার সদস্যরা। দুপুরে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জে (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর দপ্তরে আনসারের ডিজিসহ আনসার প্রতিনিধি দলের বৈঠক হয়। বৈঠকে ৩ মাসের রেস্ট প্রথা বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়। এ ছাড়া দাবি দাওয়া পূরণের বিষয়ে একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে অংশ নেয়া আনসার সদস্যরা গণমাধ্যমের সামনে দাবি পূরণের আশ্বাস পাওয়ার কথা জানান। একই সঙ্গে কর্মসূচি প্রত্যাহার করার কথা বলেন। কিন্তু বাইরে থাকা আনসার সদস্যরা জাতীয়করণের দাবিতে অবস্থান চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে অনঢ় থাকেন। বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে। আনসার সদস্যরা অবস্থানে অনঢ়। রাত ৮টায় পরিস্থিতি নিয়ে দ্বিতীয় দফায় ৫ উপদেষ্টাকে নিয়ে ফের বৈঠকে বসেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।  

দিনের শুরুতেই সচিবালয়ে এসেছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলম। রাতেও আনসার সদস্যরা অবস্থান না ছাড়ায় তারা ফেসবুকে বিষয়টি জানিয়ে সাধারণ ছাত্রদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে জড়ো হওয়ার আহ্বান জানান। মুহূর্তে শিক্ষার্থীদের ঢল নামে টিএসসিতে। রাত ৯টার দিকে কিছু শিক্ষার্থী সচিবালয়ের দিকে গেলে তাদের উপর আনসার সদস্যরা হামলে পড়ে। লাঠি, ইট, বেল্ট দিয়ে তাদের মারধর করা হয়। এতে আহত হন অনেক শিক্ষার্থী। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহকে পিটিয়ে আহত করেন আনসার সদস্যরা। এখবর টিএসসিতে পৌঁছলে সেখান থেকে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী লাঠিসোটা নিয়ে সচিবালয়ের দিকে আসেন। তখন আনসার ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। দুই পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলতে থাকে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তখন সেনাবাহিনীর সদস্যরা তৎপর হন। তারা দুই পক্ষকে সরিয়ে দিতে ফাঁকা গুলি ছোড়েন। সেখানে থাকা পুলিশ সদস্যরাও আনসার সদস্যদের সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা চালান। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে আনসার সদস্যরা প্রেস ক্লাব ও জিরো পয়েন্ট এলাকা দিয়ে পালাতে শুরু করেন। এ সময় কেউ কেউ মারধরেরও শিকার হন। এ সময় জীবন শঙ্কায় অনেক আনসার সদস্য সচিবালয়ে ঢুকে পড়েন। শিক্ষার্থীরাও কিছু আনসার সদস্যকে আটকে ঘিরে রাখেন। আনসার সদস্যদের পালানোর সময় পুরো সচিবালয় এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেন শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনতা। তারা নানা ধরনের স্লোগান দিতে থাকেন। সেনা সদস্যরা সচিবালয়ের ফটকে অবস্থান নিয়ে ভেতরে থাকা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাইরে বের হওয়ার সুযোগ করে দেন। রাতে সচিবালয়ে আটকে থাকা আনসার সদস্যদের নাম তালিকা করে থানা পুলিশের হাতে হস্তান্তর করা হয়। 

হঠাৎ করে আনসার সদস্যদের এই কর্মসূচি নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। দাবি মানার পরও তারা কেন এভাবে সচিবালয় অবরুদ্ধ করে রেখেছিলেন সেই প্রশ্ন তুলছেন অনেকে। বলা হচ্ছে আনসারের সাবেক ডিজি বা কর্মকর্তাদের ইন্ধন থাকতে পারে এই আন্দোলনে। এ ছাড়া যারা আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন তাদের অনেকে বিদায়ী সরকারের সময়ে দলীয় পরিচয়ে চাকরি নিয়েছিলেন বলে আলোচনা আছে। সূত্রের দাবি বিগত ১৫ বছরে প্রায় ৪২ হাজার অঙ্গীভূত আনসার সদস্য নিয়োগ পেয়েছেন। তাদের বেশির ভাগই দলীয় সুবিধায় নিয়োগ পান। 
চার থানায় মামলা, আসামি ১০ হাজার, গ্রেপ্তার ৩৯০
ওদিকে চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে আন্দোলন করা সাধারণ আনসার সদস্যদের বিরুদ্ধে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) চার থানায় চারটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই চার থানায় প্রায় ১০ হাজার আনসার সদস্যকে আসামি করা হয়েছে। এরমধ্যে এজাহারনামীয় আসামি ৪২৬ জন। ঢাকা মহানগর পুলিশের শাহবাগ, পল্টন, বিমানবন্দর ও রমনা থানায় এসব মামলা করা হয়েছে। চার মামলায় এখন পর্যন্ত ৩৯০ জন আনসার সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের গতকাল আদালতে তুলে থানা পুলিশ। পরে আদালত তাদেরকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। 
শাহবাগ থানা সূত্রে জানা যায়, সচিবালয়ে হামলা ভাঙচুরের ঘটনায় আনসার সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলায় এজাহারনামীয় আসামি ২০৮ জন ও অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে ৩ হাজার আনসার সদস্যকে। এ ছাড়া শাহবাগ থানায় ১৯১ জন আনসার সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পল্টন থানা সূত্রে জানা গেছে, পল্টন থানার মামলায় এজাহারনামীয় আসামি ১১৪ জন। এ ছাড়া মামলায় ৪ হাজার আনসার সদস্যকে অজ্ঞাত হিসেবে আসামি করা হয়েছে। রোববার রাত থেকে ৯৫ জন আনসার সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রমনা থানা সূত্রে জানা গেছে, সচিবালয়ে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় রমনা থানার মামলায় এজাহারনামীয় আসামি ৯৮ জন ও অজ্ঞাত আসামি ৩ হাজার। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৯৮ জনকে।

এদিকে চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে সচিবালয় অবরুদ্ধ করে ভাঙচুর ও হামলা-মামলায় ৪ থানায় গ্রেপ্তার ৩৯০ জন আনসার সদস্যকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। সোমবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের পৃথক কয়েকটি আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। আদালতের নিবন্ধন শাখা সূত্রে জানা যায়, এদিন শাহবাগ থানার মামলায় গ্রেপ্তার ১৯১ জন, রমনা থানার মামলায় ৯৮ জন, পল্টন থানার মামলায় ৯৫ জন ও বিমানবন্দর থানার মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো ৬ জন আনসার সদস্যকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। এ চার থানার মামলায় অন্তত ৪২৬ জনের নাম উল্লেখ করে আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া অন্তত তিন হাজার অজ্ঞাতনামা আনসার সদস্যদের আসামি করা হয়েছে।

 

 

পাঠকের মতামত

আওয়ামী প্রেতাত্মা এখনো ঘাপটি মেরে বসে আছে....

HARISUL
২৮ আগস্ট ২০২৪, বুধবার, ৯:০৪ পূর্বাহ্ন

সাবধানের মার নাই, হেলা করলে উপায় নাই। যারা দেশের দিকে না চেয়ে নতুন সরকারের 15 দিনের মধ্যে নিজেদের হালুয়া-রুটির দাবী নিয়ে সচিবালয় ঘেরাও করতে চায়, তারা কিছুতেই সরকারের ভাল চায়না। তাদেরকে চ্হ্নিত করে সেভাবে ব্যবস্থা নিতে হবে।

Md. Abul Basher
২৭ আগস্ট ২০২৪, মঙ্গলবার, ৫:৪৫ অপরাহ্ন

প্রশাসনের প্রতিটি বিভাগ থেকে স্বৈরাচারের সময় নিয়োগকৃত সকলকে খুঁজে বের করে আলাদা করতে হবে অন্যথায় সরকার পরিচালনা কঠিন হবে। বিশেষ করে পুলিশ আনসার, বজিবি,র‌্যাব ইত্যাদি। ***বিশেষ দ্রষ্টব্য:: আমরা এই খুনিকে সাবেক প্রধান মন্ত্রী না বলে পলায়ন কারী সৈরাচার বল্লে ভালো হয়।

Monjur Morshed
২৭ আগস্ট ২০২৪, মঙ্গলবার, ৪:২৯ অপরাহ্ন

আওয়ামী প্রেতাত্মা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এখনো ঘাপটি মেরে বসে আছে, এদের মোল উৎপাটন জরুরি। জাতির এই দুঃসময়ে যারা বিভিন্ন দাবি নিয়ে আন্দোলন করছে, এরাই আওয়ামী প্রেতাত্মা।

Siraj Khokan Chowdhu
২৭ আগস্ট ২০২৪, মঙ্গলবার, ১:৪২ অপরাহ্ন

প্রতিটি ইউনিটে নেতৃত্ব দানকারী কর্মকর্তা/কর্মচারীদের রাজনৈতিক পরিচয় যাচাই করে ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি আকুল আবেদন। একটি জঘন্যতম ঘটনা। সবাইকে সতর্ক হবে।

Zaman
২৭ আগস্ট ২০২৪, মঙ্গলবার, ১০:৩৪ পূর্বাহ্ন

আনসার বাহিনী দাবি দেওয়ার নামে সেই দিন সচিবালয়ে কি উদ্দেশ্য গিয়েছিল তাহা সাধারণ জনগণের বুঝার আর বাকি নাই,যেকোনো সরকার যখন আনসার বাহিনী রিক্রোট করে তখন বিজ্ঞপ্তিতে লেখা থাকে নিয়োগ অস্থায়ী ভিত্তিতে কিন্তু সবাই এই নিয়ম জানার পরেও তারা সেই দিন দাবি আদায়ের নামে সরকার কে পিছন থেকে ছুরি মারার এবং সরকার কে বেকায়দায় ফেলের জন্য চেষ্টা করেছিল তাই দেশ ও জনগণের স্বার্থে দোষীদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনতে হবে এতে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।

Shahid Uddin
২৭ আগস্ট ২০২৪, মঙ্গলবার, ৯:৫৩ পূর্বাহ্ন

প্রতিটি ইউনিটে নেতৃত্ব দানকারী কর্মকর্তা/কর্মচারীদের রাজনৈতিক পরিচয় যাচাই করে ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি আকুল আবেদন। একটি জঘন্যতম ঘটনা। প্রশাসন সহ সবাইকে সতর্ক হবে।

Shahi
২৭ আগস্ট ২০২৪, মঙ্গলবার, ৯:০৯ পূর্বাহ্ন

আনসাররা পেশাদারিত্বের পরিচয় দেয়নি। তারা খুনি স্বৈরচারের নির্দেশে অভ্যুল্থানের হীন চেষ্টায় ছিল। ২০০৯ এর পর সকলকে প্রত্যাহার করতে হবে। এ আনসারদের ধরে রাখলে তাদের জন্য দুর্ভোগ পোহাতে হবে। সকল অপকর্মের মুলে এরাই নেতৃত্ব দিবে।

Azad Abdullah Shahid
২৭ আগস্ট ২০২৪, মঙ্গলবার, ৭:৩১ পূর্বাহ্ন

গত ১৫/১৬ বছর এদের এসব দাবী কোথায় ছিল? এখন কেন তারা দাবীর নামে ষড়যন্ত্র করছে। নিশ্চয়ই এখানে ইন্ধন আছে। আমার মনে হয় এরা আনসার না। এরা আনসারলীগ।

Mohammed Rafiqul Isl
২৭ আগস্ট ২০২৪, মঙ্গলবার, ৩:২৮ পূর্বাহ্ন

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status