দেশ বিদেশ
ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের নিবন্ধ
বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ভারতের বাজি উল্টে গেছে
বেঞ্জামিন পারকিন এবং জন রিড
৯ আগস্ট ২০২৪, শুক্রবারভারত কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য আন্তর্জাতিক সমর্থক ছিল। নির্বাসিত হওয়ার পর তাকে আশ্রয় দিয়েছে ভারত। বাংলাদেশিরা তার বর্বরতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করার আগ পর্যন্ত হাসিনার সরকারকে সমর্থনও করে এসেছে। এই সপ্তাহে দীর্ঘসময় ধরে শাসনকারী প্রধানমন্ত্রীর উপর নয়াদিল্লির বাজি হঠাৎ পাল্টে গেছে। কয়েক সপ্তাহের ক্রমবর্ধমান বিক্ষোভ ও সহিংসতার পর শেখ হাসিনা সোমবার ভারতে পালিয়ে যান যখন সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীরা তার সরকারি বাসভবনের দিকে মিছিল করে এগিয়ে যাচ্ছিল। ১৫ বছর পর তার সরকারের আকস্মিক পতন বাংলাদেশে একটি অনিশ্চিত শূন্যতা তৈরি করেছে। ১৭০ মিলিয়নের এই দেশটিকে ভারতের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য আঞ্চলিক অংশীদার বলে মনে করা হয়। হাসিনার এই আকস্মিক পতন নয়াদিল্লির আঞ্চলিক কৌশলেও ধাক্কা দিয়েছে বিশেষ করে যখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ক্রমবর্ধমান চীনা প্রভাব মোকাবিলা করতে চাইছেন। শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনাকে সমর্থন করার ভারতের সিদ্ধান্ত অনেক বাংলাদেশির চোখে তার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার ঝুঁকি তৈরি করেছে।
ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির বাংলাদেশি রাজনীতির বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, এটি ভারতের দ্ব্যর্থহীন সমর্থন যা হাসিনাকে ক্ষোভ থেকে রক্ষা করেছে এবং তাকে আন্তর্জাতিক চাপ থেকে রক্ষা করেছে। এই মুহূর্তটি নয়াদিল্লির কাছে একটি বার্তা যে তারা এমন একটি শাসনব্যবস্থার প্রতি সমর্থন অব্যাহত রেখেছে যার মানবাধিকার রেকর্ড ছিল ভয়ঙ্কর।’
ভারতীয় কর্মকর্তারা শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর যে সহিংসতা হয়েছে তাতে সতর্কতার সঙ্গে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। সোমবার বাংলাদেশে ১৩০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে এবং ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর সতর্ক করেছেন যে, সংখ্যালঘুদের- বিশেষ করে হিন্দুদের লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।
মঙ্গলবার সংসদে জয়শঙ্কর বলেন, ‘ভারত-বাংলাদেশ বহু দশক ধরে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখে এসেছে। স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত ভারত গভীরভাবে উদ্বিগ্ন থাকবে। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সব থেকে বড় ১.৪ বিলিয়ন জনসংখ্যা এবং ৩.৫ ট্রিলিয়ন অর্থনীতির দেশ ভারতের তার প্রতিবেশীদের সঙ্গে একটি জটিল ইতিহাস রয়েছে। ভারতীয় কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ধরে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশে (যেটি ভৌগোলিকভাবে প্রায় ভারত দ্বারা বেষ্টিত) চরমপন্থি এবং চীনা দখলদারি নিয়ে চিন্তিত। তারা ধর্ম নিরপেক্ষতাবাদী শেখ হাসিনার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলকে ইসলামাবাদের প্রতি নরম মনোভাবাপন্ন এবং বেইজিংয়ের নিকটতম হিসেবে দেখে এসেছে। কিছু ভারতপন্থি সরকারি সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট এবং নিউজ আউটলেটগুলো বাংলাদেশের বিদ্রোহকে কিছু ক্ষেত্রে ‘পশ্চিমা চক্রান্ত’ হিসেবে চিত্রিত করেছে।
শেখ হাসিনার সাথে ভারতের দৃঢ় বন্ধনের মূলে রয়েছে পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধ। সেই মুক্তিযুদ্ধে ভারত তার পিতা, বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে সমর্থন জানিয়েছিল। ১৯৭৫ সালে একটি অভ্যুত্থানে তিনি এবং তার পরিবারের বেশির ভাগ সদস্য নিহত হওয়ার পর ২৭ বছর বয়সী শেখ হাসিনাকে দিল্লিতে আশ্রয় দেয়া হয়েছিল। শেখ হাসিনা বাংলাদেশে চীনা প্রভাব বিস্তারের প্রতিক্রিয়ায় আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সম্পর্ক এবং সংযোগ জোরদার করার জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কৌশলের একটি অংশ হয়ে ওঠেন। ভারত বাংলাদেশের জন্য ৮ বিলিয়ন ডলারের ক্রেডিট লাইন উন্মুক্ত করেছে, যা এশিয়ার অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে বেশি। রাজনৈতিকভাবে মোদি সরকারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত আদানি গোষ্ঠী বাংলাদেশে লাভজনক বিদ্যুৎ সরবরাহের চুক্তি করেছে। দিল্লির এশিয়া সোসাইটি পলিসি ইনস্টিটিউটের ফেলো সি রাজা মোহন বলেছেন- ‘হাসিনা ভারতপন্থি ছিলেন এবং শাসন পরিবর্তনের ক্ষেত্রে উন্মুক্ত মানসিকতার ছিলেন। কৌশলগত প্রশ্ন হলো: আমরা কি সেই সম্পর্ক তৈরি করতে পারি যা শাসন পরিবর্তনেও টিকে থাকবে?’ তার কর্তৃত্ববাদ এবং দুর্বল মানবাধিকার রেকর্ডকে ঘিরে ঘরে ঘরে ক্রমবর্ধমান ক্ষোভ সত্ত্বেও, জুনে পুনরায় নির্বাচিত হওয়ার পর শেখ হাসিনাই প্রথম নেত্রী যিনি মোদির সঙ্গে দেখা করেন। জানুয়ারিতে শেখ হাসিনার পুনঃনির্বাচনের আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য বিরোধী বিএনপি’র বিরুদ্ধে হাসিনা সরকারের ক্র্যাকডাউনের সমালোচনা করলেও ভারতের মুখে তা শোনা যায়নি চনা করেছিলেন। একজন ভারতীয় পররাষ্ট্রনীতি পণ্ডিত কান্তি বাজপেয়ী বলেছেন, ‘গত কয়েক বছরে, পরিস্থিতি কোনদিকে যাচ্ছে তা আগেই ভারতের ভালোভাবে বোঝা উচিত ছিল। ভারত সরকার এই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থেকে গা বাঁচাতে পারতো। ...এটা এখন একটা সমস্যা।”
শেখ হাসিনার পতন মালদ্বীপের মতো কাছে আরেকটি কূটনৈতিক ধাক্কা। নভেম্বরে ‘ইন্ডিয়া আউট’ প্ল্যাটফরমে নেতৃত্ব দিয়ে প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজু মালদ্বীপে ক্ষমতায় আসেন এবং ভারতীয় সৈন্যদের প্রত্যাহার করেন। শ্রীলঙ্কা, নেপাল ও ভুটানে ভারত প্রভাব বিস্তারের জন্য চীনের সঙ্গে লড়াই করছে। ভারতের তাৎক্ষণিক চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে একটি হলো শেখ হাসিনাকে নিয়ে এখন কী করা উচিত। জয়শঙ্কর নিশ্চিত করেছেন যে, হাসিনা সোমবার ‘খুব অল্প নোটিশে’ দিল্লি পৌঁছান। প্রতিবাদকারীরা ঢাকার বাসভবনে হামলার আগে হাসিনাকে নিরাপদ আশ্রয় প্রদান করে ভারত তাকে সম্ভাব্য সহিংসতা থেকে রক্ষা করতে এবং বাংলাদেশে আরও বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধে সহায়তা করেছিল।
কিন্তু ৭৬ বছর বয়সী প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতি নয়াদিল্লির ভাবমূর্তিকে ঝুঁকির মুখে ফেলেছে। বাংলাদেশের পরবর্তী সরকারের সঙ্গে সম্পর্ককে জটিল করতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। শেখ হাসিনা তৃতীয় কোনো দেশে আশ্রয় চাইছেন, কিন্তু তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ মিডিয়াকে বলেছেন, তার মা কোথায় যাবেন তা ঠিক করেননি এবং আপাতত কিছুদিনের জন্য দিল্লিতে থাকবেন। জয়শঙ্কর হাসিনার সঙ্গে দেখা করার পর জানান তিনি অত্যন্ত মর্মাহত ছিলেন, কথা বলতে পারছিলেন না। বাংলাদেশের নবনিযুক্ত অন্তর্বর্তী নেতা তথা নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন তিনি স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার করতে এবং ‘নতুন নির্বাচনের একটি রোডম্যাপ’ তৈরি করতে কাজ করবেন। বাংলাদেশে নতুন নির্বাচন বিএনপিকে একটি প্রত্যাবর্তনের সুযোগ করে দিতে পারে, এবং দলটি ভারত বিরোধী তকমা ঝেড়ে ফেলার চেষ্টা করে এসেছে। বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল জানিয়েছেন - ‘একটি গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে বিএনপি সবসময় ভারতের দিকে তাকিয়ে। আমরা আশা করি ভারত সরকার শুধুমাত্র একজন ব্যক্তির উপর নির্ভর করা বন্ধ করে (শেখ হাসিনা) সরাসরি বাংলাদেশের জনগণের সাথে কাজ করবেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশে যিনিই ক্ষমতায় আসবেন, তার কাছে বৃহত্তর প্রতিবেশীর সহায়তা চাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের সিনিয়র ফেলো শাফকাত মুনির মনে করেন, “বাংলাদেশে কেমন সরকার গঠিত হবে তা নিয়ে নয়াদিল্লিতে এখন অনেক চাপানউতোর রয়েছে। কিন্তু ভূরাজনীতি এবং ভৌগলিক বাস্তবতাকে মাথায় রেখে ভারতের সাথে কাজ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
India has to prove that they are friendly doing with Bangladesh
যখন দেখবে দাদারা আমার প্রশংসা করছে, তখন বুঝে নেবে যে আমি আমার দেশের বিরুদ্ধে কাজ করছি-- শের এ বাংলা এ ফজলুল হক
I disagree with the assessment that Bangladesh has to to have India. Taiwan a small nation doesn’t give a crap about big China, Israel doesn’t give a crap about entire middle-east, Lithuania doesn’t give a crap about big Russia. It all depends how Bangladesh align itself with the U.S. and China. The strategic alliance is the key. India is a poor country with hostility with Bangladesh, so if Bangladesh find a fine balance between The U.S. and China then it would be a strategic pragmatic move.
India shouldn’t support any tyrant gov.in Bangladesh
ভারতকে বিশ্বাস করা উচিৎ হবে না।
We do not want any domination.
বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল জানিয়েছেন - ‘একটি গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে বিএনপি সবসময় ভারতের দিকে তাকিয়ে।..শুনতে খুব ভাল শোনালো না!
বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল জানিয়েছেন - ‘একটি গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে বিএনপি সবসময় ভারতের দিকে তাকিয়ে।..শুনতে খুব ভাল শোনালো না!
বাংলাদেশে যিনিই ক্ষমতায় আসবেন, তার কাছে বৃহত্তর প্রতিবেশীর সহায়তা চাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না। আর কোন উপায় থাকবে না, মানে? এই বিশ্লেষকরা কি এখনো প্রচ্ছন্ন ভাবে ভারতকেই দেশের সার্বিক তত্ত্বাবধানের নিয়ামক হিসাবে দেখতে চাচ্ছেন? যে বিশ্লেষকরা এই মতামত দিয়েছেন, তাদের কে শুধু একটি প্রশ্ন, পতিত স্বৈরাচার একনায়ক হাসিনা 2008 সালে যখন ক্ষমতায় আসেন তখন বাংলাদেশের যে রিজার্ভ ছিল তা কি একমাত্র ভারতের সহযোগিতায় হয়েছিল? বরং বিগত 15 বছর ভারতের সবধরনের সহযোগিতা থাকার পরও হাসিনার যখন পতন হল তখন রিজার্ভ সহ সার্বিক অর্থনীতির অবস্থা কি? রিজার্ভ প্রসঙ্গটা আনলাম এই জন্য যে, রিজার্ভ দিয়ে দেশের সার্বিক অর্থনীতির একটা চিত্র পাওয়া যায়।