দেশ বিদেশ
চট্টগ্রামে স্বাভাবিক হচ্ছে পরিস্থিতি রাত জেগে ছাত্র-জনতার পাহারা
স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম থেকে
৭ আগস্ট ২০২৪, বুধবারশেখ হাসিনার পদত্যাগের পর সৃষ্ট পরিস্থিতিতে সারা দেশের মতো আতঙ্কে আছে চট্টগ্রামের মানুষ। এরমধ্যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর, মন্দির, গীর্জায় ব্যাপক হামলার গুজব ছড়িয়ে পড়েছে। তবে এখনো পর্যন্ত এসবের কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। যদিও দুর্বৃত্তদের হাত থেকে বাঁচাতে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ও মন্দিরের সামনে পাহারা বসিয়েছেন ছাত্র-জনতা।
জানা যায়, রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি দল প্রবর্তক এলাকার ইসকন মন্দির ও প্রবর্তক মন্দিরে যায়। তারা মন্দিরে দায়িত্বরত ও ধর্মগুরুদের সঙ্গে দেখা করে আশ্বাস দেন। এ সময় শিক্ষার্থীদের একটি দল সেখানে পাহারার ব্যবস্থা করে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ বলেন, ‘ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে ভুল প্রমাণ করার জন্য পরিকল্পিতভাবে এসব হামলা চালাচ্ছে দুর্বৃত্তরা। আমরা আমাদের সমন্বয়কদের সকল উপাসনালয়সহ সরকারি স্থাপনার নিরাপত্তা নিশ্চিতে মাঠে থাকার নির্দেশ দিয়েছি।’ এদিকে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষও রাত জেগে মন্দিরে পাহারা দিয়েছেন। বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষও নিজ উদ্যোগে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ও উপাসনালয় রক্ষায় রাত জেগে পাহারা দিয়েছেন। চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক সরোয়ার আলমগীর মানবজমিনকে বলেন, নেতাকর্মীদের হিন্দু ভাই-বোনদের বাড়িঘর ও মন্দিরের নিরাপত্তা প্রদানের জন্য বলেছি। আমি নিজেও কয়েকটি মন্দিরে গিয়েছি। এখনো কোনো ধরনের নাশকতার ঘটনা ঘটেনি।
চট্টগ্রাম মহানগর কৃষক দলের নেতা আজম খান বলেন, আমদের দল থেকে নেতাকর্মীদের প্রতি বিশেষ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। রাত জেগে মন্দিরে পাহারা দিচ্ছি। কাউকে আমরা বিশৃঙ্খলা করতে দিবো না। নগরের হালিশহর এলাকার বিভিন্ন মন্দিরে পাহারার দায়িত্বে থাকা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী নুরনবী রবিন বলেন, ‘আমরা রাতেই প্রতিটি এলাকায় মন্দির ও গীর্জা রক্ষায় শিক্ষার্থীদের নিয়ে মাঠে আছি। বিপ্লব বেহাতের কোনো সুযোগ দেয়া হবে না।’
এদিকে নগরের বিভিন্ন মন্দিরে হামলার বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ প্রচারণা চালানো হলেও এখনো পর্যন্ত চট্টগ্রাম নগরের কোথাও এমন কোনো ঘটনার সংবাদ পাওয়া যায়নি। বিভিন্ন ফেসবুক আইডি থেকে অনেক আগের এরকম কিছু ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। পুলিশের একটি সূত্রও বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মিঠুন বৈষ্ণব নামে চট্টগ্রামের একজন সমাজকর্মী ফেসবুকে লিখেছেন, ‘মন্দিরে হামলা হলে, আগুন লাগালে সোর্সসহ দিবেন। কোনো প্রকার গুজব না ছড়ানোর অনুরোধ রইলো।’
ইংরেজি দৈনিক বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডে কর্মরত সাংবাদিক জোবায়ের চৌধুরী বলেন, মন্দিরে হামলার নিশ্চিত কোনো খবর পাচ্ছি না। তারপরও যারা ফেসবুকে লিখছে, তারা নিছক গুজব ছড়াচ্ছে। তারা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে চাইছে। আগে তাদের প্রতিহত করুন। প্রসঙ্গত, শেখ হাসিনার পতন উপলক্ষে সারা দেশের মতো চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানেও আনন্দে ফেটে পড়েছে সাধারণ মানুষ। গতকাল বিকাল সাড়ে ৩টা থেকেই মিছিলে মিছিলে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে চারপাশ।আনন্দে মিছিলে যোগ দেন বিভিন্ন বয়স-পেশার মানুষ। এরমধ্যে দুর্বৃত্তরা বিভিন্ন স্থানে ভাঙচুর ও আগুন দিয়েছে। নগরের কোতোয়ালি, চান্দগাঁও, ডবলমুড়িং ও বায়েজিদ থানায় হামলা ও লুটপাট করা হয়েছে। কোতোয়ালি থানা থেকে লুটপাট করা হয়েছে বেশকিছু অস্ত্র। পুলিশের গুলিতে আহত হয়েছে অনেকে। চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, রাউজানের এমপি ফজলে করিম চৌধুরীর বাড়িতে ভাঙচুর হয়েছে। পুড়িয়ে দেয়া মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যালয়।