বাংলারজমিন
ঝিনাইদহে সংঘর্ষে আহত ৪০, বিভিন্ন স্থাপনা ভাঙচুর
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
৫ আগস্ট ২০২৪, সোমবারঝিনাইদহে পুলিশের প্রতি ইটপাটকেল নিক্ষেপ, থানায় প্রবেশের চেষ্টা, ধাওয়া- পাল্টা ধাওয়া, রাবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারশেল নিক্ষেপ ও বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালসহ বিভিন্ন স্থাপনা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের মধ্যদিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অসহযোগ কর্মসূচির প্রথম দিন অতিবাহিত হয়। এ সময় পুলিশের ছোড়া রাবার বুলেট ও টিয়ারশেলে শিক্ষার্থী-সাংবাদিকসহ ৪০ জন আহত হন। ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয় আওয়ামী লীগের সমাবেশ মঞ্চ, দুইটি পুলিশ বক্স ও ঝিনাইদহ ডাকঘর বিভিন্ন স্থাপনা। আহতদের মধ্যে ২৪ জনকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ও ১৩ জনকে ব্যাপারীপাড়ার একটি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। আহতরা হলেন- জান্নাতুল ফেরদৌস, সাকিব, সবুজ, আপন, মহিবুল্লাহ, আল-কাবির, মৃদুল, পারভেজ, সিফাত, পিকুল, ফয়সাল সোয়াদ, সজল রাব্বি, সাব্বির, রাজু, হাসিব, মেহেদী, আসিফ, নয়ন, আবিদ, সাগর ও শাওন। ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. নুসরাত জাহান জানান, আহত শিক্ষার্থীদের বয়স ১৬ থেকে ২১ বছরের মধ্যে। এদের মধ্যে ১৩ জনের গায়ে রাবার বুলেট বিদ্ধ হয়েছে। বাকিরা কাঁদানে গ্যাসে আহত হয়েছেন। এদিকে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙচুরের ছবি তুলতে গিয়ে গণমাধ্যমকর্মী মেরাজ সুজন, কাজী একরামুল হক লিকু ও হাসান বিক্ষোভকারীদের হাতে আহত হন। এ সময় চুয়াডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে অবস্থিত ‘ঝিনেদা টিভি’ নামে একটি অনলাইন ভিত্তিক মিডিয়া অফিসের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়।
দুপুর ১২টা থেকে বিকাল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত ঝিনাইদহ শহরের বিভিন্ন এলাকা বিক্ষোভকারীদের দখলে ছিল। জেলা সদরের সব পুলিশ এ সময় ঝিনাইদহ সদর থানার প্রধান গেট বন্ধ করে দিয়ে থানার মধ্যে অবস্থান গ্রহণ করে। রোববার সকাল থেকেই ঝিনাইদহ শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট দখল করে নেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মীরা। বেল ১১টা থেকে জেলা শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে ছাত্ররা ঝিনাইদহ শহরে সমবেত হতে থাকেন। এরপর ঝিনাইদহ পাবলিক হেলথ জামে মসজিদ, আরাপপুর ও কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল ও হামদহ স্ট্যান্ড থেকে একযোগে ছাত্র জনতার বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিল ও স্লোগানে স্লোগানে উত্তাল হয়ে ওঠে ঝিনাইদহ শহর। প্রথম থেকেই ঝিনাইদহ জেলা পুলিশ সতর্ক অবস্থানে ছিল। দুপুরের দিকে মিছিলটি পায়রা চত্বর থেকে থানার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বিক্ষোভকারীরা জানতে পারে তাদের দুই শিক্ষার্থীকে পুলিশ আটক করেছে। তাদের ছাড়াতে ছাত্র জনতা জোটবদ্ধ হয়ে থানায় প্রবেশের চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে রাবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এ সময় বিক্ষোভকারীরাও থানার মধ্যে অবস্থান নেয়া পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে ছাত্ররা দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়।
এরপর পুলিশ থানার ভেতর থেকে বাহিরে এসে মুহুর্মুহু টিয়ারশেল রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করতে থাকে। ঘণ্টাব্যাপী চলার পর পুলিশ ধীরে ধীরে আবারো থানার মধ্যে ঢুকে প্রধান গেট বন্ধ করে থানার মধ্যেই অবস্থান নেয়। এরপর ছাত্ররা জোটবদ্ধ হয়ে তারা পায়রা চত্বর ও পোস্ট অফিস মোড়ে অবস্থান নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের ব্যানার, ফেস্টুন, দুইটি পুলিশ বক্স, প্রেরণা একাত্তরে নির্মিত বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয়। একপর্যায়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কারী শারমিন সুলতানা, রায়হান ও হুসাইন কর্মসূচি শেষ করার ঘোষণা দেয়। এ সময় বিক্ষোভকারীরা বাড়ি ফেরার পথে পানি উন্নয়ন বোর্ড, দুর্নীতি দমন কমিশন, শহরের মডার্ন মোড়ে নির্মিত আওয়ামী লীগের সভামঞ্চ ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন অফিসের সামনে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ভাঙচুর করতে দেখা যায়। এ সময় আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের কোনো নেতাকর্মীকে মাঠে দেখা যায়নি। তবে তারা বিকাল ৪টার পর মাঠে নামবেন বলে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সফিকুল ইসলাম অপু দলের এক বর্ধিত সভায় ঘোষণা দেন। কিন্তু এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ৪টার পরও আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকর্মীকে রাজপথে দেখা যায় নাই।