ঢাকা, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, শনিবার, ৩০ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিঃ

খেলা

আরও একটি হতাশার গল্প লিখে প্যারিস ছাড়ছে বাংলাদেশ দল

সামন হোসেন, প্যারিস (ফ্রান্স) থেকে
৫ আগস্ট ২০২৪, সোমবারmzamin

বাংলাদেশের জন্য অলিম্পিক মানেই নতুন নতুন শহর, আধুনিক ক্রীড়া অবকাঠামো দর্শন, আর নিছক অভিজ্ঞতা অর্জনের মঞ্চ। এমনটা চলে আসছে সেই ১৯৮৪ সাল থেকে। চার দশকে এই যাওয়া-আসার মাঝে মেলেনি কোনো পদক, বলার মতো কোনো পারফরম্যান্স; বরং জুটেছে না পারার ব্যর্থতা। চার বছর অন্তর আয়োজিত গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ শেষে পদকপ্রাপ্তির উজ্জ্বল তালিকার পাশাপাশি প্রকাশ পায় পদক না পাওয়া দেশের তালিকাও। বিপুল জনসংখ্যার দেশগুলোর মধ্যে পদক না পাওয়াদের নিয়ে আলাদা আরেকটা তালিকা হয়। সেখানে ওপরের দিকে থাকাটা আরো একবার নিশ্চিত করে প্যারিস থেকে দেশে ফেরা শুরু করেছে বাংলাদেশের ক্রীড়াবিদরা। গতকাল প্রথম ধাপে প্যারিস ছাড়েন শুটার রবিউল ইসলাম তার কোচ জায়ের রেজাই ও বিওএ উপমহাসচিব নজীব আহমেদ। অন্য ক্রীড়াবিদদের প্যারিস রেখে গেমস শেষ হওয়ার আগেই ঢাকার বিমান ধরেন সেফ দ্য মিশন ইন্তেখাবুল হামিদ অপু। আগামীকাল প্যারিস ছাড়বেন অপর চার ক্রীড়াবিদ সোনিয়া খাতুন, সামিউর রহমান রাফি, আরচার সাগর ইসলাম ও স্প্রিন্টার ইমরানুর রহমান। তিনজনের গন্তব্য ঢাকা। ইমরানুর রহমান ফিরবেন লন্ডনে। 
অলিম্পিকে বাংলাদেশের অংশ নেয়া শুরু সেই ১৯৮৪ সাল থেকে। লস অ্যাঞ্জেলসের ওই আসরে ১০০ মিটার স্প্রিন্টে লাল-সবুজের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন সাইদুর রহমান ডন। আগের দশ আসরে বাংলাদেশ থেকে ৪৯ জন অ্যাথলেট অংশ নিয়েছেন অলিম্পিকে। এবার প্যারিসে অংশ নিয়েছেন পাঁচজন। শুটার রবিউল, স্প্রিন্টার ইমরানুর রহমান, সাঁতারু সামিউল ইসলাম রাফি ও সোনিয়া খাতুন অংশ নিয়েছেন ওয়াইল্ড কার্ডে। একমাত্র আরচার সাগর ইসলাম নিজ যোগ্যতায় সরাসরি খেলেছেন প্যারিস অলিম্পিক। আগের দুই আসরে নিজ যোগ্যতায় অংশ নিয়েছেন আরচার রোমান সানা ও গলফার সিদ্দিকুর রহমান। সাগর সরাসরি অংশ নেয়ার এবার তার ওপর প্রত্যাশা একটু বেশি ছিল। তিনিও সেটা পূরণ করতে পারেননি। তবে সবচেয়ে হতাশ করেছে শেফ দ্য মিশনের নিজের ডিসিপ্লিন শুটিং। বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশনের উপমহাসচিব ইন্তেখাবুল হামিদ শুটিং স্পোর্টস ফেডারেশনেরও মহাসচিব।  সারা বছর বিদেশি কোচের অধীনে অনুশীলন করেন শুটাররা। সবচেয়ে বেশি সুযোগ সুবিধা পাওয়া এই ডিসিপ্লিন সবচেয়ে বেশি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায়ও অংশ নিয়ে থাকে। তবুও গেমসে এলে নিজের সেরাটাও দিতে পারেন না শুটাররা। প্যারিসে ১০ মিটার এয়ার রাইফেলে নিজের সেরা স্কোরের ধারে কাছে যেতে পারেনননি রবিউল ইসলাম। তাই যারপরনাই হতাশ শেফ দ্য মিশন অপু। দেশ ত্যাগের আগে তিনি বলেন, ‘শুটিং, অ্যাথলেটিক্স ও সাঁতারে আমাদের পদক জেতা সম্ভব নয়। টাইমিং ও স্কোরিং উন্নতিই ছিল লক্ষ্য। একমাত্র সাঁতারু রাফি ছাড়া আর কেউই টাইমিংয়ে ভালো করেনি। এটা খুবই দুঃখজনক। তবে রবিউলকে নিয়ে আশায় ছিলাম। ও যদি ওর সেরাটা দিতে পারতো, তাহলে আমরা ফাইনাল খেলতে পারতাম। কিন্তু রবিউল আমাকে হতাশ করেছে।’ সাঁতারু সামিউল ইসলাম রাফি ১০০ মিটার ফ্রি স্টাইলে ৫৩.১০ সেকেন্ড টাইমিং করেছেন। তার ব্যক্তিগত সেরা টাইমিংয়ের চেয়ে মাত্র ০.০২ সেকেন্ড কমিয়েছেন। এরপরও দক্ষিণ এশিয়ার ভারত, নেপাল ও শ্রীলঙ্কার সাঁতারুরা তার চেয়ে এগিয়ে। ফলে দক্ষিণ এশিয়ান গেমসেও বাংলাদেশের জন্য অশনিসঙ্কেত। তাই বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশনের মহাসচিব সৈয়দ শাহেদ রেজার কপালে চিন্তার ভাঁজ।’ অপর সাঁতারু সোনিয়া তার সেরা টাইমিং করতে পারেননি। ৫০ মিটার ফ্রি স্টাইলে সোনিয়া গত এশিয়ান গেমসে ৩০.১১ সেকেন্ড সময় নিয়েছিলেন। অলিম্পিকে সেটা শেষ করেছেন ৩০.৫২ সেকেন্ড সময় নিয়ে। অলিম্পিকে সাঁতার-অ্যাথলেটিক্সে টাইমিং অবনতির চেয়ে ডিসকোয়ালিফাইড হওয়ার ঘটনাও আছে বাংলাদেশের। তবে এবার অলিম্পিকে নতুন এক বিতর্ক যোগ হয়েছে। বাংলাদেশের দ্রুততম মানব ইমরানুর রহমান বাজে টাইমিংয়ের পর দাবি করেছেন তিনি ইনজুরড, অনুশীলনে ছিলেন না। এমনকি তিনি অলিম্পিকেও অংশ নিতে চাননি। যদিও ইমরানের এই দাবি প্রত্যাখান করেছেন ফেডারেশন সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রকিব মন্টু। নিজের ব্যর্থতা এড়াতে ইমরান ঢাল হিসেবে ইনজুরির কথা বললেন নাকি ইমরানকে ফেডারেশন ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে, এ নিয়ে ধূম্রজালে রয়েছেন খোদ শেফ দ্য মিশন। তিনি বলেন, ‘ইমরানের অসুস্থতা বা সমস্যার বিষয়টি শেফ দ্য মিশন হিসেবে আমাকে জানায়নি। ভিলেজে তাকে সুস্থ স্বাভাবিকই দেখেছি। দেশে ফিরে প্রয়োজনে আরও খতিয়ে দেখা উচিৎ বিষয়টি।’ ১৯৮৪ সাল থেকে ২০২৪। লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে প্যারিস। এই ১১ আসরে বাংলাদেশ শুধু অংশগ্রহণ ও অভিজ্ঞতাই অর্জন করেছে। অবকাঠামোগত সমস্যা, ফেডারেশন ও সংগঠকদের পরিকল্পনাহীনতা, ক্রীড়াবিদদের উদাসীনতাসহ আরও নানা কারণে লজ্জা নিয়ে ফিরেছে বাংলাদেশের অ্যাথলেটরা। এর শেষ কোথায় সেটাই এখন প্রশ্ন সবার। 
 

খেলা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

খেলা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status