খেলা
অলিম্পিকে ‘অজ্ঞতা জাহির’ সংবাদকর্মীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার
স্পোর্টস রিপোর্টার, প্যারিস (ফ্রান্স) থেকে
৪ আগস্ট ২০২৪, রবিবার১০০ মিটার স্প্রিন্ট শেষ করে মিক্সড জোনে সাংবাদিকদের সঙ্গে যখন কথা বলছিলেন ইমরানুর রহমান, তখন স্টেডিয়ামের বাইরে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ কন্টিনজেন্টের সেফ দ্য মিশন ও বাংলাদেশ শুটিং স্পোর্ট ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ইন্তেখাবুল হামিদ অপু। সেখানেই সাংবাদিকদের জানাচ্ছিলেন ইমরানুর দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠেছে। আমরা কেন ইমরানের ইভেন্ট ছেড়ে বাইরে চলে এসেছি। তখন সাংবাদিকরা পাল্টা প্রশ্ন করে জানতে চান ইমরানুর কি জানেন সে যে দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠেছে? আমাদের মনে হয় ইমরানুর বিষয়টি জানেন না। জানলে মিক্সড জোনে আসতেন না, কিংবা ড্রপ টেস্টে যেতেন না। তখনই সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হন অপু। বাজে ব্যবহার করতে থাকেন সেখানে উপস্থিত চার সাংবাদিকের সঙ্গে। কোনো কথা না শুনে, নিয়ম না যেনে উল্টো সাংবাদিকদের জ্ঞান দিতে থাকেন বাংলাদেশ শুটিং স্পোর্ট ফেডারেশনের এই কর্মকর্তা। চিৎকার করে বলতে থাকেন ইমরান জানেন না, আপনারা জানেন। পাশে দাঁড়িয়ে তাকে সায় দিচ্ছিলেন অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল রকিব মন্টু। অথচ সত্যিটা হলো ইমরান ৪৫ জন স্প্রিন্টারের মধ্যে ২৫তম হয়ে বাদ পড়েছেন। ইমরানের ইভেন্টে ছয় হিট থেকে দুইজন করে ১২জন এবং সেরা চারজন এই মোট ১৬ জন দ্বিতীয় রাউন্ডে কোয়ালিফাই করেছে। অ্যাথলেটিক্সের মতো শুটিংয়ের অবস্থাও যাচ্ছে তাই। এবারের অলিম্পিকে কোনো প্রকার বাছাই ছাড়া সুযোগ পাওয়া রবিউল ইসলাম ১০ মিটার এয়ার রাইফেলে ৪৯ জনের মধ্যে ৪৫তম হয়েছেন।
বিদেশি কোচ এনে এবং সারা বছর ক্যাম্প করেও বাংলাদেশের সবচেয়ে সম্ভাবনার ইভেন্ট শুটিংয়ে গেমসগুলোতে আসছে না সাফল্য। শুরুটা হয়েছে পালেমবাং জাকাবারিং শুটিং রেঞ্জ থেকে। সেখানে হতাশ করেছেন দেশসেরা শুটাররা। কমনওয়েলথে পদক জেতা আব্দুল্লাহেল বাকী ১০ মিটার এয়ার রাইফেলে ৪৪ জনের মধ্যে ১৯তম। শাকিল আহমেদ ৪০ জনের মধ্যে ২২তম। দুঃখজনক হলেও সত্য, ৫০ মিটার এয়ার রাইফেল থ্রি পজিশনে কোয়ালিফাই করতে পারেননি কেউ। একইভাবে ব্যর্থ মেয়েরাও। হাংজু এশিয়ান গেমসেও ব্যর্থ শুটাররা। দুই একজন শুটার ব্যক্তিগত স্কোরিংয়ে উন্নতি করলেও সামষ্টিক অর্থে বাংলাদেশের শুটিং এশিয়াডে বিশেষ কোনো স্থান অর্জন করতে পারেনি দলীয় বা ব্যক্তিগত ক্ষেত্রে। কোনো প্রকার বাছাই ছাড়াই প্যারিস অলিম্পিকে নাম পাঠানো হয় রবিউল ইসলামের। সেই রবিউল ব্যর্থ হয়েছেন চরমভাবে। সারা বছর বিদেশি কোচের অধীনে ট্রেনিং করে ৪৯ প্রতিযোগীর মধ্যে ৪৫তম হয়েছেন এই শুটার। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শুটার জানিয়েছেন ফেডারেশন সাধারণ সম্পাদক চলেন দেশি এক কোচের কথায়। কোচ তার পছন্দের মতো খেলোয়াড় নির্বাচন করে বিদেশে বিভিন্ন টুর্নামেন্টে পাঠায়। বেশকিছুদিন ধরে কোনো বাছাই হয় না ফেডারেশনে। ইরানি কোচ জায়ের রেজাইয়ের হাতে যে দল তুলে দেয়া হয় তিনি তাদেরকেই ট্রেনিং করান। এ নিয়ে চাপা ক্ষোভ শুটারদের মধ্যে। তবে সাধারণ সম্পাদকের ভয়ে তারা মুখ খুলতে চান না। শুটিংয়ের ব্যর্থতা নিয়ে চাপা ক্ষোভ আছে বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনেও (বিওএ)। কিন্তু অপুর প্রভাবের কারণে সেভাবে কিছু বলতে চান না বিওএ’র কর্মকর্তারা। সারা বছর ট্রেনিংয়ের পরেও কেন শুটিংয়ে রেজাল্ট দিতে পারে না, তার জবাবদিহিও চাইতে পারেন না তারা। বাংলাদেশের কন্টিনজেন্টের সেফ দ্য মিশন হয়েও অপু ঠিক মতো সময় দিচ্ছেন না ভিলেজে। শোনা যাচ্ছে তার পরিবারের সঙ্গে ভিলেজের বাইরেই বেশি সময় দিচ্ছেন তিনি। তার প্রভাব দেখা গেলো প্যারিসের স্তাদা ফ্রান্সে। অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদকও অন্য অ্যাথলেটদের বঞ্চিত করে ইমরানকে সুযোগ দিচ্ছেন একের পর এক টুর্নামেন্টে। আর ইমরানের সঙ্গে কোনো কোচ না পাঠিয়ে অফিসিয়াল হিসেবে নিজেই ছুটছেন এক দেশ থেকে অন্যদেশে। অথচ এসব কর্মকর্তারা খেলার নিয়মই জানেন না ভালোভাবে। যেভাবে নিজেদের অজ্ঞতাকে প্রতিষ্ঠিত করতে সাংবাদিকের সঙ্গে যে আরচরণ করলেন অপু, মন্টু। তাদের কাছে এদেশের ক্রীড়াঙ্গন কিবা আশা করতে পারে?