ঢাকা, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, শুক্রবার, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিঃ

বাংলারজমিন

খুলনায় শিক্ষার্থী-পুলিশ দফায় দফায় সংঘর্ষ, পুলিশ সদস্য নিহত

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা থেকে
৩ আগস্ট ২০২৪, শনিবারmzamin

খুলনায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে মো. সুমন নামে এক পুলিশ কনস্টেবল নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় অর্ধশত শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ ও পুলিশের গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ শিক্ষার্থীসহ আহত হয়েছেন শতাধিক। এদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ ২৫ জন খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ও ২০ জনের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে ও অনেককে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।  গতকাল বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত খুলনার জিরো পয়েন্ট, গল্লামারী মোড় এবং বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এ সময় পুলিশ শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে অসংখ্য টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। শিক্ষার্থীরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকল ছুড়তে শ্ররু করে। এ সময় বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা পুলিশের একটি পিকআপে আগুন ধরিয়ে দেয়। গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত গুলিবিদ্ধ রাবার বুলেট, শটগানের ছররা ও টিয়ারশেলে ২৫ জনকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭ জনের অবস্থা গুরুতর। এ ঘটনায় পুলিশের বেশ কয়েকজন সদস্য আহত হয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী গতকাল দুপুর ২টার দিকে শিক্ষার্থীরা নিউমার্কেটের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। এ সময় পুলিশ তাদের বাধা দেয়ার চেষ্টা করলেও পরে পিছু হটে। এরপর তারা মিছিল সহকারে মজিদ সরণি হয়ে সোনাডাঙ্গা থানার দিকে যায়। এ সময় শিক্ষার্থীরা সোনাডাঙ্গা থানায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে, থানার জালানার কাঁচ ভাঙচুর করা হয়। তখন পুলিশ সদস্যরা থানার ভেতরে গিয়ে অবস্থান নেয়। পরে হরিণটানা থানায়ও ইটপাটকেল ও খালি বোতল নিক্ষেপ করে। এ সময় থানার প্রধান ফটক বন্ধ ছিল। শিক্ষার্থীরা বেলা সোয়া ৩টার দিকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পৌঁছানোর পর পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষ শুরু হয়। শিক্ষার্থীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ এবং পুলিশ তাদের লক্ষ্য করে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। প্রায় ২ ঘণ্টা ধরে চলে এই সংঘর্ষ। এ ছাড়া উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়াও হয়। এ সময় নগরীর গল্লামারী থেকে জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়ক রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। বিকাল ৪টার দিকে পুলিশ কিছুটা পিছু হটে। কিছু পুলিশ জিরো পয়েন্ট এলাকায় এবং কিছু পুলিশ গল্লামারী মোড়ে অবস্থান নেয়। পরে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশের পর শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে নগরীর শিববাড়ি মোড়ের দিকে যেতে চাইলে বিকাল ৬টায় গল্লামারী মোড়ে আরেক দফা সংঘর্ষ হয়। এ সময় পুলিশ মুহুর্মুহু টিয়ারশেল. রাবার বুলেট ও শটগানের গুলি ছোড়ে। এ সময় মাইকে শিক্ষার্থীদের জীবন বাঁচাতে জনগণের কাছে সহযোগিতা চায়। এতে সংঘর্ষ ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ে। এ সমম বিক্ষুব্ধ জনতা পুলিশের একটি পিকআপ ভ্যান জ্বালিয়ে দেয়। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সংঘর্ষের পর সিরাজুল ইসলাম, আবির, নীরব, নাবিল, মিজান, সৌরভ, আবদুল্লাহ, রায়েব সুলতানা রাইবা, রনি, শফিক, আফ্‌ফান, ফাইহাজ, রাফিদ, মুগ্ধ, ইউসুফ, জহীর এবং রুবিনা ইয়াসমিনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহতরা অধিকাংশ খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থী। তাদের শরীরে রাবার বুলেট ও শটগানের ছররা গুলি লেগেছে। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের পক্ষে আল শাহরিয়ার দাবি করেন, তাদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে নিরস্ত্র শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ অহেতুক টিয়ারশেল, রাবার বুলেট ও শটগানের গুলি ছুড়েছে। এতে অনেকে আহত হয়েছে। গুলিবিদ্ধ কয়েকজনকে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সঠিক সংখ্যা বলা কঠিন। তবে আহতের পরিমাণ শতাধিক হবে। নগরীর সোনাডাঙ্গা থানার ওসি মো. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, শিক্ষার্থীরা থানার গেটে কিছু ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেছিল। এতে কেউ আহত হয়নি। খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মোজাম্মেল হক জানান, শান্তিপূর্ণভাবে শিক্ষার্থীদের কর্মসূচি পালন করার কথা ছিল। কিন্তু তারা পুলিশের ওপর হামলা করেছে।

 

বাংলারজমিন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

বাংলারজমিন সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status