প্রথম পাতা
অফিস-আদালত খুলেছে, ঢাকার রাস্তায় ভিড়
স্টাফ রিপোর্টার
২৫ জুলাই ২০২৪, বৃহস্পতিবার
কারফিউয়ের পঞ্চম দিনে সময় কমিয়ে খুলে দেয়া হয়েছে অফিস-আদালত। আর কর্মব্যস্ত মানুষকে কাজের উদ্দেশ্যে বের হতে হয় বাসা থেকে। এ সময়ে ঢাকার রাস্তায় তৈরি হয় দীর্ঘ যানজট। সকাল ১১টা থেকে বিকাল ৩টার অফিস সময়ে বের হয়েছে ব্যক্তিগত যানও। এ সময় যানজটে তীব্র ভোগান্তিতে পড়তে হয় অফিসগামী মানুষকে। সকাল থেকেই রাজধানীর কাওরান বাজার, মিরপুর, কল্যাণপুর, টেকনিক্যাল, গাবতলী, আগারগাঁও, উড়োজাহাজ ক্রসিং, তেজগাঁও, মতিঝিল, বনানী, মহাখালী, সায়েদাবাদসহ বিভিন্ন রাস্তায় প্রচণ্ড যানজট দেখা গেছে। স্বল্পতা ছিল গণপরিবহনেরও। এতে তীব্র ভোগান্তি পোহাতে হয় অফিসগামী মানুষকে। অনেকে দুই ঘণ্টায়ও পৌঁছতে পারেনি অফিসে। অনেকে দপ্তরে পৌঁছাতে না পৌঁছাতেই আবার ছুটির সময় হয়ে গেছে। বেশ কদিন পর অফিস খোলায় সবাই বের হয়েছেন অফিসের উদ্দেশ্যে। কিন্তু গাড়ি স্বল্পতার সঙ্গে এবার যোগ হয়েছে মেট্রোরেল বন্ধের অসুবিধা। একইসঙ্গে বন্ধ ছিল এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েও। এ ছাড়াও রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে বসানো হয় চেকপোস্ট। সব মিলে যানজট লেগে যায় অনেক জায়গায়। অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে যাওয়া মহাখালীর সেতুভবনের কর্মকর্তারা কাজ করেছেন তাঁবু টেনে। বেসরকারি চাকরিজীবীদেরও ব্যস্ত সময় পার করতে হয় এদিন। ব্যাংকগুলোতে ছিল গ্রাহকদের দীর্ঘ লাইন।
জিয়া একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। থাকেন আজিমপুরে। সকাল ১০টায় বাসা থেকে বের হয়ে আধাঘণ্টা রাস্তায় দাঁড়িয়ে থেকেও কোনো যানবাহন পাননি। কোনো উপায় না পেয়ে শেষ পর্যন্ত রিকশায় রওনা হন মিরপুরে। অফিসে পৌঁছেন দুপুর ১টার সময়। জিয়া বলেন, কি অফিস করলাম? এত কষ্ট করে তিন ঘণ্টায় অফিসে এসেই তো ছুটির সময় হয়ে গেল। যে সময় রাস্তায় থাকলাম তার চেয়ে কম সময় অফিসে ছিলাম। কাজের কাজ তো কিছুই হলো না শুধু ভোগান্তিই হলো। আব্দুল্লাহ একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। নিজের গাড়িতে অফিসে যাতায়াত করেন। কিন্তু বুধবার তিনি রিকশায় দুই ঘণ্টায় গিয়েছেন অফিসে। আব্দুল্লাহ বলেন, এখনো পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ায় গাড়ি বের করার সাহস পাচ্ছি না। জানি না কবে আবার নির্ভয়ে যাতায়াত করতে পারবো। অফিস খুললেও আসলে তেমন কোনো কাজই হয়নি। সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন নাসরিন। নাসরিন বলেন, অফিসের কাজ তো কিছুই হয় নাই শুধু শুধু আমাদের কষ্ট হয়েছে। সকাল ১০টায় মিরপুরে এক নম্বর থেকে রওনা হয়ে দুপুর ১২টায় ফার্মগেট অফিসে গিয়ে পৌঁছলাম। আবার বেলা ৩টায় আসার সময় কোনো রকমে একটি বিআরটিসির ডাবল ডেকারে উঠে রওনা হলাম। তাহলে অফিস করলাম কতোক্ষণ? প্রিয়তি হক একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করেন। অফিস মতিঝিল আর বাসা মোহাম্মদপুরে। প্রিয়তি জানান, অফিসের চেয়ে রাস্তায় বেশি সময় কেটেছে তার। অফিসে তেমন একটা কাজ হয়নি। কারণ অফিসে সময় তো কম ছিল। ইবরাহীম বলেন, যানবাহন একে তো নেই। তারপর আবার রিকশাওয়ালা ভাড়া চাচ্ছে ইচ্ছামতো। ফার্মগেট থেকে মিরপুর ১০ নম্বরের ভাড়া নিলো দুশো টাকা। বিভিন্ন জায়গায় ব্যারিকেড থাকায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে। জানি না এমন পরিস্থিতি আর কতোদিন থাকবে।
রাজধানীর আগারগাঁও মোড়ে বাসের জন্য অপেক্ষায় থাকতে দেখা যায় কর্মজীবী যাত্রীদের। তাদেরই একজন আওয়াল মিয়া বলেন, শেওড়াপাড়া থেকে বের হয়েছি রিকশায়। পুরো রাস্তা জট লাগা দেখে হেঁটে এলাম আগারগাঁও, যাবো মতিঝিল। কিন্তু রাস্তায় গণপরিবহন নেই বললেই চলে। যাও ২/১ টা দেখা যাচ্ছে সামনে যানজটে আটকা, আবার যাত্রীতেও ভরা। বাধ্য হয়ে অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে।
ফার্মগেটে বাসের জন্য অপেক্ষায় থাকা শামসুল হক নামে এক যাত্রী বলেন, বাংলামোটর যাবো, কোনো কিছু পাচ্ছি না। এখানে শত শত মানুষ দাঁড়িয়ে, কিন্তু পর্যাপ্ত যানবাহন নেই। যাও আছে যানজটে আটকে যাচ্ছে।