বাংলারজমিন
সিরাজগঞ্জে যুদ্ধশিশু হিসেবে স্বীকৃতি পেলো মেরিনা
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি
১৬ জুলাই ২০২৪, মঙ্গলবার
দেশের প্রথম যুদ্ধশিশু হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পেয়েছেন সিরাজগঞ্জের মেরিনা খাতুন। এখন থেকে তিনি বাবার পরিচয় ছাড়াই সব ধরনের নাগরিক সুবিধা পাবেন। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পাশবিক নির্যাতনের ফলে জন্ম নেয়া মেরিনাকে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) থেকে এ স্বীকৃতি দেয়া হয়। তবে ভাতা না পাওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেন তিনি।
গতকাল সকালে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির চিঠি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মেরিনা। রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির চিঠি পেলেও তার দাবি, ভাতা সুবিধা পেলে পরিবার নিয়ে একটু ভালোভাবে চলতে পারবেন তিনি।
এর আগে, গত রোববার দুপুরে তাড়াশ উপজেলা পোস্ট মাস্টার মো. আইয়ুব আলীর কাছ থেকে চিঠিটি গ্রহণ করেছেন মেরিনা।
জানা গেছে, গত ২৫শে এপ্রিল জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) ৮৯তম সভায় তাড়াশ উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি পাওয়া বীরাঙ্গনা পচি বেওয়ার মেয়ে মেরিনা খাতুনকে যুদ্ধশিশু হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। যা জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা)’র উপ-পরিচালক (উন্নয়ন) প্রথম রঞ্জন ঘটক গত ৭ই জুলাই স্বাক্ষরিতপত্র প্রদানের মাধ্যমে মেরিনাকে অবহিত করা হয়েছে।
মেরিনা বলেন, আমি স্বীকৃতির চিঠি পেয়ে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি কৃতজ্ঞ। এই স্বীকৃতি পেতে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও যেসব সংবাদকর্মী আমার পাশে ছিলেন তাদের প্রতিও কৃতজ্ঞ। অনেক চেষ্টার পরে স্বীকৃতি পেলেও ভাতা পাইনি। আমার দাবি অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধাদের মতো আমাকেও ভাতা ও সব সুবিধা দেয়া হোক।
তিনি আরও বলেন, ৩ ছেলে ১ মেয়ে নিয়ে অভাবে সংসার চলছে আমার। অভাবের কারণে ছেলে ও মেয়েকে তেমন প্রতিষ্ঠিত করতে পারিনি। যুদ্ধশিশু হিসেবে সরকারের কাছে রাষ্ট্রীয় সম্মানী ভাতার দাবি জানাই।
তাড়াশ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কামান্ডার আরশেদুল ইসলাম বলেন, মেরিনা রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাওয়ায় উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। পাশাপাশি মেরিনাকে যুদ্ধশিশু হিসেবে রাষ্ট্রীয় সম্মানী ও ভাতা দেয়ারও দাবি জানাই।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় তাড়াশের ফাজিল আকন্দের বিধবা স্ত্রী পচি বেওয়াকে স্থানীয় কয়েকজন রাজাকার হানাদার বাহিনীর হাতে তুলে দেন। এরপর সেখানে হানাদার বাহিনীর সেনাদের কাছে পাশবিক নির্যাতনের শিকার হন তিনি। এতে করে তিনি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন এবং পরে মেরিনা খাতুনের জন্ম হয়। ২০২২ সালে ৮ই সেপ্টেম্বর বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত পচি বেওয়ার মেয়ে মেরিনা খাতুন সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে যুদ্ধশিশু হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি চেয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে একটি আবেদন পাঠান। আবেদনে মেরিনা উল্লেখ করেন, তার মাকে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় রাষ্ট্রীয়ভাবে ২০১৮ সালের ৪ঠা জুলাই বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। যার মুক্তিযোদ্ধা গেজেট নম্বর ২০৫। এরই পরিপ্রেক্ষিতে তিনি যুদ্ধশিশু হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি চান।