শরীর ও মন
বুড়িয়ে যাওয়ার সময়ে কীভাবে ভালো থাকবেন?
অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আবদুল হাই
১৬ জুলাই ২০২৪, মঙ্গলবারবয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের শরীরেরও কিছু পরিবর্তন হয়। কিছু পরিবর্তন প্রাকৃতিক বা স্বাভাবিক যেমন- চুল পেকে যাওয়া, ত্বকে কিছু বলিরেখা তৈরি হওয়া ইত্যাদি। ছোটখাটো পরিবর্তনগুলো মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য তেমন ক্ষতিকর কিছু নয়। কিন্তু কিছু কিছু পরিবর্তন মানুষকে সহজেই বার্ধক্যজনিত কিছু রোগে আক্রান্ত করে এবং স্বাভাবিক জীবনকে ব্যাহত করে। কিছু অভ্যাস, কিছু টিপ্স, জীবন ধারার কিছু পরিবর্তন, আপনার জীবনকে বয়স বাড়ার যন্ত্রণা থেকে অনেকটাই মুক্তি দিতে পারে। মনে রাখতে হবে যত কম বয়সে আপনি বুড়িয়ে যাওয়ার বিরুদ্ধে সংগ্রাম শুরু করবেন, ততই আপনি সফলতা বেশি পাবেন। বয়স ৪০ পেরোবার আগেই সতর্কতা অবলম্বন প্রয়োজন।
বুড়িয়ে যাওয়াকে কীভাবে মোকাবিলা করবেন:
১. শরীরের ওজন: বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের পরিবর্তিত মেটাবলিজমের কারণে ওজন বাড়ার ও একটা প্রবণতা থাকে। বয়স্ক মানুষের জীবনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো- স্বাস্থ্যসম্মত একটি ওজন বজায় রাখা। সারা জীবন স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা সামগ্রিক স্বাস্থ্যের একটি ভালো লক্ষণ। মনে রাখতে হবে, শরীরের অতিরিক্ত ওজন, আমাদের বুড়িয়ে যাওয়াকে ত্বরান্বিত করে এবং হৃদরোগ, ডায়াবেটিস এবং আর্থ্রাইটিসের মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
২. ভারস্যম্যতা ও গতিশীলতা: বয়স হলে মানুষের চলাফেরা ও শারীরিক অঙ্গভঙ্গিতে পরিবর্তন আসে। অনেকেরই এগুলো সুষম অবস্থায় থাকে না। কেউ কেউ চলাফেরা করতে গিয়ে ভারসাম্য হারিয়ে দুর্ঘটনার সম্মুখীন হন। নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ এবং মাংসপেশির শক্তি বৃদ্ধির জন্য নির্দিষ্ট কিছু ব্যায়াম এখনো বয়সী মানুষকে সক্ষম করে তুলতে পারে।
৩. ভালো মানসিক স্বাস্থ্য: বয়স বাড়লে অনেক মানুষেরই মানসিক শক্তি কমে যায়, কাজে কর্মে উৎসাহ থাকে না। একটি ভালো স্বাস্থ্যকর জীবনের অন্যতম লক্ষণ হচ্ছে- ভালো মানসিক স্বাস্থ্য। তাই মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখুন; যার জন্য প্রয়োজন ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থাকা, সামাজিকভাবে সংযুক্ত থাকা এবং কার্যকরভাবে স্ট্রেস পরিচালনা করা। মনে রাখতে হবে ভালো মানসিক স্বাস্থ্য মানুষের স্মরণশক্তি ও চিন্তাশক্তি বজায় রাখতে সাহায্য করে ।
৪. ঘুম: নানা কারণেই বয়স্ক মানুষদের ঘুমের ধরন পাল্টে যায়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য ঘুম গুরুত্বপূর্ণ। প্রতি রাতে ধারাবাহিকভাবে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম হৃদরোগ, ডায়াবেটিস এবং মস্তিষ্কের বুদ্ধি ভিত্তিক কার্যক্ষমতা হ্রাসের মতো দীর্ঘস্থায়ী অবস্থার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
৫. ভালো পুষ্টি: কোষ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেকেরই খাদ্য অভ্যাসে পরিবর্তন ঘটে। এ ধরনের পরিবর্তনের কারণে বেশির ভাগেরই পুষ্টির অভাব হয়। মনে রাখতে হবে বয়স্ক মানুষের শারীরিক সক্ষমতা মাংসপেশির দঢ়তা ধরে রাখার জন্য প্রোটিনসহ ভালো খাবারের যথেষ্ট প্রয়োজন। তাই অবশ্যই একজন বয়সের সঙ্গে সঙ্গে একটি সুষম এবং পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা উচিত। প্রতিদিনের ডায়েট এর মধ্যে থাকা উচিত- বিভিন্ন ধরনের ফল, সবজি, গোটা শস্য, চর্বিহীন প্রোটিন এবং স্বাস্থ্যকর চর্বি। মনে রাখতে হবে, পর্যাপ্ত পুষ্টি ভালো শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করতে পারে।
৬. নিয়মিত মেডিকেল চেকআপ: নির্দিষ্ট সময় পর পর মেডিকেল চেকআপ বয়স্ক মানুষদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এতে করে যেকোনো সম্ভাব্য সমস্যা তাড়াতাড়ি শনাক্ত করা এবং প্রয়োজনে উপযুক্ত চিকিৎসা গ্রহণ সম্ভবপর হয়। বয়স বেড়ে যাওয়া ও জরাগ্রস্ত হওয়া একই জিনিস নয়। একদম বুড়ো বয়সেও ভালো থাকা যায়। শুধু প্রয়োজন বিজ্ঞানসম্মতভাবে ভালো থাকার চেষ্টা করা। সবাই ভালো থাকুন।
লেখক: (চর্ম, যৌন ও এলার্জি রোগ বিশেষজ্ঞ), জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
চেম্বার-১২, স্টেডিয়াম মার্কেট, সিলেট। ফোন- ০১৭১২-২৯১৮৮৭