ঢাকা, ২৫ মার্চ ২০২৫, মঙ্গলবার, ১১ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৪ রমজান ১৪৪৬ হিঃ

প্রথম পাতা

অর্থনৈতিক সংকট নিরসনে আশার কোনো আলো নেই

অর্থনৈতিক রিপোর্টার
১৪ জুলাই ২০২৪, রবিবারmzamin

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, দেশের ব্যাংকিং খাত এখন ব্যাপক দুরবস্থার মধ্যে রয়েছে। ব্যাংক খাতে টাকা নেই, ডলারও নেই। সংকট নিরসনে আশার কোনো আলো নেই। আগে বলা হলো, নির্বাচনের পর নতুন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। নির্বাচন শেষে তেমন কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি। আবার নতুন বাজেটেও তেমন উদ্যোগ নাই। মনে হচ্ছে, সরকার সমস্যাগুলো জিইয়ে রাখছে। যদিও কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, তবে সেগুলো আবার সংস্কারের জন্য যথাযথ নয়। তাই ব্যাংকিং খাতের অনিয়ম-দুর্নীতি রোধে সরকারকে শ্বেতপত্র প্রকাশ করা দরকার।

শনিবার ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত ‘বাংলাদেশে ব্যাংকিং খাতে দুরবস্থার কারণ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি মোহাম্মদ রেফায়েত উল্লাহ মীরধা, সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম।

আহসান এইচ মনসুর বলেন, ব্যাংক খাত না পারছে সরকারকে কিছু দিতে, আর না পারছে নিজেকে রক্ষা করতে। অর্থাৎ আমানতকারীদের নিশ্চয়তা দিতে পারছে না। দেশের ব্যাংক খাত একেবারে শুরু থেকে চড়াই-উতরাই পেরিয়ে এসেছে। কখনো ব্যাংক খাত পুরো সফলতার মধ্যে ছিল না বলেও জানান তিনি। তিনি জানান, আর্থিক খাত ঊর্ধ্বমুখী করার ব্যাপারে আমরা শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়েছি। ভারতের স্টক মার্কেট কোথায়, আর আমরা কোথায়? তিনি বলেন, গত কয়েক বছর ধরেই অস্বস্তিতে আছে দেশের ব্যাংকিং খাত। যেখানে টাকার সঞ্চয় হচ্ছে না। বড় একটা অংশ দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে, পাচার হয়ে যাচ্ছে। ফলে অর্থনীতির স্বাস্থ্য খারাপ হয়ে যাচ্ছে। অর্থনীতিতে ক্রমাগত চাপ বাড়ছে। এই চাপ আর ভার বহনের সক্ষমতা ব্যাংকিং খাতের নেই। এর ফলে বিনিয়োগ সংকটে ভুগছেন ব্যবসায়ীরা। আসছে না নতুন বিনিয়োগ, হচ্ছে না নতুন কর্মসংস্থান। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে খেলাপি ঋণ দেখানো হচ্ছে এখন ১১ শতাংশ। বাস্তবে খেলাপি বা মন্দ ঋণ ২৫ শতাংশ। এভাবে আর্থিক খাত বেশিদিন চলতে পারে না। তদারকির অভাবে আমাদের মুদ্রাবাজার হাতছাড়া হয়েছে, মূল্যস্ফীতিও আমাদের হাতের নাগালের বাইরে চলে গেছে। 

আর্থিক খাতকে ক্লিনিং-এর (পরিষ্কার) জন্য সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংককে উদ্যোগ নিতে হবে উল্লেখ করে ড. মনসুর বলেন, ব্যাংক খাতের সমস্যাগুলো সমাধান না করে জিইয়ে রাখা হচ্ছে। এর মাধ্যমে ঘরের দুর্গন্ধযুক্ত ময়লা ঝাড়ু দিয়ে কার্পেটের নিচে রেখে দিচ্ছে। এতে আসলে দুর্গন্ধ দূর হয় না, কোনো না কোনো একদিন আবারো দুর্গন্ধ ছড়াবে।

তিনি বলেন, টাকা ছাপিয়ে ‘অচল ব্যাংক’ টিকিয়ে রাখার দরকার নেই। ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোকে ‘রক্ষার নামে’ টাকা ছাপানো অব্যাহত রাখা হলেও মূল্যস্ফীতি বাড়বে। একইসঙ্গে সরকারকে টাকা ছাপিয়ে ঋণ দিলে উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে না। তাই মূল্যস্ফীতির লাগাম টানার বৃহত্তর স্বার্থে এখন টাকা ছাপানো বন্ধ করতেই হবে।

আহসান এইচ মনসুর বলেন, অন্য দেশ থেকে ধার করে এখন রিজার্ভ বাড়ানো হচ্ছে। এভাবে বেশিদিন রিজার্ভ বাড়ানো যাবে না। রপ্তানি আয়, প্রবাসী আয় ও অর্থপাচার বন্ধের মতো টেকসই পদ্ধতি ব্যবহার করে রিজার্ভ বাড়াতে হবে। প্রবাসী আয়ে যে প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে, তা বন্ধ করে দিতে হবে। কারণ, ডলারের দাম বাজারভিত্তিক হয়ে গেছে। এসব প্রণোদনা খাচ্ছে দুবাইয়ের কিছু প্রতিষ্ঠান, যার সঙ্গে যুক্ত স্বার্থান্বেষী মহল।

আহসান এইচ মনসুর বলেন, সাধারণ মানুষ আমানত নিয়ে নিশ্চয়তা পাচ্ছে না, ব্যবসায়ীরা বেশি সুদ দিয়েও ঋণ পাচ্ছে না। টাকা বাইরে চলে গেলে তো সঞ্চয় থাকবে না। রাজস্ব খাতে সরকারের ব্যাপক ব্যর্থতা। সরকারের সামর্থ্য সরকার নিজেই হারিয়ে ফেলেছে। ধার করার সক্ষমতাও নেই। ব্যাংক খাতে টাকা নেই। পাশাপাশি ডলারও নেই। তিনি বলেন, দেশের আর্থিক খাতের তথ্য সবচেয়ে বেশি লুকানো হচ্ছে। তবে এই খাতের তথ্য বেশি প্রকাশ্যে রাখা উচিত ছিল।

ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, এখন ঋণ আদায় না করেই ঋণের সুদকে আয় দেখিয়ে মুনাফা দেখাচ্ছে ব্যাংক। সেই মুনাফার অর্থ থেকে লভ্যাংশ দিচ্ছে। সরকারও কর পাচ্ছে। বাস্তবে ব্যাংকের কোনো আয়ই হয়নি। আমানতের অর্থ লুটে খাওয়া হচ্ছে। এর মানে ঘরের থালাবাটি বেচে কোর্মা-পোলাও খাওয়া হচ্ছে। এভাবে আর কতোদিন ব্যাংক চলবে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, আমানত শেষ হয়ে যাবে কিন্তু গ্রাহকের অর্থ আর ফেরত দিতে পারবে না।
দেশের কর রাজস্ব পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এই অর্থনীতিবিদ। বলেন, পদ্ধতিগত জটিলতার কারণে দেশের কর রাজস্ব আয় বাড়ানো যাচ্ছে না। এই খাতে যথেষ্ট হয়রানি রয়েছে। অথচ রাজস্ব আয় বাড়ানোর অনেক সুযোগ আছে। সেবার মান বৃদ্ধির মাধ্যমে কর আদায় বাড়াতে হবে। পাবলিক সার্ভিস বাড়াতে পারলে,  সেবার গুণগত মানে মানুষ সন্তুষ্ট হলে তখন আর কর প্রদানে মানুষের আপত্তি থাকবে না।

ব্যাংক খাত নিয়ে প্রবন্ধে বলা হয়, সরকার পদ্মা সেতুসহ বিভিন্ন অবকাঠমো তৈরি করে যে প্রশংসা অর্জন করেছে, তা আজ ম্লান হয়ে যাচ্ছে উচ্চ মূল্যস্ফীতি, খেলাপি ঋণ ও আর্থিক কেলেঙ্কারির কারণে। আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রণ সংস্থা হিসেবে এ দায় বাংলাদেশ ব্যাংকের ওপর বর্তায়। এসব বিষয়ে এখনই যদি উদ্যোগ না নেয়া হয়, তাহলে বড় ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে দেশের ব্যাংক খাতে। 

প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়, পর্যাপ্ত ডলার না থাকার কারণে জ্বালানি খাতসহ বিভিন্ন খাতের বিল পরিশোধ করতে পারছে না সরকার। যদি স্বাস্থ্য ভালো না থাকে তাহলে, ভার বহন করা যায় না। ব্যাংক খাতের দুর্বলতার কারণে এখন ব্যাংক ব্যক্তি খাতকেও ঋণ দিতে পারছে না, আবার সরকারকেও ঋণ দিতে পারছে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার কাজে ব্যর্থ হয়েছে। আর যথাসময়ে সঠিক পদক্ষেপ না নেয়ায় মূল্যস্ফীতি নিয়ে সবাই এখন অস্বস্তিতে আছে।

প্রবন্ধে বলা হয়, এমন পরিস্থিতিতে তথ্য প্রকাশ সীমিত করে ফেলার পাশাপাশি সাংবাদিকদের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে প্রবেশ বন্ধ করা হয়েছে। আর্থিক খাতের প্রকৃত অবস্থা কেউ জানতে পারছে না।
 

পাঠকের মতামত

দেশের বৃহত্তর স্বার্থে স্যারের এই গুরুত্ব পূর্ণ মতামত আমলে নিয়ে যত দ্রুতসম্ভব কর্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিৎ বলে আমি মনে করি।

Md. shoil iqbal khon
১৫ জুলাই ২০২৪, সোমবার, ১:৪৭ অপরাহ্ন

এই গুলা কখনো শুনবে না।

Ashraf Chowdhury
১৫ জুলাই ২০২৪, সোমবার, ১:২০ অপরাহ্ন

দেশের বৃহত্তর স্বার্থে স্যারের এই গুরুত্ব পূর্ণ মতামত আমলে নিয়ে যত দ্রুতসম্ভব কর্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিৎ বলে আমি মনে করি।

মুনির আহমদ
১৫ জুলাই ২০২৪, সোমবার, ৭:২০ পূর্বাহ্ন

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status