প্রথম পাতা
৫ মন্ত্রীর রুদ্ধদ্বার বৈঠক
মোকাবিলার কৌশল নিয়ে আলোচনা
স্টাফ রিপোর্টার
৯ জুলাই ২০২৪, মঙ্গলবারদুই ইস্যু নিয়ে চলমান আন্দোলনের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করতে রোববার রাতেই মন্ত্রীদের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। ওই নির্দেশনার আলোকে গতকাল ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে রুদ্ধদ্বার এক বৈঠকে মিলিত হন সরকারের পাঁচ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী। একঘণ্টার সেই বৈঠক শেষে তাৎক্ষণিকভাবে সাংবাদিকদের সামনে কথা বলেন দুই মন্ত্রী।
তবে বৈঠকে আলোচনার বিস্তারিত কিছু তারা জানাননি। এর আগে দুপুর সাড়ে ১২টায় সংবাদ সম্মেলন করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় চলমান কোটা আন্দোলন ও শিক্ষক আন্দোলনের প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনের পর দুপুর সোয়া ১টায় দপ্তরকক্ষে যান আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। সেখানে আগে থেকে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এবং তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত। তারা দুইজন সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন না। দপ্তরকক্ষে তাদের দু’জনকে নিয়ে বৈঠকে বসেন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
দুপুর ১টা ৩২ মিনিটে কার্যালয়ে আসেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। একই সময়ে আসেন শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বেগম শামসুন্নাহার। তারা দু’জনও যোগ দেন বৈঠকে। দলীয় দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়াও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। একঘণ্টার বৈঠক শেষে দুপুর ২টা ১২ মিনিটে দপ্তরকক্ষ ত্যাগ করেন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা। প্রথমে বের হয়ে আসেন ওবায়দুল কাদের। তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি। ওবায়দুল কাদেরের পর বেরিয়ে আসেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনিও গণমাধ্যমের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি। এরপর আসেন শিক্ষামন্ত্রী ও তথ্য প্রতিমন্ত্রী। তারা কথা বলেন কিন্তু বৈঠকের বিষয়ে পরিষ্কার করে কিছু জানাতে রাজি হননি।
তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, সামগ্রিক বিষয় নিয়ে কথা বলেছি। রাজনৈতিক-সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে কথা বলেছি। এটা রুটিন একটা বিষয়। কোটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে কি না? তিনি বলেন, বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। নির্দিষ্ট একটা বা দুইটা বিষয় নিয়ে নয়। সামগ্রিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমাদের আজকের বসার বিষয়টা আপনারা জেনেছেন। কিন্তু এই বসাটা নিয়মিত হয়, এটা আমরা নিয়মিত বসি। বিভিন্ন জায়গায় বসা হয়। এরপর শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। এই মুহূর্তে গণমাধ্যমের সঙ্গে আলোচনা করার মতো বিষয় নয় সেগুলো। কোটা আন্দোলন প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আদালতে যে বিষয়টি বিচারাধীন আছে, আমরা এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করবো না। সেটি আদালতের বিষয়। আদালত থেকে যেভাবে সিদ্ধান্ত আসবে। আমাদের অবস্থান হচ্ছে, যেহেতু আদালতে বিষয়টি বিচারাধীন আছে, সে বিষয়ে আমরা মন্তব্য করবো না। অপেক্ষা করতে হবে। সরকার তো আপিল করেছে। সুতরাং আমি এ বিষয়ে মন্তব্য করবো না। তবে আলোচনার একটা ইস্যু নিয়ে মানবজমিন-এর সঙ্গে কথা বলেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেন, কোটা বিরোধী যে আন্দোলন চলছে তার সিদ্ধান্ত দেবেন আদালত। আমাদের এ বিষয়ে এখতিয়ার নেই। আমি যতদূর জেনেছি, কোটা বিরোধী আন্দোলন যারা করছেন তারা হাইকোর্টে মামলাটার যখন শুনানি হয় তখন কোনো আইনজীবী দেননি। আপিল বিভাগে যখন মামলাটি গেছে, শুনানি শুরু হয়নি। শুনানি শুরু হতে অনেক দেরি আছে। রায় এখনও বের হয়নি। আইনমন্ত্রী বলেন, এটা নিয়ে রাস্তায় চিল্লাচিল্লি করলে তো হবে না। তাদের যদি কোনো বক্তব্য থাকে এবং আদালতের কাছে গিয়ে যদি সেই বক্তব্য উপস্থাপন করা হয় আদালত নিশ্চয় একটি সুচিন্তিত সুরাহা দেবেন। আমার বক্তব্য হচ্ছে-তারা আদালতে যাচ্ছে না কেন? তাদের বক্তব্য আদালতে উপস্থাপন করা উচিত। দলীয় কার্যালয়ে কী নিয়ে আলোচনা হয়েছে এমন প্রশ্নে তিনি কোনো উত্তর দেননি। নামপ্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের এক নেতা মানবজমিনকে বলেন, মূলত দলীয় কার্যালয়ের রুদ্ধদ্বার বৈঠকে সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল এবং সর্বজনীন পেনশন স্কিম প্রত্যাহারের দাবিতে চলমান আন্দোলনের সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
বিএনপি-জামায়াত এই আন্দোলনে নিজেদের সম্পৃক্ত করেছে বলে মনে করছে আওয়ামী লীগ। তাই এই আন্দোলন ঘিরে সরকার বিরোধী যে কোনো তৎপরতা চালানোর সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করেন তারা। এই দুই ইস্যুকে কেন্দ্র করে যে কোনো ধরনের অপপ্রচার ও গুজব মোকাবিলা করতে তথ্য প্রতিমন্ত্রী বৈঠকে আলোচনা করেন। অন্যদিকে শিক্ষক নেতৃবৃন্দ ও ছাত্র সমাজের সঙ্গে কীভাবে যোগাযোগ রক্ষা করে পরিস্থিতি সামাল দেয়া যায় সে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন, শিক্ষামন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী। অন্যদিকে কোটার বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন থাকায় সেটা নিয়ে বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা করেন আইনমন্ত্রী। সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকে সুনির্দিষ্ট কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। তবে আন্দোলনের সার্বিক পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।