রাজনীতি
চুক্তি বাতিলের দাবিতে শুক্রবার ইসলামী আন্দোলনের বিক্ষোভ
স্টাফ রিপোর্টার
(৫ মাস আগে) ৪ জুলাই ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ৮:৪৯ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১১:১১ পূর্বাহ্ন
ভারতের সঙ্গে সকল চুক্তি বাতিল এবং চিহ্নিত দুর্নীতিবাজদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে আগামী শুক্রবার সারাদেশে জেলা ও মহানগরে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। এদিন ঢাকার বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটে সংগঠনের ঢাকা জেলা দক্ষিণের বিক্ষোভ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে। বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবের ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের উদ্যোগে জাতীয় সংকট নিরসনে জাতীয় সংলাপে রাজনৈতিক দল, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক ও বিভিন্ন পেশাজীবী প্রতিনিধিদের সঙ্গে জাতীয় সংলাপে দলটির আমীর চরমোনাই পীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের সৃষ্ট নানাবিধ সংকটের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ ভারত সফর সংকটকে আরও ঘণীভূত করেছে। যে চুক্তিগুলো করা হয়েছে, তাতে কোনো আওয়ামী লীগারও বাংলাদেশের স্বার্থ দেখাতে পারছে না। সংকটের মূলে ডামি নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত ডামি সরকার এবং সরকারকে সহযোগিতাকারী ভারত। সকল দেশপ্রেমিক ঈমানদার জনতা ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন গড়ে তুললে সরকার টিকে থাকতে পারবে না। তিনি বলেন, এত দল, এত জনগণ থাকা সত্ত্বেও আন্দোলন সফল হচ্ছে না। দেশবিরোধী সমঝোতা স্মারক চুক্তি বাংলাদেশের জনগণের কোনো কল্যাণ নেই। স্ব-ঘোষিত প্রধানমন্ত্রী নিজেদের কল্যাণের জন্য সব করছে। নিজেদের ব্যক্তি স্বার্থ ভুলে দেশ, ইসলাম ও মানবতার কল্যাণে ঐক্যবদ্ধ হলে এ আন্দোলনকে রুখে দেয়ার সাধ্য কারো নেই।
চরমোনাই পীর বলেন, ভারতের সঙ্গে কানেক্টিভিটির নামে যা করা হয়েছে, তার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ভাষায় পরিস্কার হয়েছে; ‘বাজার-টাজার করতে যাওয়া ও ভারতে চিকিৎসা নিতে যাওয়া’ এর মূল লক্ষ্য। একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশের স্বকীয়তাবোধ আছে এমন কারো পক্ষে ‘বাজার-টাজার করতে যাওয়া ও চিকিৎসা নিতে যাওয়া’র জন্য অন্য দেশের সাথে চুক্তি করা সম্ভব না। তিনি বলেন, বিদ্যুৎখাতের পরিকল্পনাহীনতা, স্বেচ্ছাচারিতা, দুর্নীতি ও খামখেয়ালিপনা সর্বশেষ দেখা গেলো নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আনার চুক্তি থেকে। ভারতের গ্রিড ব্যবহার, ভারতকে দুই ধরণের মাসুল দিয়ে আনা, এই বিদ্যুৎ বিদ্যুৎ খাতকে অনিরাপদ ও ভারতনির্ভর করবে। কম দামের যুক্তি দিয়ে বিদ্যুৎ আনা হচ্ছে, অথচ সবার আপত্তি উপেক্ষা করে দেশে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছিলো। কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের নামে যে যুক্তিতে, যেভাবে ও যে পরিমাণ ক্যাপাসিটি চার্জ দেয়া হয় তাকে মগের মুল্লুকি ছাড়া আর কিছু বলার নাই। সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেন, এ সময়ে এসে ট্রানজিট আদতে কোনো রাজনৈতিক ইস্যুই হওয়ার কথা না। কারণ সারাবিশ্বেই উইন-উইন সিচুয়েশনে এটা হচ্ছে। কিন্তু এই সরকার ভারতকে রেল ট্রানজিট দিয়েছে নিজেদের অবৈধ ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার পেছনে ভারতের অবদানের প্রতিদান হিসেবে।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর বলেন, নেপাল-ভুটানের সাথে আমাদের বহুল কাঙ্ক্ষিত ট্রানজিট না পাওয়া, তিস্তা, গঙ্গার পানি নিয়ে কোনো অগ্রগতি না হওয়া, সীমান্তে মানুষ হত্যা বন্ধ না হওয়া, সেভেন সিস্টারে আমাদের বাণিজ্য সম্ভবনা নষ্ট করা এবং নিজেদের নিরাপত্তা ঝুঁকি, কৌশলগত ভূরাজনীতির নানা জটিলতা সত্ত্বেও যেভাবে ট্রানজিট দেয়া হয়েছে তাতে বাংলাদেশের স্বাধীন সত্তা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। কারণ, ভারত সরকার আন্তর্জাতিক চুক্তির ক্ষেত্রে পশ্চিমবাংলাকেও বাংলাদেশের চেয়ে বেশি বিবেচনায় রাখে। বর্তমান সরকার স্বাধীন-স্বার্বভৌম বাংলাদেশকে ভারতের অঙ্গরাজ্য পশ্চিমবাংলার চেয়েও গুরুত্বহীন করে ফেলেছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, সরকার ভারতকে ট্রানজিটের নামে করিডোর দিয়ে দেশকে বিপদে ফেলে দিয়েছে। নেপাল ও ভুটানকে ট্রানজিট দিয়ে বলে সরকার যা বলছে তা ভুয়া। ভারতের সাথে অমীমাংসিত চুক্তির সমাধান না করে নতুন করে করিডোর বাংলাদেশের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ। দেশের চিকিৎসাসেবা উন্নত না করে ভারতের সাথে ই-ভিসা চালু করে ভারতে চিকিৎসার জন্য জনগণকে উদ্ধুদ্ধকরণ দেশপ্রেমিকের পরিচয় নয়।
ভারতের সাথে দাসখতের চুক্তিগুলো জনসম্মুখে প্রকাশের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, এগুলো জনতার সামনে প্রকাশ করতে বাধা কোথায়? সরকারের নিযুক্ত সেনা প্রধান, পুলিশ প্রধান, প্রধান বিচারপতি, এনবিআরের চেয়ারম্যান সবাই দুর্নীতিবাজ। তাহলে এই সরকারও দুর্নীতিগ্রস্ত সরকার তাতে কোন সন্দেহ নেই। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সংলাপে আরও বক্তব্য রাখেন ইসলামী আন্দোলনের সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম শায়খে চরমোনাই, মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড সাইফুল হক, গণফোরাম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী প্রমুখ।