ঢাকা, ৫ জুলাই ২০২৪, শুক্রবার, ২১ আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৮ জিলহজ্জ ১৪৪৫ হিঃ

প্রথম পাতা

দীর্ঘমেয়াদি অচলাবস্থার শঙ্কা

প্রত্যয় স্কিম নিয়ে দুই পক্ষই অনড়

স্টাফ রিপোর্টার
৩ জুলাই ২০২৪, বুধবারmzamin

আট বছর পর আবারো অচলায়তনের শঙ্কা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে। সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা-  প্রত্যয়কে ‘বৈষম্যমূলক’ আখ্যা দিয়ে অবিলম্বে এ প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহারের দাবিতে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করছেন শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীরা। গত মার্চে প্রত্যয় স্কিমের ঘোষণা আসার পর থেকে কর্মবিরতি, গণস্বাক্ষর, প্রতিবাদলিপি, অবস্থানসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছেন তারা। এরই মধ্যে নতুন অর্থবছর থেকে কার্যকর হয়েছে প্রত্যয় স্কিম। সেই দিন থেকেই লাগাতার কর্মবিরতি শুরু করেন শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীরা। আন্দোলনে বন্ধ রয়েছে ক্লাস, পরীক্ষাসহ সকল একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম। যার কারণে বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। জরুরি প্রয়োজনে সংগ্রহ করা যাচ্ছে না সার্টিফিকেট, মার্কশিট। বন্ধ রয়েছে লাইব্রেরি ও সেমিনারের মতো গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গগুলো। অন্যদিকে প্রত্যয় স্কিম নিয়ে শিক্ষকদের আন্দোলনকে অযৌক্তিক বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।

বিজ্ঞাপন
চলমান আন্দোলনের মধ্যে প্রত্যয় স্কিম নিয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। সেখানে দাবি করা হয়, প্রত্যয় স্কিম অত্যন্ত টেকসই ও কার্যকরী ব্যবস্থা। যেটি পার্শ্ববর্তী ভারতে ২০০৪ সালে শুরু হয়েছে। ব্যাখ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ৬৫ বছরে অবসর সুবিধা, পদোন্নতির ক্ষেত্রে সার্ভিস প্রটেকশন ও পে- প্রটেকশন সুবিধা, পিআরএল ছুটি বহালের কথাও জানানো হয়। কিন্তু শিক্ষক নেতারা মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যা প্রত্যাখ্যান করে বলেন, এর মাধ্যমে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে তাদের। এ ছাড়াও এ ব্যবস্থা শিক্ষকদের জন্য লজ্জাজনক। এর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে পঙ্গু করে দেয়ার পাঁয়তারা করা হচ্ছে। কারণ সুযোগ-সুবিধা কমিয়ে দিলে মেধাবীরা আর শিক্ষকতা পেশায় আসবে না। শিক্ষক ও কর্মচারী নেতারা মনে করেন, এ আন্দোলন তাদের বাঁচা-মরার আন্দোলন। তাই দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা ক্লাসে ফিরবেন না। এ ছাড়াও অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যার প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির প্রফেসর ড. নিজামুল হক ভূঁইয়া বলেন, আমরা এতদিন বিবৃতি-স্মারকলিপি দিয়েছি, সংবাদ সম্মেলন করেছি। সাড়ে তিন মাস আগে যদি আমরা জানতাম বয়সসীমা ঠিকই আছে তাহলে শিক্ষকরা এত ক্ষুব্ধ হতেন না। এখন আন্দোলন স্তিমিত করার জন্য একটা ব্যবস্থা করছে। তিনি বলেন, সরকারি কর্মকর্তাদের আমরা বিশ্বাস করি না। ২০১৫ সালে যেভাবে তারা আমাদের রাস্তায় নামিয়েছে। সুপার গ্রেড আমাদের দেয়নি। এখনো সে রকম পরিস্থিতি তৈরি করছে। তবে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য চালু হতে যাওয়া ‘সেবক’ স্কিম যদি সর্বজনীন হয় অর্থাৎ সবাইকে সেখানে অন্তর্ভুক্ত করা হয় তবে শিক্ষকরা তা স্বাগত জানাবে। এর আগ পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। 

দেশের বয়স্ক জনগোষ্ঠীকে টেকসই ও সুসংগঠিত সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের আওতাভুক্ত করার লক্ষ্যে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা চালু করে সরকার। এর আওতায় ইতিমধ্যে প্রবাস, প্রগতি, সুরক্ষা, সমতা নামে চারটি পেনশন স্কিম চালু হয়েছে। নতুনভাবে যুক্ত হয়েছে প্রত্যয়। যেটি স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থা এবং তাদের অধীন অঙ্গ-প্রতিষ্ঠানে যোগদানকারী নতুন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ক্ষেত্রে কার্যকর হয়েছে। ১লা জুলাই থেকে এসব প্রতিষ্ঠানে যোগদানকৃত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ক্ষেত্রে এ স্কিম কার্যকর হবে। এ ছাড়া সেবক নামে আরেকটি স্কিম চালুর কথা রয়েছে আগামী বছরের জুলাই থেকে। যেখানে সরকারের রাজস্ব খাতভুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অন্তর্ভুক্ত থাকবেন। 

এদিকে প্রত্যয় স্কিমের প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ার পর থেকে বিরোধিতা করে আসছেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীরা। তাদের দাবি নতুন পদ্ধতিতে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন তারা। বৈষম্যমূলক এ স্কিমের মাধ্যমে শিক্ষকদের মর্যাদাহানি করা হচ্ছে। তাই তারা কোনোভাবেই এ স্কিম মানেন না। আন্দোলনকারীরা প্রত্যয় স্কিমকে লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সঙ্গেও তুলনা করেছেন। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের ডাকে দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বাত্মক কর্মবিরতি কর্মসূচি। এ কর্মসূচির অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয়ভাবে গতকালও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মবিরতি পালন করেছেন শিক্ষকরা। যেখানে অংশ নেন সব মতাদর্শের শিক্ষকরা। সেখান থেকে দাবি আদায়ে নিজেদের অনড় অবস্থানের কথা জানান শিক্ষক নেতারা। তারা বলেন, কোনোভাবেই বৈষম্যমূলক এ পেনশন ব্যবস্থা মেনে নেয়া হবে না। যতদিন পর্যন্ত তাদের দাবি মেনে নেয়া না হবে ততদিন পর্যন্ত তারা ক্লাসে ফিরবেন না। অন্যদিকে কর্মকর্তা, কর্মচারীরাও পৃথক পৃথক কর্মসূচি পালন করেছেন। সেখান থেকে তারা ঘোষণা দেন দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা কোনো ধরনের প্রশাসনিক কার্যক্রমে অংশ নেবেন না। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কলা ভবনের প্রধান ফটকের সামনে কর্মবিরতি পালন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। এসময় সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. জিনাত হুদা বলেন, এই আন্দোলন শুধু আমাদের আন্দোলন না, এই আন্দোলন নতুন প্রজন্মের জন্য, আগামী দিনের শিক্ষার্থীদের জন্য। এই আন্দোলন আমাদের জন্য বাঁচা-মরার লড়াই। এই লড়াইয়ে আমরা বিজয়ী হয়েই ক্লাসে ফিরবো।

তিনি বলেন, অনেকে বলছে আমরা নাকি শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে আন্দোলন করছি। কিন্তু আমরা শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে আন্দোলন করছি না, বরং আজকে আমাদেরই জিম্মি করে রাখা হয়েছে। আমাদের ওপর অন্যায় দাবি চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। আমরা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এই সর্বাত্মক কর্মবিরতি চালিয়ে যাবো। কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে শিক্ষক সমিতির সাবেক সহ-সভাপতি ও সাদা দলের আহ্বায়ক প্রফেসর ড. লুৎফর রহমান বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের এই আন্দোলন অত্যন্ত পরিষ্কার ও ন্যায্য। এই স্কিমটি শিক্ষকদের জন্য লজ্জাজনক। তাই আমরা আমাদের দাবি আদায়ের জন্য দলমত নির্বিশেষে একত্রিত হয়েছি। এই আন্দোলন শিক্ষার্থীদেরও আন্দোলন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে শৃঙ্খলে রাখার আন্দোলন। আমরা করোনার ক্ষতি পুষিয়ে দিয়ে এবং অন্যান্য সেশনজট নিরসনে পদক্ষেপ নিয়েছি। ১২ মাসের একাডেমিক বছরের জায়গায় ৮ মাসের বছর করেছি। এক বছরে তিন সেমিস্টার রেখেছি। এভাবে আমরা শিক্ষার্থীদের সব সেশনজট দূর করেছি। তাই এটা শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে গিয়ে কোনো আন্দোলন নয়। এদিকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যার প্রতিক্রিয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি বলেন, সরকারি কর্মকর্তাদের আমরা বিশ্বাস করি না। ২০১৫ সালে যেভাবে তারা আমাদের রাস্তায় নামিয়েছে। সুপার গ্রেড আমাদের দেয়নি। সে সময় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমরা কথা বলেছি, একটি কমিটিও হয়েছে। তবে নয় বছরেও আমরা সুপার গ্রেড পাইনি। তখনো আশ্বাস দিয়েছে। সুতরাং আশ্বাস দিলে হবে না। প্রধানমন্ত্রী আমাদের নিয়ে বসতে হবে। আমাদের সুপার গ্রেড দিতেই হবে। শিক্ষক সমিতি ছাড়াও চলমান এই আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স এসোসিয়েশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারী সমিতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কারিগরি কর্মচারী সমিতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৪র্থ শ্রেণি কর্মচারী ইউনিয়নের সদস্যরা অংশ নেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের এক কর্মসূচিতে সংগঠনটির আহ্বায়ক মো. আব্দুল মোতালেব বলেন, রাতের আঁধারে একটি কুচক্রী মহল এবং সচিবরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ধ্বংসের পাঁয়তারা করছে। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর দিয়েই সচিবালয়ে অফিস করতে যায়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর দিয়ে অফিসে যাওয়ার কোনো অধিকার তাদের নাই। প্রয়োজনে আমরা তাদের যাওয়ার রাস্তা বন্ধ করে দেবো। তিনি বলেন, যতদিন যাবে আন্দোলন কঠোর হবে। শেষ পর্যন্ত আমাদের দাবি যদি না মানা হয় তাহলে আমরা কর্মবিরতি থেকে সর্বাত্মক ধর্মঘট কর্মসূচিতে চলে যাবো। সবকিছু বন্ধ করে দেয়া হবে। পেটের তাগিদে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রতিদিন আন্দোলনে উপস্থিত হবেন। তিনি আরও বলেন, সরকার প্রত্যয় স্কিমকে পেনশন স্কিম বললেও এটি আসলে পেনশন স্কিম নয়। এটি অনেকটাই লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মতো। এই লাইফ ইন্স্যুরেন্সকে পেনশন স্কিম বলে যারা এটি আমাদের ওপর চাপিয়ে দিতে চাচ্ছেন তাদের আমরা সাবধান করে দিতে চাই। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয়কে স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ঘোষণা করেছেন। তার ৬১টা ধারা আছে। ৩৮ নম্বর ধারায় স্পষ্ট বলা আছে, পেনশন সংক্রান্ত যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এখানে সরকারের হস্তক্ষেপ করার সুযোগ নেই। যদি সরকার এতে হস্তক্ষেপ করে তবে সেটি হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন পরিপন্থি। এমন কোনো সিদ্ধান্ত আমরা এখানে বাস্তবায়ন করতে দিতে পারি না। এজন্য দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এই বিশ্ববিদ্যালয় ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বার্থে আমাদের আন্দোলন চলবে। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও দেশের অন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও চলছে সর্বাত্মক কর্মবিরতি। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ২০১৫ সালের পর পুনরায় অচলায়তনের শঙ্কা তৈরি হয়েছে দেশের উচ্চ শিক্ষাঙ্গনে। 

এদিকে শিক্ষকদের আন্দোলনের মধ্যে প্রত্যয় স্কিম নিয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। সেই সঙ্গে পহেলা জুলাই থেকে প্রত্যয় কার্যকরের কথাও জানানো হয়। এতে বলা হয়, সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে একটি টেকসই পেনশন ব্যবস্থায় আনার লক্ষ্যে অন্যদের পাশাপাশি স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত ও তার অঙ্গ-সংগঠনের প্রতিষ্ঠানের জন্য ‘প্রত্যয়’ স্কিম প্রবর্তন করা হয়েছে। বর্তমানে ৪০৩টি স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৯০টির মতো প্রতিষ্ঠানে পেনশন ব্যবস্থা চালু আছে। অবশিষ্ট প্রতিষ্ঠান কন্ট্রিবিউটরি প্রভিডেন্ট ফান্ডের (সিপিএফ) আওতাধীন। সিপিএফ সুবিধার আওতাধীন প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরা এককালীন আনুতোষিক প্রাপ্ত হয়ে থাকেন, কোনো পেনশন পান না। এ ছাড়াও মন্ত্রণালয় এ স্কিম নিয়ে কয়েকটি বিষয়ও স্পষ্ট করে। এর মধ্যে রয়েছে- ৩০শে জুন ২০২৪ সাল পর্যন্ত যে সকল শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী চাকরিরত আছেন তারা আগের মতো সকল পেনশন সুবিধা প্রাপ্য হবেন। ১লা জুলাই ২০২৪ সাল থেকে ফান্ডের ডিফাইন্ড কন্ট্রিবিউটরি সিস্টেমের পেনশন ব্যবস্থা চালু হবে বিধায় বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বেতন থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণে মাসিক জমার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। প্রত্যয় স্কিমে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বা কর্মচারীর প্রাপ্ত মূল বেতনের ১০ শতাংশ বা সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা যা কম হবে তা কর্মকর্তা বা কর্মচারীর বেতন হতে কর্তন করবে এবং সমপরিমাণ অর্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা প্রদান করবে। এরপর উভয় অর্থ ওই কর্মকর্তা, কর্মচারীর কর্পাস অ্যাকাউন্টে জমা হবে। আনফান্ডেড ডিফাইন্ড বেনিফিট সিস্টেমের পেনশন ব্যবস্থায় সরকারের আর্থিক সংশ্লেষ ক্রমাগত বৃদ্ধি পায় যা দীর্ঘমেয়াদে কোনোক্রমেই টেকসই ব্যবস্থা নয়। অপরদিকে ফান্ডেড কন্ট্রিবিউটরি পেনশন সিস্টেমে প্রাপ্ত কন্ট্রিবিউশন এবং বিনিয়োগ মুনাফার ভিত্তিতে একটি ফান্ড গঠিত হবে বিধায় এটি দীর্ঘমেয়াদে একটি টেকসই পেনশন ব্যবস্থা। পাশের দেশ ভারতেও ২০০৪ সাল থেকে ফান্ডেড কন্ট্রিবিউটরি পেনশন ব্যবস্থা চালু আছে। কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আবেদনের পর নিজ বিশ্ববিদ্যালয় বা অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে একই পদে বা উচ্চতর কোনো পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হলে তিনি সার্ভিস প্রটেকশন ও পে-প্রটেকশন প্রাপ্ত হন বিধায় এটিকে নতুন নিয়োগ হিসেবে গণ্য করা হয় না। সেক্ষেত্রে তার বিদ্যমান পেনশন সুবিধার আওতায় থাকার সুযোগ থাকবে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক ও কর্মচারী যারা ২০২৪ সালের ১লা জুলাই ও তৎপরবর্তী সময়ে নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত হবেন কেবলমাত্র তারা প্রত্যয় স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হবেন। সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইনে ৬০ বছর বয়স থেকে পেনশন প্রাপ্তির উল্লেখ থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ৬৫ বছর থেকে অবসরে যাবেন। ৬৫ বছর থেকে তারা আজীবন পেনশনপ্রাপ্ত হবেন। এক্ষেত্রে সরকার আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধন করবে। লাম্পগ্রান্ট ও পিআরএল অর্জিত ছুটি প্রাপ্যতার ভিত্তিতে প্রদান করা হয়। ছুটি জমা থাকা সাপেক্ষে তা বহাল থাকবে। কন্ট্রিবিউটরি পেনশন সিস্টেমে অংশগ্রহণকারীর সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এককালীন নয় বরং মাসিক পেনশনের যুক্তিসঙ্গত পরিমাণ নির্ধারণ করাই অগ্রগণ্য বিধায় এক্ষেত্রে আনুতোষিকের ব্যবস্থা রাখা হয়নি বরং বিদ্যমান মাসিক পেনশনের কয়েকগুণ বেশি মাসিক পেনশন প্রদানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। প্রত্যয় স্কিমে মাসিক ৫০০০ টাকা বেতন থেকে কর্তন করা হলে একই পরিমাণ অর্থ প্রতিষ্ঠান জমা প্রদান করলে ৩০ বছর পর একজন পেনশনার প্রতি মাসে ১,২৪,৬৬০ টাকা হারে আজীবন পেনশন পাবেন। তার নিজ আয়ের মোট জমাকৃত অর্থের পরিমাণ ১৮ লাখ টাকা এবং তিনি যদি ১৫ বছর ধরে পেনশন পান সেক্ষেত্রে তার মোট প্রাপ্তি হবে ২ কোটি ২৪ লাখ ৩৮ হাজার ৮০০ টাকা যা তার জমার প্রায় ১২.৫ গুণ। পেনশনার পেনশনের যাওয়ার পর ৩০ বছর জীবিত থাকলে তার জমার প্রায় ২৫ গুণ অর্থ পেনশন পাবেন। নতুন পেনশন ব্যবস্থায়ও পেনশনার আজীবন পেনশন পাবেন। পেনশনারের অবর্তমানে তার স্ত্রী/স্বামী বা নমিনি পেনশনারের পেনশন শুরুর তারিখ থেকে ১৫ বছর হিসাবে যে সময় অবশিষ্ট থাকবে সে পর্যন্ত পেনশন প্রাপ্য হবেন। 
 

পাঠকের মতামত

প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা ব্যবস্থা যে আপনাদের মতো শিক্ষকদের কারণে ধ্বংস হলে গেল তখন তো আপনারা একটা শব্দ উচ্চারণ করলেন না। আজ যখন আতে ঘাঁ লাগলো তখন নাটক শুরু করলেন। শিক্ষক জাতির বিবেক। তাদেরকে যে কোনো অবস্থাই এগিয়ে আসতে হবে কথা বলতে হবে এবং দেশকে রক্ষা করতে হবে। আপনাদের বিবেক জাগ্রত হোক, পা চাটা থেকে বেরিয়ে আসুন এই কামনা করি।

গোলাম মহিউদ্দিন
৩ জুলাই ২০২৪, বুধবার, ২:১৮ অপরাহ্ন

সন্মানিত শিক্ষকেরা একবারো ছাত্রছাত্রীদের নায্য অধিকার কোটা নিয়ে কথা বললো না, ‍শুধু নিজেদের টাই বলে গেল।

আকাশ
৩ জুলাই ২০২৪, বুধবার, ১১:৫২ পূর্বাহ্ন

কোন এক পক্ষ তো জিতবেই। দেখা যাক এবার সরকারের শক্তি কতটুকু।

A R Sarker
৩ জুলাই ২০২৪, বুধবার, ৮:০৭ পূর্বাহ্ন

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

   

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status