ঢাকা, ৫ জুলাই ২০২৪, শুক্রবার, ২১ আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৮ জিলহজ্জ ১৪৪৫ হিঃ

প্রথম পাতা

কর্মবিরতিতে অচল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়

স্টাফ রিপোর্টার
২ জুলাই ২০২৪, মঙ্গলবারmzamin

সর্বজনীন পেনশন ‘প্রত্যয়’ স্কিমে অন্তর্ভুক্তি চান না পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এই স্কিমকে বৈষম্যমূলক আখ্যা দিয়ে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করছেন তারা। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের নেতৃত্বে হওয়া এই আন্দোলনে যোগ দিয়েছে দেশের ৩৫টি বিশ্ববিদ্যালয়। যার কারণে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কার্যত অচলাবস্থা বিরাজ করছে। ফেডারেশন ঘোষণা দিয়েছে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়ার। 

প্রত্যয় স্কিমের বাইরে থাকার দাবিতে কিছুদিন ধরে ‘শান্তিপূর্ণ’ নানা কর্মসূচি পালন করে আসছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক-কর্মকর্তা- কর্মচারীরা। জুন পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু সংশ্লিষ্ট মহল থেকে সাড়া না মেলায় গতকাল থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে যান তারা। আন্দোলনরতদের তিনটি দাবি- ‘প্রত্যয়’ স্কিমের প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার, সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তন। আন্দোলনের অংশ হিসেবে সব বিভাগের সব ক্লাস বন্ধ, অনলাইন-সান্ধ্যকালীন ক্লাস ও শুক্র-শনিবারের প্রফেশনাল কোর্সের ক্লাস বন্ধ, সব পরীক্ষা বর্জন, বিভাগীয় চেয়ারম্যান বিভাগীয় অফিস-সেমিনার-কম্পিউটার ল্যাব ও গবেষণাগার বন্ধ, একাডেমিক কমিটি-সমন্বয় ও উন্নয়ন কমিটি ও প্রশ্নপত্র সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত না হওয়া, অনুষদের ডিনরা তাদের কার্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষাসহ সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম বন্ধ রাখা, নবীনবরণ অনুষ্ঠানের কর্মসূচি গ্রহণ না করা, বাছাই বোর্ডের সভা না হওয়া, বিভিন্ন ইনস্টিটিউটের কার্যালয়, ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ রাখা, সান্ধ্যকালীন, শুক্রবার ও শনিবারের ক্লাস বন্ধ রাখা, বিভিন্ন গবেষণাকেন্দ্রের পরিচালকদের সেমিনার, কনফারেন্স ও ওয়ার্কশপের কর্মসূচি থেকে বিরত থাকা, বিভিন্ন হলের প্রাধ্যক্ষ কার্যালয় বন্ধ এবং প্রধান গ্রন্থাগারিক কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার বন্ধ রাখা। গত বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটেও শিক্ষকরা ‘প্রত্যয়’ স্কিমের বিপক্ষে তাদের অবস্থান জানান। 

গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হয়।

বিজ্ঞাপন
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে আন্দোলনের অংশ হিসেবে যোগ দেননি শিক্ষক ফেডারেশনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। তারা ক্যাম্পাসে উপস্থিত থাকলেও বন্ধ ছিল প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম। আন্দোলনরত শিক্ষকরা গতকাল কলাভবনের মূল ফটকে অবস্থান নেন। অবস্থান কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন শতাধিক শিক্ষক। এসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জিনাত হুদা বলেন, আমাদের দাবির বিষয়ে আমরা একমত, আমরা দাবি থেকে সরবো না। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কোনো ধরনের ক্লাস-পরীক্ষা চলবে না। 
তিনি আন্দোলনের বিষয়ে বলেন, আমরা আজ (গতকাল) বিশ্ববিদ্যালয় দিবস হওয়া সত্ত্বেও প্রতীকীভাবে শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক অনুষ্ঠানে যোগ দেইনি। অর্থ মন্ত্রণালয় বা সংশ্লিষ্ট কেউ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। আমরা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলমান রাখবো। 

এ সময় আরও বক্তব্য দেন শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. এম অহিদুজ্জামান, সাবেক প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ছিদ্দিকুর রহমান খান, গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. চন্দ্রনাথ পোদ্দার, নৃত্যকলা বিভাগের চেয়ারম্যান মনিরা পারভীন প্রমুখ। এদিকে একই দাবিতে কর্মবিরতি পালন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরাও। সকাল থেকে তারাও অফিসে যাননি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্যপরিষদের আহ্বায়ক মো. মোতালেব বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় দিবস হওয়ার কারণে আমরা নিয়মিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিক্ষোভ মিছিল-সমাবেশ করিনি। তবে আমাদের কেউ অফিস করেনি। সর্বাত্মক কর্মবিরতি চলছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তা  চলমান থাকবে।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব নিজামুল হক ভূঁইয়া বলেন, দাবি আদায়ের বিষয়ে এখনো সরকারের তরফ থেকে যোগাযোগ করা হয়নি। তাই দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন চলবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ছিল গতকাল। সরকার ঘোষিত ‘প্রত্যয়’ স্কিম বাতিলের দাবিতে চলমান কর্মবিরতির অংশ হিসেবে গতকাল প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সব অনুষ্ঠান বর্জনের ঘোষণা দিয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। তবে শীর্ষ দুই নেতা উপস্থিত না থাকলেও প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন বিভিন্ন হলের প্রভোস্ট, অনুষদসমূহের ডিন ও বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকরা। 

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ক্যাম্পাসে দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। কর্মসূচির মধ্যে ছিল পতাকা উত্তোলন, পায়রা উড়ানো, বেলুন উড্ডয়ন, কেক কাটা, থিম সং পরিবেশন, শোভাযাত্রা এবং আলোচনা সভা। ঢাবি ভিসি ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের বিভিন্ন কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। শিক্ষকদের উল্লেখযোগ্য অংশগ্রহণ থাকলেও এসব অনুষ্ঠানের কোনোটিতে দেখা যায়নি ঢাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভূঁইয়া ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদাকে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জিনাত হুদা মানবজমিনকে বলেন, বর্জনের বিষয়টি নিয়ে ভুল ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে। যেহেতু আজকের (গতকালের) কর্মসূচিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ বিষয় ছিল; তাই আমরা এতে অংশ নেয়া না নেয়ার ব্যাপারটি  শিক্ষকদের সিদ্ধান্তের উপরে ছেড়ে দিয়েছিলাম। তবে ভাইস চ্যান্সেলর  মহোদয়ের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার পর আমি এবং সভাপতি কর্মবিরতির অংশ হিসেবে প্রতীকী বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে শিক্ষক সমিতির সভাপতি নিজামুল হক ভূঁইয়া মানবজমিনকে বলেন, আমি অসুস্থতার কারণে অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারিনি। এর আগের দিন শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক বর্জনের ঘোষণা দেয়ার সময় আমি সেখানে ছিলাম না। সিদ্ধান্তটি নিয়ে শিক্ষকদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া ছিল, আমি এ ব্যাপারে এর বেশি কিছু মন্তব্য করতে চাই না।

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) প্রতিনিধি জানান, শিক্ষকদের সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে স্থবিরতা নেমে এসেছে বিশ্ববিদ্যালয়ে। একাডেমিক ব্যস্ততার জায়গাগুলোতে বিরাজ করছে সুনসান নীরবতা। দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত শিক্ষক সমিতির অস্থায়ী কার্যালয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। শিক্ষকরা আহ্বান না করায় শিক্ষার্থীরা যাচ্ছে না ক্লাসে, হচ্ছে না কোনো পরীক্ষা।

গতকাল একাডেমিক ভবনগুলো খুললেও কোনো শিক্ষার্থীকে দেখা যায়নি। অধিকাংশ শ্রেণিকক্ষ ও পরীক্ষা কক্ষগুলো তালাবদ্ধ রয়েছে। সর্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয় স্কিম’ বাতিলের দাবিতে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করা বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে ক্লাস-পরীক্ষাসহ সব ধরনের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে বিরত রয়েছে। বেরোবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি বিজন মোহন চাকী বলেন, যথাযথ কর্তৃপক্ষ যতক্ষণ আমাদের তিন দফা দাবি মেনে না নিবে, বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের আহবানে আমরা শিক্ষকরা সর্বাত্মক কর্মবিরতি কর্মসূচি পালন করবো।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) প্রতিনিধি জানান, ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ করে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করেছেন শিক্ষকরা। গতকাল সকাল ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবন চত্বরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। এদিকে সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসার সমিতিও ১লা থেকে ৩রা জুলাই পর্যন্ত লাগাতার কর্মবিরতির ডাক দিয়েছেন।

রাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. হাবিবুর রহমান বলেন, গত দুই মাস থেকে আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। ভেবেছিলাম এমন পরিস্থিতি আসবে যে আমাদের আর লাগাতার কর্মসূচির মধ্যে যেতে হবে না। যেহেতু তেমন কিছু হয়নি তাই আমাদের লাগাতার কর্মসূচিতে যেতে হচ্ছে এবং সরকারের অবস্থান খুব অনড় বলেই মনে হচ্ছে। এজন্য আমাদের এটা আরও চালিয়ে যেতে হবে।

হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (হাবিপ্রবি) প্রতিনিধি জানান, অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত পেনশন সংক্রান্ত বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহারের দাবিতে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যায়  সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক, কর্মচারীরা। গতকাল সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত কর্মবিরতি ও দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত ড. মুহাম্মদ কুদরাত-এ-খুদা একাডেমিক ভবনের নিচে ঘণ্টাব্যাপী অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন হাবিপ্রবি শিক্ষক সমিতি। এ ছাড়াও একই সময় বাংলাদেশ আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স ফেডারেশন হাবিপ্রবি-এর ব্যানারে ড. এম ওয়াজেদ ভবনের নিচে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাদেরকেও কর্মবিরতি পালন করেন। তারাও ১লা থেকে ৩রা জুলাই পর্যন্ত  লাগাতার কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন। 

কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজার রহমান বলেন, আমরা একদিনে এমন কঠোর কর্মসূচিতে আসিনি। আমরা শুরুতে ১ ঘণ্টা, অর্ধদিবস ও পূর্ণদিবস কর্মবিরতি কর্মসূচি পালন করছি। আমরা চাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অতি দ্রুত এই বৈষম্যমূলক পেনশন স্কিম বাতিল করুক।

সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (সিকৃবি) প্রতিনিধি জানান, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির উদ্যোগে সর্বাত্মক কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়েছে। কৃষি অর্থনীতি ও ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের সামনে অনুষ্ঠিত কর্মবিরতি পালন অনুষ্ঠানে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ডা. মুহাম্মদ আল মামুনের সঞ্চালনায় এবং সভাপতি প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ছফি উল্লাহ ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে শিক্ষক নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। এদিকে সর্বজনীন পেনশন স্কিম বিধিমালার প্রজ্ঞাপন হতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের অন্তর্ভুক্তি অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবিতে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার পরিষদের উদ্যোগে প্রশাসনিক ভবনের সামনে কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। 

সিকৃবি শিক্ষক সমিতি সভাপতি প্রফেসর ড. মো. ছফি উল্লাহ ভূঞা বলেন, আমরা আশা করি সরকার অনতিবিলম্বে এই যৌক্তিক দাবি মেনে নেবে, যাতে আমরা ক্লাসে ফিরে যেতে পারি। অন্যথায় বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সারা দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালিত হবে।

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি) জানান, টোটাল শাটডাউনে বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষকদের পাশাপাশি কর্মকর্তারা ঘোষণা দিয়েছেন দাবি মেনে না নেয়া হলে ৭ই জুলাই থেকে পূর্ণদিবস কর্মবিরতিতে যাবেন তারাও। তবে আন্দোলনের ফলে সৃষ্ট জট পুষিয়ে দেয়ার আশ্বাস শিক্ষক সমিতির। চলমান কর্মবিরতির বিষয়ে নোবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. আনিসুজ্জামান বলেন, শিক্ষকদের দাবিগুলো  ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কথা বলে অতিদ্রুত সমাধান করবে বলে আমরা আশাবাদী। আন্দোলনের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষার্থীরা সেশনজটের কবলে পড়ুক, তা কোনো ভাবেই কাম্য নয়। আমরা আমাদের আন্দোলন শেষ হওয়া মাত্রই ক্লাসে ফিরবো। আন্দোলনের কারণে শিক্ষার্থীদের স্বল্পকালীন ক্ষতি বাড়তি ক্লাসের মাধ্যমে পুষিয়ে দিবো।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) প্রতিনিধি জানান, ‘বৈষম্যমূলক’ এ স্কিমের কারণে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে তা গণতান্ত্রিক পরিবেশের জন্য হুমকিপূর্ণ মনে করে বাংলাদেশ আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স ফেডারেশন। বুধবার পর্যন্ত প্রশাসনিক ভবনের সামনে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করবে চবি অফিসার সমিতি। অন্যদিকে বাংলাদেশ আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারী সমিতির আহ্বানে গতকাল থেকে চবি কর্মচারী সমিতি ৩রা জুলাই পর্যন্ত পালন করবে। 

এ বিষয়ে চবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এ.বি.এম আবু নোমান বলেন, ‘অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত সর্বজনীন পেনশন স্কিম বাতিল না করা পর্যন্ত আমাদের কর্মবিরতি চলবে। এটা আমাদের প্রাণের দাবি, যৌক্তিক দাবি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) প্রতিনিধি জানান, চলমান আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারী-কর্মকর্তারা। গতকাল সকাল ৯টা থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতি শুরু করেন তারা। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মোতাহার হোসেন বলেন, আমাদের তিন দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সর্বাত্মক কর্মবিরতি চালিয়ে যাবো এবং ক্লাসে ফিরবো না। আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। ভবিষ্যতে শিক্ষার্থীদের ভালোর জন্য আমরা আন্দোলন করছি।

এদিকে সর্বজনীন পেনশন স্কিম বাতিলের দাবিতে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এদিন সকাল থেকে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করেছেন তারা। বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলা ভবনের নিচে একটি প্রতিবাদ সমাবেশও করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসার সমিতি।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) প্রতিনিধি জানান, অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো ইবিতেও পালিত হয়েছে সর্বাত্মক কর্মবিরতি। বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের আহ্বানে গতকাল এই কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষকরা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে বলে জানান তারা। শিক্ষক নেতারা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ধরনের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করা হয়েছে। এ ছাড়া কোনো সভা, সেমিনার বা ওয়ার্কশপেও শিক্ষকরা অংশ নেবে না। আন্দোলন চলাকালে প্রতিদিন এক ঘণ্টা অনুষদ ভবনের নিচে অবস্থান কর্মসূচি করা হবে। এ ছাড়া সর্বজনীন পেনশন নীতিমালা প্রত্যাহার দাবিতে ক্যাম্পাসে প্রতিবাদ সমাবেশ ও কর্মবিরতি করেছে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) প্রতিনিধি জানান, ‘প্রত্যয় স্কিম’ প্রত্যাহার না হলে বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের আহ্বানে গতকাল সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালিত হয়। শাবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. আলমগীর কবীর বলেন, এ প্রজ্ঞাপন বাস্তবায়ন হলে দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীরা আর শিক্ষকতা পেশায় আসতে চাইবে না। মেধাবী শিক্ষার্থীরা দেশের বাহিরে গিয়ে সেটেল হওয়ার চিন্তা করছেন। এভাবে চলতে থাকলে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যাবে। এদিকে শিক্ষকদের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরাও সর্বজনীন পেনশন স্কিম প্রত্যাহারের দাবিতে তিন দিনের অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করছেন।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি) প্রতিনিধি জানান, শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবিতে অচল হয়ে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়। গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাউন্ডফ্লোরে তারা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। এতে অচলাবস্থায় পরিণত হয় বিশ্ববিদ্যালয়, বন্ধ হয়ে যায় শিক্ষার্থীদের ক্লাস-পরীক্ষা। অন্যদিকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স এসোসিয়েশন ও ববি’র ১১-২০ কল্যাণ পরিষদও বিভন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও কর্মবিরতি পালন করেন। 
এ সময় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. তারেক মাহমুদ আবীর বলেন, আমাদের দাবি যখনই সরকার মেনে নিবে, আমরা তখনই শান্তিপূর্ণ আন্দোলন থেকে সরে আসবো। আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স ফেডারেশন পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অন্তর্ভুক্তিতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স এসোসিয়েশনের আহ্বানে ১, ২, ৩ ও ৪ঠা জুলাই পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দেন।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) প্রতিনিধি জানান, অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত পেনশন সংক্রান্ত বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার, প্রতিশ্রুত সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তনের দাবি পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালিত হয়েছে। গতকাল দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচিও পালন করেন তারা। এ সময় পেনশন স্কিম বাতিলের আন্দোলনকে শিক্ষার্থীদের স্বার্থের আন্দোলন উল্লেখ করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. শেখ মাশরিক হাসান বলেন, পেনশন স্কিম বাতিলে আমাদের যে আন্দোলন, এটা আমাদের শিক্ষার্থীদের জন্যই। নতুন পেনশন স্কিমে আমাদের বর্তমান শিক্ষকদের কোনো ক্ষতি হবে না, যেসব মেধাবী শিক্ষার্থীরা শিক্ষকতা পেশায় আসবেন তাদেরই ক্ষতি হবে। আমরা তাদের আর্থিক স্বচ্ছতা ও স্বকীয়তা রক্ষায় আন্দোলন করছি।

এ ছাড়াও এদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন একাডেমিক ভবনের সামনে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। গাজীপুর থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ডুয়েট) এ চলমান সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষাসহ সব ধরনের একাডেমিক কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। গত রোববার চলমান আন্দোলনের কর্মসূচি পালনের প্রেক্ষাপটে ডুয়েট শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে ৯ দফায় এ তথ্য জানানো হয়েছে। শিক্ষার্থীরা জানায়, এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেশনজট আরও দীর্ঘ হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। সর্বজনীন পেনশন স্কিম সংক্রান্ত ‘বৈষম্যমূলক’ প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহারের দাবিতে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন কর্তৃক ঘোষিত কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে ডুয়েট শিক্ষক সমিতি সোমবার হতে সর্বাত্মক আন্দোলন কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ডুয়েট শিক্ষক সমিতি জানিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগের আন্ডারগ্র্যাজুয়েট ও মাস্টার্সের (ফুল টাইম এবং পার্ট টাইম) ক্লাস বন্ধ থাকবে। পাশাপাশি শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তন, প্রতিশ্রুত সুপারগ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তির দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সর্বাত্মক আন্দোলন কর্মসূচি চলমান থাকবে।

 

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

   

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status