প্রথম পাতা
মতিউর ওএসডি, দুদকের তদন্ত শুরু
স্টাফ রিপোর্টার
২৪ জুন ২০২৪, সোমবার
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট অ্যাপিলাত ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট মতিউর রহমানকে এনবিআর থেকে সরিয়ে নিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয় গতকাল এ বিষয়ে জারি করা অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বিসিএস (শুল্ক ও আবগারি) ক্যাডারের কর্মকর্তা মতিউর রহমানকে তার বর্তমান পদ থেকে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে সংযুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া মতিউর রহমানকে সোনালী ব্যাংকের পরিচালক পদ থেকেও সরিয়ে দেয়া হয়েছে। গতকাল অনুষ্ঠিত পরিচালনা পর্ষদের সভা শেষে সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান জিয়াউল হাসান সিদ্দিকী এই তথ্য জানান। অন্যদিকে দুর্নীতি দমন কমিশনও (দুদক) অনুসন্ধান শুরু করেছে মতিউরের বিরুদ্ধে।
মতিউর রহমানকে এনবিআর থেকে সরানোর কারণ প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়নি। বলা হয়েছে, জনস্বার্থে জারিকৃত এই আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে। এ ছাড়া প্রজ্ঞাপনে মতিউর রহমানের নতুন দায়িত্ব সম্পর্কেও কিছু বলা হয়নি। এ বিষয়ে এনবিআরের এক কর্মকর্তা বলেন, মতিউর রহমান বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) হিসেবে থাকবেন অর্থমন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে। তাকে নতুন কোনো দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে না।
এ ছাড়া সোনালী ব্যাংক থেকে মতিউর রহমানকে সরিয়ে দেয়ার কারণ হিসেবে জিয়াউল হাসান সিদ্দিকী বলেছেন, সরকারের পক্ষ থেকে আমাদেরকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে, মতিউর রহমান আর সোনালী ব্যাংকের পর্ষদ সভায় আসবেন না। সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সবাইকে বিষয়টি জানিয়ে দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, সোনালী ব্যাংকের পর্ষদ কোনো পরিচালককে নিয়োগ দিতে পারে না, আবার কাউকে পর্ষদ থেকে বাদ দিতেও পারে না। ব্যাংকের মালিক হিসেবে সোনালী ব্যাংকের পর্ষদে পরিচালক নিয়োগ দেয় সরকার। আবার কাউকে বাদ দিতে চাইলে সেটাও করে সরকার। সরকারের পক্ষ থেকে আমাদেরকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে, আর কখনো মতিউর রহমান আমাদের পর্ষদ সভায় আসবেন না। এর আগে গত ৪ঠা জুন রাজস্ব বোর্ডের এই কর্মকর্তার অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। সেই সিদ্ধান্তের আলোকে গতকাল অনুসন্ধান দল গঠন করে সংস্থাটি।
এদিন দুপুর আড়াইটায় কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান।
দুদক সচিব বলেন, এনবিআরের সদস্য ড. মো. মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের অভিযোগে গত ৪ঠা জুন কমিশন একটি অনুসন্ধান টিমের মাধ্যমে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ইতিমধ্যে একজন উপ-পরিচালককে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়েছে। টিমের সদস্যরা তাদের কাজও শুরু করেছেন।
দুদক সূত্রে জানা যায়, কমিশনে উপ-পরিচালক আনোয়ার হোসেনকে অনুসন্ধান দলের প্রধান করা হয়। এ ছাড়া দলের অন্য দুই সদস্য হলেনÑ সহকারী পরিচালক মাহমুদুল হাসান ও উপ-সহকারী পরিচালক সাবিকুন্নাহার।
সূত্র আরও জানায়, দুদকের ৪ঠা জুনের সভায় সংস্থার মহাপরিচালক (মানিলন্ডারিং) মো. মোকাম্মেল হক অভিযোগ উপস্থাপন করেন। এতে বলা হয়, মো. মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। তার বিরুদ্ধে একই ধরনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ইতিপূর্বে চার বার অনুসন্ধান করা হয়।
এনবিআরের এই কর্মকর্তার ছেলে মুশফিকুর রহমান ইফাত ঈদুল আজহার সময় ১৫ লাখ টাকায় ছাগল কিনে আলোচনায় আসেন। ওই সময় মতিউর রহমান গণমাধ্যমকে জানান, এই ইফাত তার সন্তান নন। এমনকি তিনি এই তরুণকে চেনেনও না। পরে জানা যায়, ইফাত মতিউরের দ্বিতীয় স্ত্রী শাম্মী আক্তারের দ্বিতীয় সন্তান।
দুদকের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৪, ২০০৮, ২০১৩ ও ২০২১ সালে চারবার মতিউরের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে মাঝপথে তা থেমে যায়।
দুদকের তথ্য অনুযায়ী মতিউর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে বসুন্ধরা ডি ব্লকে একটি সাততলা বাড়ি, আই ব্লকে তার যৌথ মালকানাধীন ডেভেলপার কোম্পানির জেসিক্সের তত্ত্বাবধানে একটি বহুতল ভবনে তার অংশ আছে।
এ ছাড়া, মতিউর রহমানের মালিকানায় ময়মনসিংহের ভালুকার সিডস্টোর এলাকার পাশেই প্রায় ৩০০ বিঘা জমির উপর গ্লোবাল নামে জুতার একটি কারখানা, নরসিংদীতে একটি রিসোর্ট, পুবাইলে শুটিং স্পটসহ বিপুল সম্পদ থাকার তথ্য পাওয়া যায়। রাজস্ব বিভাগের এই কর্মকর্তার স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যদের নামেও নামে-বেনামে সম্পদ থাকার তথ্য রয়েছে দুদকের কাছে।
পাঠকের মতামত
এই ডাকাতের ফাসি হওয়া উচিৎ।
He should be imprisoned, not an OSD.
অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে শুধুমাত্র মুষ্টিমেয় কিছু সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মচারী ও রাজনীতিবিদের স্বার্থ দেখার জন্য। সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে সম্পত্তি কেনার সময় কাউকে তার বিগত কয়েকবছরের আয়করপত্র দাখিল করে প্রমান করতে হয়না যে সে ন্যায়সঙ্গত উপার্জনের পয়সা দিয়ে সেগুলি খরিদ করছে। এই লুপহোলের কারণেই তারা বিশাল সম্পত্তি কেনে চুরির পয়সা দিয়ে।
শুধু ও এস ডি করলে হবে না। তাকে দ্রুত আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।