ঢাকা, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বুধবার, ৬ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৯ শাবান ১৪৪৬ হিঃ

প্রথম পাতা

এমপি আনার হত্যায় আরও নেতার নাম আসছে

শুভ্র দেব
২৪ জুন ২০২৪, সোমবারmzamin

আনোয়ারুল আজিম আনারের মেয়ে প্রথম থেকে বলে আসছিলেন মামলার তদন্ত প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে একটি মহল। প্রভাব খাটিয়ে মূল আসামিরা  ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। এনিয়ে তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে বেশ কয়েকবার অভিযোগও করেছেন। দেরিতে হলেও তার কথার কিছুটা সত্যতা মিলছে। কারণ সময় যত যাচ্ছে ততই প্রভাবশালীদের নাম সামনে আসছে। কিলিং মিশনে নেতৃত্বদানকারী শিমুল ভূঁইয়ার জবানবন্দি ও ডিজিটাল এভিডেন্সের ভিত্তিতে বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী আনার হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হয় ডিবি। এরই সূত্র ধরে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু এবং জেলার ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ ওরফে গ্যাস বাবুকে গ্রেপ্তার করা হয়। বাবুর কাছ থেকে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পান তদন্ত কর্মকর্তারা। মূলত বাবুকে গ্রেপ্তারের পরই সতর্ক হয়ে যান মিন্টু। আন্দাজ করতে পারেন তিনি গ্রেপ্তার হবেন। গ্রেপ্তার এড়াতে তিনি নানা তদবির করতে থাকেন। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের শরণাপন্ন হন। বিভিন্ন মহল থেকে তদন্ত কর্মকর্তাদের ফোন করে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। সরকারের সর্বোচ্চ মহলের নির্দেশে প্রভাবশালী এই নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে মিন্টুকে গ্রেপ্তারের পরও তাকে ছেড়ে দেয়ার চাপ আসে। রিমান্ড মঞ্জুরের পরও তাকে যেন জিজ্ঞাসাবাদ না করা হয় এবং জিজ্ঞাসাবাদে যেন চাপ সৃষ্টি করা না হয় সেই তদবিরও আসে।

সূত্রগুলো বলছে, মিন্টুকে গ্রেপ্তার করে তেমন সুবিধা করতে পারেনি ডিবি। ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হলেও ৩ দিনের মাথায় তাকে আদালতের মাধ্যমে জেলে পাঠিয়েছে। মিন্টু এখন কারাগারে আছেন। জামিনের চেষ্টা করছেন। মিন্টুকে যে ক’দিন জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ তেমন কোনো তথ্য বের করতে পারেনি ডিবি। কারণ জিজ্ঞাসাবাদে তদন্ত কর্মকর্তার সকল প্রশ্ন কৌশলে এড়িয়ে গেছেন তিনি। ডিজিটাল প্রমাণাদি তার সামনে হাজির করলেও তিনি এসব স্বীকার করেননি। তিনি বলেছেন, তাকে ফাঁসানো হয়েছে। এজন্য তিনি ডিবি ও আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দেননি। তবে মিন্টু জবানবন্দি না দিলেও ডিবি এমন কিছু ডিজিটাল প্রমাণ পেয়েছে এতে করে মিন্টু এমপি আনার হত্যাকাণ্ডের অর্থের যোগানদাতা ও অনেক নির্দেশদাতা হিসাবে কাজ করেছেন সেটি অনেকটা নিশ্চিত হয়েছে। কারণ ডিজিটাল এভিডেন্সের মাধ্যমে শুধু মিন্টুই নয় আরও দুজন প্রভাশালী রাজনৈতিক ব্যক্তির নাম বের হয়েছে। ওই দুইজন বর্তমানে সংসদের সদস্য। 

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আনার হত্যার মাস্টারমাইন্ড আখতারুজ্জামান শাহীন কলকাতার সঞ্জীবা গার্ডেনে কিলিং মিশনের নেতা শিমুল ভূঁইয়াকে সবকিছু বুঝিয়ে দিয়ে ১০ই মে ঢাকায় ফিরে আসেন। ১৮ই মে তিনি আবার দিল্লি হয়ে নেপাল যান। ২১শে মে নেপাল থেকে দুবাই। আর ২২শে মে দুবাই থেকে আমেরিকা চলে যান। ১০ই মে ঢাকায় আসার পর পরবর্তী ৮ দিন তিনি কার কার সঙ্গে দেখা করেছেন, ফোনে কথা বলেছেন, কোথায় কোথায় গিয়েছেন এসব বিষয় খতিয়ে দেখছে ডিবি। তদন্ত কর্মকর্তাদের ধারণা এই ৮দিন শাহীন ঘরে বসে থাকেননি। আর থাকলেও আনার হত্যা নিয়ে অনেকের সঙ্গে তার চ্যাটিং বা কথা হয়েছে। শাহীন আমেরিকায় পালিয়েছে। তাকে দেশে ফিরিয়ে আনাও কঠিন ও সময়সাপেক্ষ। কিন্তু আনার হত্যার তদন্ত নির্ভর করছে তার ওপর। তাই তদন্ত সংশ্লিষ্টরা শাহীনের ওই সময় যাদের সঙ্গে দেখা ও কথা হয়েছে তাদের ধরার চেষ্টা করছে। ইতিমধ্যে বেশকিছু ক্লু পেয়েছে ডিবি।  
এদিকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ গতকাল নিজ কার্যালয়ে বলেছেন, মিন্টুকে গ্রেপ্তার করে কোনো চাপে নেই ডিবি। মতিঝিলের টিপু হত্যা, কামরাঙ্গীচরের শিল্পপতি হত্যাকাণ্ড ও ফারদিন হত্যাকাণ্ডসহ অনেক হত্যাকাণ্ড কিন্তু ঢাকা শহরে ঘটেছে। ডিবির চৌকস টিম প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের মোটিভ বের করেছে। এমপি আনার কলকাতায় হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। এই হত্যাকাণ্ডের ক্লু বের করতে ডিবি পুলিশের দল রাত-দিন নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের টিম নেপালে গিয়েছে এবং আমাদের তথ্যের ভিত্তিতে নেপালে সিয়াম গ্রেপ্তার হয়েছে। এ ছাড়া কলকাতায় গিয়েও আমরা বিভিন্ন তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছি আলামত উদ্ধারে। এই হত্যাকাণ্ডের মূল কিলার শিমুল ভূঁইয়াসহ আরও অনেককে আমরা গ্রেপ্তার করেছি। এরমধ্যে চারজন আসামি বিজ্ঞ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। আমরা যদি চাপ অনুভব করতাম তাহলে আমাদের এত এচিভমেন্ট হতো না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী একাধিকবার বলেছেন, কোনো চাপ নেই এই মামলার তদন্তে। তিনি আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন যেন নিরপেক্ষভাবে মামলার তদন্ত করা হয়। ডিবি নিরপেক্ষভাবে এ মামলার তদন্ত করছে। এ মামলায় কোনো নিরপরাধ ব্যক্তিকে হয়রানি করা হবে না এবং কাউকে অযথা ডাকাডাকি করা হবে না। সুস্পষ্ট তত্ত্বের ভিত্তিতে তদন্তকারী কর্মকর্তা আদালতের মাধ্যমে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন। আদালতে স্বীকারোক্তিতে গ্যাস বাবু বলেন, ‘ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিন্টু তার কাছ থেকে মোবাইল নিয়ে কোথাও ছুড়ে ফেলেছে’ এই মোবাইলগুলো উদ্ধারে ডিবি পুলিশ কোনো তৎপরতা চালাচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, আলামত নষ্ট করার তথ্য আমরাও জিজ্ঞাসাবাদে পেয়েছি। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আমরা আদালতে একটি চিঠি দিয়েছি। যেহেতু গ্যাস বাবুর মোবাইলে ডিজিটাল এভিডেন্স রয়েছে, যদিও দু’পক্ষের কাছে ডিজিটাল এভিডেন্স রয়েছে এর মধ্যে একপক্ষের ডিজিটাল এভিডেন্স আমরা পেয়েছি। গ্যাস বাবুকে আমরা আরও জিজ্ঞাসাবাদ করবো এবং মোবাইলগুলো কোথায় ফেলে দিয়েছেন সেগুলো উদ্ধারের চেষ্টা করবো। 

মিন্টুর রিমান্ড শেষ হওয়ার আগে তাকে কারাগারে কেন পাঠিয়ে দিয়েছে ডিবি এই প্রশ্নের জবাবে হারুন বলেন, এখানে আইনের কোনো ব্যত্যয় হয়নি। তদন্তকারী কর্মকর্তা যখন কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তখন তার  সেটিসফেকশনের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে। তদন্তকারী কর্মকর্তা যদি মনে করেন কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তার কাছ থেকে আপাতত দৃষ্টিতে আর কিছু জানার নেই তিনি সকল কিছু জানতে পেরেছেন তখন তিনি আদালতের মাধ্যমে আসামিকে জেলহাজতে পাঠাতে পারেন। তবে আবার যদি বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে তদন্তকারী কর্মকর্তা যদি মনে করেন ওই আসামিকে আরও জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন তখন তিনি জিজ্ঞাসাবাদের সুযোগ পাবেন।

আখতারুজ্জামান শাহিনকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে কোনো অগ্রগতি আছে কিনা জানতে চাইলে ডিবি প্রধান বলেন, মামলার তদন্ত অনেকটা কনক্লুসিভ পর্যায়, আমরা অনেককে গ্রেপ্তার করেছি। কিছু কিছু নাম আমরা পেয়েছি তাদেরও গ্রেপ্তারে চেষ্টা করছি। এ ঘটনার মাস্টারমাইন্ড শাহিন যুক্তরাষ্ট্রে আছে। যেহেতু যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের একটা বন্দি বিনিময় চুক্তি আছে সেহেতু আমরা ভারতীয় পুলিশকে বলেছি যেন তাকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরিয়ে আনা হয়। পাশাপাশি বাংলাদেশে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসে আমরা টিম নিয়ে গিয়ে কথা বলেছি। এ ছাড়া পুলিশ সদর দপ্তরের এমসিবি শাখার মাধ্যমে আমরা ইন্টারপোলকে চিঠি দিয়েছি। শাহীনকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা কাজ করছি।  আরও এক-দুজন আসামি বাকি রয়েছে তাদেরকে গ্রেপ্তারের জন্য চেষ্টা করছি। আশাকরি দ্রুত সময়ের মধ্যে মামলাটি নিষ্পত্তি করা যাবে। এমপি আনারের মেয়ে ডরিন ডিএনএ নমুনা দেয়ার জন্য কলকাতায় যাওয়ার কথা কিনা জানতে চাইলে হারুন বলেন, ভারতীয় পুলিশ দূতাবাসের মাধ্যমে ডরিনকে জানিয়েছে ভারতে যাওয়ার জন্য। ডরিনের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে সে মনে হয় কয়েক দিন ধরে জ্বরে ভুগছে। তার স্বাস্থ্য ভালো হলে মনে হয় তিনি শিগগিরই ভারতে যাবেন।

পাঠকের মতামত

anar marder case kissu hobe na

adv iqbal
২৪ জুন ২০২৪, সোমবার, ৫:১৮ অপরাহ্ন

শেষমেস দেখা যাবে সরকার ই জড়িত।

Khokon
২৪ জুন ২০২৪, সোমবার, ১২:৫০ পূর্বাহ্ন

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status