দেশ বিদেশ
সরকার ভারতের সেবাদাসে পরিণত হয়েছে: মির্জা ফখরুল
স্টাফ রিপোর্টার
২৪ জুন ২০২৪, সোমবারপ্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ভারতের সেবাদাসে পরিণত হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিএনপি’র উদ্যোগে ‘দলের অসুস্থ চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার আশু আরোগ্য কামনায় দোয়া মাহফিলে’ এ অভিযোগ করেন তিনি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের প্রশ্ন খুব পরিষ্কার, আমরা সবার আগে তিস্তার পানির ন্যায্য বণ্টন চাই এবং অভিন্ন যে সমস্ত নদীগুলো আছে প্রত্যেকটি নদীর আমরা ন্যায্য হিৎসা চাই, এটা আমাদের অধিকার, আন্তর্জাতিক আইনের অধিকার, এই কথাগুলো সরকার বলতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হচ্ছে। আজকে ভারতের কাছে তারা (সরকার) সেবাদাসে পরিণত হয়ে গেছে। শুধু ভারত নয়, সমগ্র আশে-পাশের প্রতিবেশী দেশগুলোর কাছে তারা আজকে পুরোপুরি মাথা নিচু করে নতজানু পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করছে। মিয়ানমার থেকে গুলি আসে জবাবটাও পর্যন্ত তারা দিতে পারে না। এই একটা অথর্ব্য নতজানু শাসকগোষ্ঠী আমাদের ওপরে চেপে বসে আছে।
তিনি বলেন, আজকে তথাকথিত প্রধানমন্ত্রী যিনি নির্বাচিত নন তিনি ভারতে গিয়ে চুক্তি করেছেন, ১০টি চুক্তি করেছেন। আমরা দেখলাম যে চুক্তিগুলোর বেশির ভাগগুলো বলা হচ্ছে- মেমোরেন্ডাম সই করেছেন, অনেকগুলো তারা চুক্তি করবেন, কারিগরি দল পাঠাবেন সেগুলো জন্য। কিন্তু আমাদের যে সমস্যাগুলো, আমরা যে তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিৎসা পাচ্ছি না। সেই ব্যাপারে কোনো চুক্তি হয়নি। উপরন্তু কী হয়েছে? তিস্তা প্রকল্পের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। সেই প্রকল্পে অংশগ্রহণ করার জন্য, তাতে বিনিয়োগ করার জন্য ভারত প্রস্তাব করেছে। মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা দেখেছেন কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা তাদের দুর্নীতির কাহিনী বেরিয়েছে। সাবেক যে সেনাপ্রধান (আজিজ আহমেদ) তার দুর্নীতির কাহিনী বেরিয়েছে। আবারো কয়েকজন পুলিশের দুর্নীতির কাহিনী বেরিয়ে আসছে। আমি অবাক বিস্ময়ে লক্ষ্য করলাম যে, গত শুক্রবার পুলিশ এসোসিয়েশন থেকে একটা স্টেটমেন্ট দেয়া হয়েছে সাংবাদিকদেরকে সত্য প্রকাশে তাদেরকে হুমকি দিয়ে বলা হয়েছে যে, এই সত্য (পুলিশের দুর্নীতির খবর) প্রকাশ করা যাবে না। কারণ এতে নাকি তাদের ভাবমূর্তি বিনষ্ট হয়। আজকে সারাদেশের মানুষ জানে, সারা পৃথিবী জানে যে, পুলিশ বাহিনীর কিছু কিছু সদস্য তারা কীভাবে এই অবৈধ সরকারের সঙ্গে যোগসাজশ করে বিত্ত-বৈভবের একটা দুর্নীতির পাহাড় গড়ে তুলেছে। শুধু তাই নয়, তারা রাষ্ট্রযন্ত্রকে ধ্বংস করছে, গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার দায় তাদেরকেই নিতে হবে যারা এসবের সঙ্গে জড়িত। সরকার প্রধানের রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় গুরুতর অসুস্থ খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে দেয়া হচ্ছে না অভিযোগ করে তিনি বলেন, এভারকেয়ার হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ড বারবার বলেছেন, ম্যাডামের যে অসুখ, সেই অসুখের চিকিৎসা বাংলাদেশে করা সম্ভব নয়। তার যে মাল্টিভ্যারিয়াস ডিজিজেস আছে, তার চিকিৎসা করতে হলে উন্নত দেশের মাল্টিডিসিপ্ল্যানারি হসপিটাল প্রয়োজন। বারবার একথাগুলো বিভিন্নভাবে বলার পরেও দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সুশীল সমাজ বলেছে এমনকি বিদেশি মিশনগুলো এখানে (বাংলাদেশে) আছে তারাও বারবার বলেছে, বাইরে থেকে কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ সবাই বলেছে। কিন্তু শেখ হাসিনা তার যে ব্যক্তিগত রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, সেই প্রতিহিংসার কারণে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে তাকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে কোনোভাবে চিকিৎসার সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। ফখরুল বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তিনি আজকে এই ভয়াবহ ফ্যাসিস্ট সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে কারারুদ্ধ রয়েছেন। শুধু এইটুকু বলতে চাই, সম্পূর্ণ মিথ্যা মামলায় তাকে সাজা দিয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেয়ার জন্য কারাগারে আটক রাখা হয়েছে। তাকে বাসায় থাকার সুযোগ দেয়া হলেও প্রকৃতপক্ষে তিনি পুরোপুরি অবরুদ্ধ, বন্দি আছেন। আমরা এও জানি যে, তিনি অবরুদ্ধ অবস্থায় কারাগার থেকেই অসুস্থ হয়েছেন। তার সেখানে কোনো চিকিৎসা হয়নি। তিনি বার বার কমপ্লেইন করেছেন কিন্তু সরকার তা শোনেনি, তার চিকিৎসাও দেয়নি। পরবর্তীকালে তাকে যখন হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে সেখানেও তার কোনো সুচিকিৎসা হয়নি। বাসায় আসার পরে তাকে শর্ত দেয়া হয়েছে তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না, দেশেই চিকিৎসা নিতে হবে। বিএনপি চেয়ারপারসনের শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক উল্লেখ করে তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়া তার জীবন-মৃত্যু এতই সন্ধিক্ষণে। আমি আপনাদেরকে বলছি, আপনারা প্রাণ খুলে তার জন্য দোয়া করুন। শুধু দোয়াই নয়, আমাদের পক্ষে যা কিছু করা সম্ভব তার সুচিকিৎসা করার জন্য, সেই চেষ্টাই আমাদেরকে করতে হবে। দেশনেত্রীর জন্য যা করার দরকার সেটাই আমাদেরকে করতে হবে। আসুন পরম করুণাময় আল্লাহতালার কাছে এই দোয়া চাই, আল্লাহতায়ালা যেন আমাদের গণতন্ত্রের প্রতীক যিনি আমাদের স্বৈরাচারের কাছে গণতন্ত্র ফেরানোর নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, যিনি এই দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রকে আরও শক্তিশালী করার জন্য সংসদীয় গণতন্ত্র প্রবর্তন করেছিলেন, যিনি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে সংবিধানে সংযোজন করে এদেশের মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত করেছিলেন, যিনি এদেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য কাজ করেছিলেন যে কারণে তখন বিদেশের পত্রিকাগুলোতে লেখা হতো ‘বাংলাদেশ ইজ এ ইমার্জিং টাইগার’ কী দুর্ভাগ্য আমাদের সেই নেত্রী আজকে বিনা চিকিৎসায় বন্দি অবস্থায় তিনি আজকে মৃত্যুশয্যায়। আবেগ আপ্লুত কণ্ঠে নেতাকর্মীদের দোয়া করার অনুরোধ করে মির্জা ফখরুল বলেন, আসুন আমরা আজকে কায়মনো বাক্যে দোয়া করি, আল্লাহতালা যেন আমাদের দোয়া শোনেন, আল্লাহতালা যেন তাকে আমাদের মাঝে ফিরিয়ে দেন।
আমরা যেন তার নেতৃত্বে আবার যেন জেগে উঠতে পারি এবং এই যে দানব যারা আমাদের রাষ্ট্রের সবকিছু ধ্বংস করে দিচ্ছে তাকে যেন আমরা পরাজিত করতে পারি। আসুন আমরা সেই দোয়া করি আল্লাহতালার কাছে, তিনি যেন আমাদের সেই তওফিক দেন, সেই শক্তি দেন যেন আমরা নিজের পায়ে নিজেরা দাঁড়াতে পারি।
অনুষ্ঠানে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, শামসুজ্জামান দুদু, আসাদুজ্জামান রিপন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, আবদুস সালাম আজাদ, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকুসহ কেন্দ্র্রীয় ও অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।