প্রথম পাতা
চার দফা দুদকের অনুসন্ধান চাপা দেন মতিউর
স্টাফ রিপোর্টার
২৩ জুন ২০২৪, রবিবার
গত বিশ বছরে চারবার দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) জাল ভেদ করে অভিযোগমুক্ত হয়েছেন রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য
এবং শুল্ক ও ভ্যাট আপিলাত ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট ড. মতিউর রহমান। কোনোবারই অনিয়ম- দুর্নীতির মাধ্যমে গড়া অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আমলে নিয়ে অনুসন্ধান শুরু হলেও তার বিরুদ্ধে একবারও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ছেলের ছাগলকাণ্ডে বিপুল সম্পত্তি অর্জনের বিষয় সামনে আসার কয়েকদিন আগেই মতিউরের বিরুদ্ধে নতুন করে অনুসন্ধানদল গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। সম্প্রতি সংস্থাটির সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়। অবৈধ সম্পদ অর্জনের পাশাপাশি অর্থপাচারের অভিযোগও যুক্ত হয়েছে অনুসন্ধানে। সেইসঙ্গে আগের পরিসমাপ্ত হওয়া চারটি অনুসন্ধানের নথিও খোঁজার নির্দেশ দেয়া হয়। এসব নথি খুঁজে না পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্তও নিয়েছে দুদক।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, মতিউরের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচারের অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য গত ৪ঠা জুন দুদকের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় সিদ্ধান্ত হয়। সংস্থাটির মহাপরিচালক (মানিলন্ডারিং) মোকাম্মেল হোসেন ওই সভায় তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন।
সূত্র আরও জানায়, ২০০৪, ২০০৮, ২০১৩ ও ২০২১ সালে এই চারটি অনুসন্ধান সম্পন্ন হয়। তবে এই চার দফা অনুসন্ধানের পর কমিশন থেমে যায়। দুদকের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা মানবজমিনকে বলেন, কমিশন ৪ঠা জুনের সভায় এই রাজস্ব কর্মকর্তার অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়ে এবার প্রকাশ্যে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়। একই সভায় তার বিষয়ে অনুসন্ধানের জন্য একটি টিম গঠন করতে বলা হয়।
সভার গৃহীত সিদ্ধান্তে বলা হয়, একই ব্যক্তির বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে ২০০৪, ২০০৮, ২০১৩ ও ২০২১ সালে পরিসমাপ্তকৃত চারটি অনুসন্ধান প্রতিবেদন ও তৎসংশ্লিষ্ট নথি খুঁজে বের করতে হবে। নথি খুঁজে না পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার বিষয়ে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
কৌশলে চারবার দায়মুক্ত মতিউর: দুদকের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তা মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে যখন অনুসন্ধানে নামা হয় প্রতিবারই তার ট্যাক্সফাইলে বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে অবৈধ অর্থগুলো বৈধ করে ফেলতেন। এই কৌশল অবলম্বন করায় তার বিরুদ্ধে কোনোবারই মামলা করা সম্ভব হয়নি। উদাহরণ টেনে এক কর্মকর্তা জানান, মতিউরের বিরুদ্ধে একবার মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে অনুসন্ধান শুরু হয়। অভিযোগ ওঠে হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে মুদ্রা পাচার করেছেন তিনি। কিন্তু সেই টাকা পরবর্তীতে বিদেশে থাকা আত্মীয়দের মাধ্যমে এনে রেমিট্যান্স পেয়েছেন বলে দাবি করেন মতিউর। এমন অবৈধ সম্পদকেও পারিবারিক ব্যবসা ও ঋণ দেখিয়ে বৈধ করে নেন। ফলে তার কৌশলী বুদ্ধির কাছে দুদক আর আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারেনি।
কত সম্পদ মতিউরের? দুদক সূত্র জানায়, মতিউরের বিরুদ্ধে পাওয়া অভিযোগে নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ সম্পদের তথ্য রয়েছে। ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন তিনি। বাড়ি, গাড়ি, ফ্ল্যাট, প্লট, জমি, ব্যবসা, শেয়ার ব্যবসা, ব্যাংকে নগদ অর্থ, মেয়াদি আমানতসহ সবকিছুই রয়েছে তার নামে।
মতিউর বর্তমানে কাস্টম্স, এক্সাইজ ও ভ্যাট আপিলাত ট্রাইব্যুনালের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। গত কয়েকদিনে তার ছেলে মুশফিকুর রহমান ইফাতের ১২ লাখ টাকায় কোরবানির ছাগল, ৭০ লাখ টাকায় কয়েকটি গরু কেনার ছবি ও খবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। মতিউর বলেছেন, ইফাত তার ছেলে নয়। পরে জানা গেছে, ইফাত তার দ্বিতীয় স্ত্রীর একমাত্র সন্তান।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা, গাজীপুর, সাভার, নরসিংদী, বরিশালসহ বিভিন্ন জায়গায় মতিউরের নামে বাড়ি, জমি, ফ্ল্যাট, প্লটসহ অন্যান্য স্থাবর সম্পদ রয়েছে। তার প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজ বর্তমানে নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলা চেয়ারম্যান। এ দম্পতির মেয়ে ফারজানা রহমান ইপ্সিতা ও ছেলে তৌফিকুর রহমান অর্ণবের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে কোটি কোটি টাকা জমা রয়েছে।
জানা যায়, সব মিলিয়ে তিনি শত শত কোটি টাকার মালিক। তার নামে-বেনামে ঢাকায় বিভিন্ন ব্যাংকে প্রায় ৪০ কোটি টাকার এফডিআর রয়েছে। দুর্নীতি-সংক্রান্ত ঝামেলা এড়ানোর জন্য স্ত্রী ও আত্মীয়-স্বজনের নামে সম্পদ রেখেছেন তিনি।
মতিউর রহমানের নামে-বেনামে আরও সম্পদের তথ্য পেয়েছে দুদক। সংস্থাটির প্রাথমিক যাচাই-বাছাইয়ে বসুন্ধরার ডি-ব্লকের ১ নম্বর রোডে পাঁচ কাঠা জমির ওপর সাততলা বাড়ি রয়েছে বলে জানা যায়। এর মূল্য প্রায় ৪০ কোটি টাকা। বাড়িটির দ্বিতীয়তলায় তিনি থাকেন। বাকি ফ্ল্যাট ভাড়া দেয়া।
ময়মনসিংহের ভালুকার প্রায় ৩০০ বিঘা জমির ওপর তার রপ্তানিমুখী জুতার কারখানা রয়েছে। এর নাম গ্লোবাল সুজ। রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকায় মতিউরের রয়েছে বিপুল সম্পদ, প্লট ও বাগানবাড়ী। জেসিএক্স নামে একটি যৌথ ডেভেলপার কোম্পানি বসুন্ধরায় ১৪ তলা বাণিজ্যিক ভবনের নির্মাণকাজ করছে। এতে তার মালিকানা রয়েছে। গাজীপুর সদরের খিলগাঁও মৌজায় বিপুল পরিমাণ জমি রয়েছে তার।
রাজধানীর অদূরে সাভার থানার বিরুলিয়া মৌজায় আটটি খতিয়ানে ৬০ শতাংশ এবং একই মৌজায় স্ত্রীর নামে ১৪.০৩ শতাংশ জমি রয়েছে। গ্লোবাল সুজ কোম্পানির নামে সাতটি খতিয়ানে ৬০ শতাংশ জমি রয়েছে। এর মূল্য প্রায় ৯০ কোটি টাকা। এ ছাড়া তাদের নামে বিলাসবহুল গাড়ি রয়েছে বেশ কয়েকটি। দুদক সূত্র জানায়, এর বাইরে তার আরও সম্পদ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
পাঠকের মতামত
We wish the criminal mastermind behind all evils be wiped out first.
দুদকের সফলতা
Anti corruption, anti anti corrup. anti anti anti corrup.
১৫% ট্যাক্স দিলে কালো টাকা সাদা হয়ে যায়, তাহলে এবারও মাফ পেয়ে যাবে।
আরে এ কতবড় বাটপার ইবলিশ ও হার মানলো চারবার।
দুদক এর যারা চারবার তাকে ক্লিনচিট দিয়েছে তাদেরও বিচারের আওতায় আনা হোক।
চার বার তার তদন্ত ফাইল এর তদন্ত না করেই দায়মুক্তি দেয়া দুদকের সেসকল কর্মকর্তাদের তদন্ত হবে তো? নাকি সেই ফাইল ও চাপা পড়ে যাবে? সব তদন্তেই মোটা মোটা অন্কের লেনেদেনের তদন্ত টাও জনগন/দেশবাসি চায়।
দুর্নীতিবাজরা সাংঘাতিক সুসংগঠিত।প্রয়োজনে এরা একে অন্যের জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত।এজন্যই এরা পার পেয়ে যায়। আর ভুক্তভোগীরা অসংখ্য উপদলে বিভক্ত।
২য় স্ত্রীর একমাত্র সন্তান ইফাত?! উনার না আরো সন্তান আছে? কী লেখেন এসব?!
যার বা যাদের হস্তক্ষেপে চার দফা অনুসন্ধান থেমে ছিল তাদের বিরুদ্ধেও অনুসন্ধান করা হউক। তারাও বিরাট অর্থের বিনিময়েই প্রভাব খাটিয়েছিলেন ।
চার দফা দুদকের অনুসন্ধান চাপা দেন মতিউর মতিউর রহমান তুমি এগিয়ে চলো ঘুষ বাবাজি থাকতে তোমার কিছুই হবে না বড় অঙ্কের ঘুষ দিলে কোন দুর্নীতি পাওয়া যাবে না।মতিয়ার রহমান তার প্রমাণ।
দুর্নীতি করে যেমন অধৈল সম্পদের মালিক হয়েছেন, তেমনি হয়তো দুর্নীতি করে জায়গায় বেজয়গায় শতে শত ছেলেমেয়ের জন্ম দিয়েছেন ? সেটারও দুদক তদন্ত করে বিচার করা হোক।
এতদিন দুদুক কি করেছে? ৪ বার যারা তদন্তকরে তাকে দায়মুক্তি দিয়েছে তারা কতটাকা ঘুষ নিয়েছে, তাও তদন্ত করে শর্ষের ভুত তারাতে হবে।