খেলা
জয়ে ‘ঈদ শুভেচ্ছা’
ইশতিয়াক পারভেজ, সেন্ট ভিনসেন্ট (ওয়েস্ট ইন্ডিজ থেকে)
(৩ মাস আগে) ১৭ জুন ২০২৪, সোমবার, ১২:৫১ অপরাহ্ন
মাত্র ১০৬ রান! নেপালের সঙ্গে হারলে তাকিয়ে থাকতে হবে শ্রীলঙ্কা-নেদারল্যান্ড ম্যাচের দিকে। শুধু বাংলাদেশের সাংবাদিকরা নয় সব ক্রিকেট ভক্তই তখন দ্বিতীয় পথের দিকে। সবাই তখন টাইগারদের সঙ্গে লঙ্কানদেরও সমান তালে জয়ের অপেক্ষায়। তবে না, তানজিম হাসান সাকিব ও মোস্তাফিজুর রহমানের দূর্দান্ত রেকর্ডময় বোলিংয়ে নেপাল গুটিয়ে গেল ৮৫ রানে। ২২ রানের হারে তখন নেপাল ডাগআউটে যেন নেমে আসে হীমালয়ের বরফ শীতল নীরবতা।
বাংলাদেশ দল যখন জয়ের জন্য লড়াই করছিলো ঠিক তখন দেশের সবাই ঈদের দিনে ডাবল খুশির অপেক্ষায়। শেষ পর্যন্ত দুটিই হয়েছে, টাইগাররা নিশ্চিত করেছে সুপার এইটে খেলা। সেই সঙ্গে নেপালকে হারিয়ে দেশবাসীকে দিয়েছে ঈদে ‘জয় শুভেচ্ছা’।
তবে এমন আনন্দের মাঝেও টাইগার অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত স্বীকার করে নিয়েছেন নিজেদের ব্যাটিং নিয়ে শঙ্কার কথা। সুপার এইটে এমন ব্যাটিং যে দলের ভয়ঙ্কর হতে পারে তা নিয়ে শান্ত বলেন, ‘অবশ্যই চিন্তার কারণ। আর এই ভাবে ব্যাটিং করলে মনে হয়না যে টিমের জন্য ভালো। শুরুটা খুবই গুরুত্বপূর্ন। ব্যাটসম্যানরা পারছেননা, যা সত্যি চিন্তার। তবে এখান থেকে আমাদের যেভাবে হোক বের হয়ে আসতে হবে। যদিও কিভাবে বের হতে হবে ব্যাটিং ব্যর্থতা থেকে তা নিয়ে অনেক আলোচনা-পরিকল্পনাও হয়। কিন্তু একই ভুল বার বারই হচ্ছে। আমি আশা করবো পরবর্তি রাউন্ডে যত কম করা যায়।’
১০৭ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে নেপাল শিবিরে প্রথমেই তানজিম সাকিব আঘাত হানেন। নতুন বলে তার আগুনে গোলায় তছনছ হয়ে গিয়েছিল নেপালি লাইনআপ। কল্পনা করা যায়, টি২০ ম্যাচে ৪ ওভার বোলিং করে ২১টি ডট বল! আর মাত্র ৭ রান দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ চার উইকেট বাগিয়ে নেয়া! যা করেছে রেকর্ডও। এটাই অন্য বোলারদের উজ্জীবিত করেছে।
তানজিমের পর মোস্তাফিজ আসেন। তাদের পর আসেন সাকিব আর রিশাদ। সঙ্কটজনক পর্যায়গুলোতে তারা উইকেট নিয়ে দলকে এই জয়ে সহায়তা করেন। শেষ দুটি উইকেট তো সাকিবই নিয়েছেন। আর মোস্তাফিজ নিয়েছেন তিনটি।
শেষ দুই ওভারে নাটকীয়তা চরম পর্যায়ে উপনীত হয়েছিল। নেপালের প্রয়োজন ছিল ১২ বলে ২২ রান। ১৯তম ওভারে দুর্দান্ত বোলিং করেন মোস্তাফিজুর রহমান। মেডেনসহ শিকার করে উইকেট। শেষ ওভারে নেপালের দুই ব্যাটারকে আউট করে বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত করেন সাকিব আল হাসান।
এমন দারুণ বোলিংয়ে অস্বস্তির ব্যাটিংয়ের পর মিলেছে স্বস্তির জয়। অন্যদিকে শ্রীলঙ্কার বিশ্বকাপে প্রথম জয় শুধু তাদের স্বান্তনাই হয়ে থাকলো। কারো জয়ে চড়ে বাংলাদেশকে নিশ্চিত করতো হলোনা সুপার এইট।
এর আগে টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ। ম্যাচের প্রথম বলেই ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে শট খেলার চেষ্টা করেন তানজিদ হাসান। তাতে বোলার সোম্পাল কামিকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন সাজঘরে। বিশ্বকাপের চার ম্যাচে তানজিদের মোট রান ৪৭।
এ দিন পজিশন বদলে দুজন। ওপেনিংয়ে লিটন, তিনে শান্ত দলের হাল ধরতে নামেন। কিন্তু তাতে লাভ কিছু হয়নি। ১২ বলে ১০ করে বিদায় নেন লিটন। অন্যদিকে অধিনায়কে এই ম্যাচেও ব্যর্থ, ৫ বলে ৪ রান করেন তিনি। চলতি আসরে ৪ ম্যাচে টাইগার অধিনায়ক করেছেন ৪৪ বল খেলে ২৬ রান।
বাংলাদেশে বাজে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি নেপালের নতুন বলের দুই বোলার পেসার সোম্পাল কামি ও অফ স্পিনার দিপেন্দ্রা সিং ঐরিকেও কৃতিত্ব দিতে হবে দারুণ বোলিংয়ের জন্য। উইকেটে স্পিন ধরছে দেখে নিজেকে আক্রমণে আনেন নেপাল অধিনায়ক রোহিত।
অনিয়মিত এই স্পিনারের প্রথম ওভারেই সুইপ করার চেষ্টায় উইকেট বিলিয়ে দেন তাওহিদ হৃদয়। ৩০ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ তখন ধুঁকছে।
দুই অভিজ্ঞ সাকিব আর হাসান ও মাহমুদউল্লাহ চেষ্টা করেন প্রতিরোধ গড়ার। একটা জুটিও গড়ে উঠছিল। সেই সম্ভাবনা শেষ হয়ে যায় আত্মঘাতী রান আউটে। মাহমুদউল্লাহ ফেরেন ১৩ রান করে, মাথা নিচু করে ক্রিজে বসে পড়েন সাকিব। একটু পর সাকিব নিজেও আউট হন রোহিতের টার্নে পরাস্ত হয়ে। তার ১৭ রানই শেষ পর্যন্ত দলের সর্বোচ্চ রান হয়ে থাকে।
ধুঁকতে থাকা জাকের আলি ২৬ বলে ১২ ও তানজিম হাসানকে দুটি গুগলিতে বোল্ড করেন সান্দিপ লামিছানে। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ১০০ উইকেট পূর্ণ করেন তিনি ৫৪ ম্যাচ খেলে। ৫৩ ম্যাচে ১০০ ছুঁয়ে বিশ্বরেকর্ড রাশিদ খানের। সপ্তদশ ওভারে কুশাল ভুর্তেলকে টানা দুই বলে ছক্কা ও চার মেরে রান একটু বাড়ান রিশাদ হোসেন। ৭ বলে ১৩ করে তিনিও যখন বিদায় নিলেন, বাংলাদেশের রান তখন ৯ উইকেটে ৮৮।
শেষ জুটিতে তাসকিন ও মুস্তাফিজ দলকে একশ পার করেন। ব্যাট হাতে অবদান রাখার পর নিজেদের আসল কাজেও সফল বোলাররা। প্রথম ইনিংস শেষে সঙ্গী থাকা শঙ্কাগুলো তাই রূপ নেয় স্বস্তিতে। বল হাতে ম্যাচ জিতিয়ে এসে তরুণ পেসার সাকিবও ব্যাটিং নিয়ে জানান নিজের অস্বস্তির কথা। তিনি বলেন, ‘অবশ্যই ব্যাটিংটা চিন্তার। তবে আমরা একে অপরের উপর বিশ্বাস রাখি। আশাকরি ব্যাটসম্যানরা ঘুড়ে দাড়াবে।’