প্রথম পাতা
পবিত্র হজ আজ
মানবজমিন ডেস্ক
১৫ জুন ২০২৪, শনিবার
একদিকে তীব্র গরম। অন্যদিকে গাজায় মুসলিমদের বিরুদ্ধে ভয়াবহ গণহত্যা। মুসলিম জাহানে এমন এক বেদনাবিধুর পরিবেশে এবার পালিত হচ্ছে পবিত্র হজ। আজ শনিবার পবিত্র আরাফাত দিবস। এ দিনটিকেই পবিত্র হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সূর্যোদয়ের আগে থেকেই তাঁবুর শহর মিনা থেকে দলে দলে হজযাত্রী ইসলামের ঐতিহ্যমণ্ডিত, মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর স্মৃতিবিজড়িত আরাফাতের ময়দানে ছুটে চলেছেন। লাখো কণ্ঠে তাদের উচ্চারিত হচ্ছে- ‘লাব্বাইক, আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হাম্দা ওয়ান্নি’মাতা লাকা ওয়ালমুলক লা শারিকা লাক’। অর্থাৎ- ‘আমি হাজির, হে আল্লাহ আমি হাজির, তোমার কোনো শরিক নেই, সব প্রশংসা ও নিয়ামত শুধু তোমারই, সব সাম্রাজ্যও তোমার।’ সাদা ইহরাম বাঁধা হজযাত্রীদের এ নয়নাভিরাম দৃশ্য মরুর প্রান্তরে প্রাণের দোলা দিচ্ছে। তারা সব কিছু ভুলে এক আল্লাহর ইবাদতে শামিল। এর আগে পবিত্র মক্কা থেকে গতকাল তারা তাঁবুর শহর হিসেবে খ্যাত মিনায় গমন করেন। সেখানে রাত্রিযাপন করেন। এসময় আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন ছিলেন হজযাত্রীরা। তারপর আজ যাত্রা করেন আরাফাতের ময়দানের উদ্দেশ্যে। এই সেই আরাফাতের ময়দান, যেখানে দাঁড়িয়ে বিদায় হজের ভাষণ দিয়েছিলেন মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)। সেই ভাষণের মাধ্যমে তিনি বিশ্ব মানবতাকে ভবিষ্যতের দিক নির্দেশনা দিয়েছিলেন। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যাওয়া হজযাত্রীদের পোশাকে কোনো হেরফের নেই। তাদের হৃদয়ের আবেদনে কোনো পার্থক্য নেই। শুধু মুহুর্মুহু উচ্চারিত হচ্ছে- লাব্বাইক ধ্বনি। তারা যখন ইসলামের এই পবিত্র রীতি পালন করছেন, তখন গাজায় মুসলিমনিধনে মত্ত ইসরাইল। অব্যাহতভাবে সেখানে মুসলিম নিধন চালিয়ে যাচ্ছে তারা।
ইসলামের অন্যতম পবিত্র রমজানের সময়ও তারা বিরতি দেয়নি। এজন্য হজে যাওয়া বহু হজযাত্রীর মনে সেইসব মুসলিম ভাই-বোন, শিশুদের জন্য ব্যাকুলতা। তাদের জন্য মনখুলে দোয়া করছেন তারা। এবার সৌদি আরবের বাদশা সালমানের আমন্ত্রণে গাজায় নিহত হয়েছেন বা আহত হয়েছেন এমন ১০০০ পরিবারের সদস্যরা পবিত্র হজ পালন করছেন। এ বছর কমপক্ষে এক দশক পরে প্রথমবার সিরিয়ার দামেস্ক থেকে সরাসরি ফ্লাইটে মক্কায় হজ করতে গিয়েছেন দেশটির হজযাত্রীরা। এসব তথ্য দিয়েছে অনলাইন আরব নিউজ ও আল-জাজিরা। এতে বলা হয়, গতকাল অতি উচ্চ তাপমাত্রার মধ্যে মুসলিমরা পবিত্র কাবা থেকে মিনায় সমবেত হন। এর মধ্যদিয়ে এ বছর পবিত্র হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এরও আগে তারা পবিত্র কাবাকে তাওয়াফ করেন। এ বছর সৌদি আরবের বাইরে থেকে কমপক্ষে ১৫ লাখ হজযাত্রী হজ পালন করছেন। এরসঙ্গে আছেন সৌদি আরবের হজযাত্রী। ইসরাইল ও যোদ্ধাগোষ্ঠী হামাসের মধ্যকার ভয়াবহ যুদ্ধের ভেতর এবার এই হজ পালিত হচ্ছে। এই যুদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যকে আঞ্চলিক এক যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। মিশরের সঙ্গে গাজার দক্ষিণের বন্দর রাফা বন্ধ রয়েছে। সেখানে যুদ্ধ চলছে। মিনায় যাওয়ার পথে ভারতীয় হজযাত্রী মোহাম্মদ রফিক বলেন, আমরা মুসলিমদের জন্য, আমাদের দেশের জন্য, জনগণের জন্য, সমগ্র বিশ্বের মুসলমানদের জন্য, বিশেষ করে ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য দোয়া করছি। ওদিকে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ বলেছে, দখলিকৃত পশ্চিম তীর থেকে এবার হজে গিয়েছেন ৪২০০ হজযাত্রী। এ বছর হজে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন গাজার খান ইউনুসের ৭৫ বছর বয়সী নারী আমনা আবু মুতলাক। তিনি বলেন, হজ করা থেকে বঞ্চিত হলাম। ক্রসিং পয়েন্টগুলো যুদ্ধের কারণে এবং ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় পারলাম না। তারা (ইসরাইল) আমাদেরকে সবকিছু থেকে বঞ্চিত করছে। এবার হজ পালিত হচ্ছে গ্রীষ্মের ভয়াবহ তাপমাত্রার মধ্যে।
পাঠকের মতামত
আরাফাতের ময়দানে অবস্থান কে হজ বলে।