বাংলারজমিন
এমপি আনার হত্যার মোটিভ আসলে কি রাজনৈতিক না সোনা চোরাচালান?
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
১৫ জুন ২০২৪, শনিবারএমপি আনার হত্যার মোটিভ আসলে কি তা সুনির্দিষ্ট ভাবে এখনো প্রকাশ করা হয়নি। তবে তিনি যে হত্যার শিকার হয়েছেন তার একটি নৃশংস ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। আলোচিত এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে কলকাতার পুলিশ ও সিআইডি গণমাধ্যমে আর কোনো বক্তব্য দিচ্ছেন না। তবে এক্ষেত্রে সরব রয়েছে বাংলাদেশের ডিবি পুলিশ। এদিকে আনারের বন্ধু সেই গোপাল বিশ্বাসও রয়েছে পর্দার আড়ালে। তাকে মিডিয়ার সামনে অদৃশ্য কারণে আনা হচ্ছে না। তার বাড়িতে এমপি আনারের ব্যবহার্য্য জিনিসপত্র কি কি আছে তাও ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়নি। মানুষের হাড়গোড় ও মাংসের টুকরা পাওয়া গেলেও এমপি আনারের ডেডবডির স্বীকৃতি মেলেনি এখনো। পাওয়া যায়নি তার চশমা, পরিহিত কাপড়, পরিচয়পত্র, লাল পাসপোর্ট, হাতঘড়ি ও বাংলাদেশ থেকে নিয়ে যাওয়া ব্যাগ। আনারের পরিবার চাচ্ছে এক টুকরো মাংস হলেও তা ইসলামী রীতিমতে দাফন করতে পারতাম। কিন্তু হত্যার এতদিন পার হলেও এখনো তা হয়নি। এ নিয়ে আনার পরিবারের মধ্যে দিন দিন ক্ষোভ বাড়ছে।
প্রথম বলা হলো সোনা চোরাচালানের দ্বন্দ্ব নিয়ে আনার খুন হয়েছেন। সেখানে অর্থের ভাগাভাগি, টাকা মেরে দেয়া, সীমান্তে আধিপত্য বিস্তার ও ব্যবসায়িক বিরোধের কথাও উঠে আসে। এখন বিষয়টি রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ও বিরোধের দিকে গড়াচ্ছে। ফলে সহসাই এমপি আনার হত্যার তদন্ত থামছে না বলে অনেকেই মনে করছেন। এদিকে ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি আনার হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু জিজ্ঞাসাবাদে নানা তথ্য দিচ্ছেন প্রশাসনকে। তার দেয়া তথ্যমতে ঝিনাইদহ জেলার অনেকেই ফেঁসে যেতে পারেন। আটকের পর দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদে তিনি অনেকটা ভেঙে পড়লেও তথ্য দিতে থাকেন তদন্তকারী কর্মকর্তাদের কাছে। তথ্য পেয়ে অবাকই হচ্ছেন তারা। তার মুখে নাম আসছে বড়বড় রাঘববোয়ালদের। যশোর ও ঝিনাহদহের পাশাপাশি ঢাকার কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তির নামও এসেছে। তাদের মধ্যে আছেন রাজনৈতিক নেতা, সাবেক সংসদ সদস্য ও ব্যবসায়ীর নাম। যাদের নাম এসেছে তাদের কললিস্ট পরীক্ষা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে ঝিনাইদহ বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির এক নেতার ওপর নজরদারি শুরু করেছে পুলিশ। তার দুইটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে ঢাকায় টাকা পাঠানো হয়েছে এমন কথাও শোনা যাচ্ছে। ওই সব রাঘববোয়ালরা আনারকে হত্যা করার জন্য সম্মিলিতভাবে ৫ কোটি টাকা দিলেও খরচ হয়েছে মাত্র অর্ধকোটি টাকা। বাকি সাড়ে ৪ কোটি টাকা মেরে দিয়েছে খুনের মাস্টারমাইন্ড আকতারুজ্জামান শাহীন। অর্থ দেয়ার পাশাপাশি মিন্টুকে ঝিনাহদহে উপনির্বাচনে এমপি বানানোর টোপ দিয়ে রেখেছিলেন রাঘববোয়ালরা।
সংশ্লিষ্টরা জানায়, আনার হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত সাইদুল করিম মিন্টুকে ৮ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে তদন্তকারী সংস্থা। বৃহস্পতিবার তাকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়েছিল পুলিশ। এর আগে মঙ্গলবার বিকাল থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত গোয়েন্দা কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় মিন্টুকে। কিন্তু কোনোভাবেই তিনি মুখ খুলছিলেন না। পরবর্তীতে প্রযুক্তিগত তথ্য-প্রমাণ হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরুর একপর্যায়ে সবকিছু স্বীকার করে গোয়েন্দাদের আদ্যপান্ত জানান মিন্টু। তাছাড়া রিমান্ডে থাকা গ্যাস বাবুও তার নেতা মিন্টুর জড়িত থাকার বিষয়ে তথ্য দেন। মূলত ঝিনাইদহ-৪ আসনে এমপি হওয়ার লোভে পড়ে নেপথ্যে থাকার একটি বড় শক্তির ইন্ধনে তিনি এই খুনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন বলে গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তারা মনে করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা বলেছেন, তার হয়ে কাজ করেন রিমান্ডে থাকা জেলার আরেক নেতা গ্যাস বাবু। হত্যাকাণ্ড বাস্তবায়নে ছিলেন কোটচাঁদপুরের শাহীন ও চরমপন্থি নেতা আমান উল্লাহ ওরফে শিমুল ভূঁইয়া এবং তার সঙ্গীরা।