খেলা
‘হৃদয়ের রাগ’ হৃদয়ের হতাশা
ইশতিয়াক পারভেজ, নিউ ইয়র্ক (যুক্তরাষ্ট্র) থেকে
১২ জুন ২০২৪, বুধবার
নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশ ক্রিকেটের দুঃখের সংখ্যা হয়ে রইলো ‘৪’। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে শেষ ওভারে এই হারের ব্যবধান হয়তো টাইগার ভক্তদের পোড়াবে বহুদিন। তবে আম্পায়ারের ভুল সিদ্ধান্ত না হলে এই চারটি রানও হয়তো পেয়ে যেতে পারতো বাংলাদেশ! ঘটনা, সপ্তদশ ওভারের সময়। ওটনিল বার্টম্যানের বল মাহমুদউল্লাহর পায়ের লেগে চলে যায় বাউন্ডারিতে। তবে প্রোটিয়াদের এলবিডব্লিউর আবেদনে বেশ দ্রুতই আঙ্গুল তুলে দেন আম্পায়ার। মাহমুদউল্লাহ রিভিউ নিতেও বেশি দেরি করেননি। রিভিউয়ে দেখা যায়, বল চলে যেত লেগ স্টাম্পের বেশ বাইরে দিয়ে। আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত তাই পাল্টে যায়। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী, আম্পায়ার আউট দেয়ার পর সেই সিদ্ধান্ত রিভিউয়ে বদলে গেলেও কোনো রান যোগ হয় না। এটাতেই পুড়েছে টাইগারদের কপাল। এমন হারে ভীষণভাবে খেপেছেন জাতীয় দলের ব্যাটার তাওহীদ হৃদয়। কোনো রাগঢাক না রেখেই সমালোচনা করেছেন এমন ভুল নিয়ম ও আম্পারিয়ংয়ের। তিনি বলেন, ‘সত্যি বলতে, সেটি ভালো সিদ্ধান্ত ছিল না। এমন কম রানের ম্যাচে আমাদের জন্য ভালো কিছু ছিল না সেটি। আমার মতে আম্পায়ার আউট দিয়েছেন, তবে আমাদের জন্য কঠিন ছিল। ওই চারটি রান পেলে ম্যাচের চিত্র ভিন্ন হতে পারতো। আর কিছু বলার নেই।’ অন্যদিকে তার মনে পুষছেন অভিমানও। তার মতে তিনি আউট না হলে হয়তো পরিস্থিতিটাও হতে পারতো একেবারেই ভিন্ন। এমন হারে নিজেকেই যে দুষছেন তরুণ এই ব্যাটার।
চার রান পেলে বাংলাদেশের প্রয়োজন পড়তো ২২ বলে ২২ রান। কিন্তু তা না পাওয়ায় তা হয়ে যায় ২২ বলে ২৬ রান। শুধুকি তাই নানা বাধা পেরিয়েও ম্যাচ ছিল টাইগারদের হাতের মুঠোয়। শেষ ১৮ বলে ২০ হলেই জয়। উইকেট বাকি ছিল ৬টি। তখনো ক্রিজে টিকে ছিলেন দুই ব্যাটসম্যান তাওহীদ হৃদয় ও মাহমুদউল্লাহ। কিন্তু ৩৭ রান করে হৃদয় আউট হয়ে যান অষ্টাদশ ওভারের প্রথম বলে। চাপে পড়ে দিশা হারায় বাংলাদেশ। শেষ ওভারে সমীকরণ দাঁড়ায় ১১ রানে। সেখানেও পারেনি বাংলাদেশ। দুই বলে যখন প্রয়োজন ছয় রান, বাঁহাতি স্পিনার কেশব মহারাজের ফুল টস ডেলিভারি পেয়েও আউট হয়ে যান শেষ ভরসা মাহমুদউল্লাহ। শেষ পর্যন্ত ভীষণ নাটকীয়তায় ম্যাচে হার মানতে হয় টাইগারদের। ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে সম্ভাব্য ওই চার নিয়ে প্রশ্ন করা হলে সরাসরিই আম্পায়ারের দিকে আঙ্গুল তুললেন হৃদয়। শুধু তাই নয় তার আউটটিও যে আম্পায়ার্স কলের কারণেই। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, ওই চারটি রান বা দু’টি ওয়াইড, খুব ক্লোজ কল ছিল। এমনকি আমার আউটও আম্পায়ার্স কল ছিল। আমার কাছে মনে হয়, এই জায়গাগুলোয় উন্নতির সুযোগ আছে। আইসিসি যে নিয়ম করেছে, এটায় তো আমাদের হাত নেই। আমার মনে হয় যেটা হয়েছে, হয়ে গেছে।’
অন্যদিকে দল যখন ২৯ রানে ৩ উইকেট হারিয়েছে তখন ক্রিজে আসেন সাকিব আল হাসান। সবচেয়ে অভিজ্ঞ ক্রিকেটার। বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার ৪ বলে ৩ রান করে খেললেন বাজে এক শট। দলের যখন তাকে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তখন তিনি উইকেট বিলিয়ে দিলেন। ঠিক তার কিছুক্ষণ পর তাকে যেন অনুসরণ করলেন ওপেন করতে নামা অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। ২৩ বলে ১৪ রান করার পর তিনিও ফিরলেন সাজঘরে। ৫০ রান ৪ উইকেট হারিয়ে। দলের সেরা দুই ব্যাটার যখন এ ভাবে বাজে শটে আউট হন। তখন নাসাউ কাউন্টির কঠিন উইকেটে বাকি ব্যাটারদের বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে যা। সেখানে প্রোটিয়া ব্যাটিং শক্তির সংগ্রহ ছিল ১১৩ রান ৬ উইকেট হারিয়ে। তবে হৃদয় হয়তো অভিমান থেকেই বললেন আসলে তিনি অন্য কাউকে দোষ দিতে চান না। তিনি বলেন, ‘আমি আউট না হলেই ম্যাচটা জিততে পারতাম। তারা তো (সাকিব-শান্ত) আরও অনেক আগেই আউট হয়েছে। তবে হৃদয় যত যাই বলুক না কেন এই ম্যাচ এই দু’জন ব্যাটারের বাজে শটেই হাত ছাড়া হয়েছে তা ক্রিকেট প্রেমীদেরই দাবি। এ ছাড়াও আইসিসি’র নিয়ম নিয়েও বেশ অসন্তোষ হৃদয়ের কণ্ঠে। তিনি বলেন, ‘নিয়ম তো আইসিসিই করেছে, এটা তো আমার হাতে নেই। কিন্তু ওই সময় ওই চারটি রান খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল আমাদের জন্য। আমি মনে করি যে, আম্পায়ার কল দিয়েছেন, আম্পায়ার কল দিতেই পারে। ওরাও মানুষ, ভুল হতেই পারে। কিন্তু আরও দু-একটি ওয়াইড ছিল, যেগুলো ওয়াইড দেয়নি। এখানে এরকম ভেন্যুতে খেলা, যেখানে রান হচ্ছে না, লো-স্কোরিং ম্যাচ হচ্ছে, সেই জায়গায় একটি-দু’টি রানও অনেক বড় ব্যাপার।’