দেশ বিদেশ
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেল সুপারের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড়
চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি
৯ জুন ২০২৪, রবিবারচাঁপাইনবাবগঞ্জ জেল সুপার মো. শরীফুল ইসলামের বিরুদ্ধে কারাবন্দির কাছে টাকা, আইফোন দাবিসহ নানান অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে সম্প্রতি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন সদ্য কারামুক্ত এক কয়েদি। অভিযোগকারী রেজাউল করিম বাবু নাচোল উপজেলার বাসিন্দা ও একই উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান। তার অভিযোগের বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. জিয়াউর রহমান। তবে তার বিরুদ্ধে উঠা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন জেল সুপার।
বাবু অভিযোগে উল্লেখ করেন, ২৯শে এপ্রিল ওয়ারেন্টমূলে তাকে আটক করে নাচোল থানা পুলিশ জেলা কারাগারে প্রেরণ করেন। এরপর জেল সুপার গত ৩০শে এপ্রিল কারারক্ষী সাত্তারের মাধ্যমে আমার নিজস্ব ফোন থেকে বিকাশের মাধ্যমে ১২ হাজার টাকা চাপ প্রয়োগ করে আদায় করেন। পরবর্তীতে ৭ই মে কারারক্ষী মনোয়ার (কারারক্ষী নং-৩১৯৭৫) ও মামুন দু’জন জেল সুপারের নির্দেশে আবারো চাপ প্রয়োগ করে বিকাশের মাধ্যমে ১০ হাজার টাকা আমার স্ত্রীর কাছ থেকে নেন। কয়েকদিন জেলে অতিবাহিত হওয়ার পর ১১ই মে আমাকে ও মধুমতি এনজিও’র মালিককে জেল সুপার তার কার্যালয়ে ডেকে পাঠায়। আনুমানিক দুপুর ২টা থেকে ৩টার মধ্যে তার অফিসে ডেকে পাঠানোর পর বলে যে- মধুমতি এনজিও’র মালিককে প্রতি মাসে এক লাখ টাকা দিতে হবে। গত মাসে দিয়েছেন, এই মাসেও দিতে হবে। তারপর আমাকে রুমে নিয়ে বলেন, তার মেয়ের জন্য একটি আইফোন লাগবে। যা সিসি টিভি ফুটেজ চেক করলে পাওয়া যাবে। আমি দিতে না চাওয়ায় মেডিকেল থেকে বের করে দিয়ে পানিশমেন্ট ওয়ার্ড মহানন্দা-১২তে পাঠায়। যেখানে মেডিকেল ডাক্তার ১৩ই মে কোমরের ব্যথার জন্য নিচতলায় যে কোনো ওয়ার্ডে থাকার সুপারিশ করলেও তিনি মহানন্দা-১২তে পাঠিয়ে দেন। পরবর্তীতে জেল সুপার ২৭শে মে একটি সেলে প্রেরণ করেন। এছাড়া নিয়ম অনুযায়ী আমাকে পরিবারের সঙ্গে দেখা ও মোবাইলে কথা বলতে দেয়া হতো না। এরই মধ্যে টাঙ্গাইল থেকে ১৪ই মে পিডব্লিউ এলে সেখানে হাজিরার তারিখ থাকে ৩রা জুন। কিন্তু আমাকে ১৮ই মে টাঙ্গাইল পাঠিয়ে দেয়া হয়। যেখানে প্রথম যুগ্ম জেলা জজ চাঁপাইনবাবগঞ্জে ২১শে মে আমার হাজিরা থাকে। এরপরে ২০শে মে আমাকে আবার চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলে নিয়ে আসা হয়। এভাবে জেলসুপার শরীফুল ইসলাম আমাকে নির্যাতন করতে থাকেন। অভিযোগে আরও উল্লেখ করেন- জেলখানার গেটের বাম পার্শ্বে অবৈধভাবে গরুর খামার স্থাপন করেছেন শরীফুল ইসলাম। সেই খামারের যাবতীয় খাবারের ব্যবস্থা জেলখানার কয়েদিদের খাবারের অংশ থেকে দেয়া হয়। সে খামারে কারারক্ষীদের দিয়ে দেখাশুনা করানো হয়। প্রতিদিন সকালে ও বিকালে ভ্যানে করে ৮টি ড্রামে ১০০ কেজি চালের ভাত, লবণ ও আটা খামারে নিয়ে যাওয়া হয়।
এছাড়াও আরও অভিযোগ করা হয়, জেলখানার মাদক-হেরোইন ব্যবসায়ীদের মোবাইলে কথা বলার মাধ্যমে ব্যবসা করার সুযোগ করে দেয়া হতো। বিনিময়ে তাদের কাছ থেকে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। খাবারের মান হিসেবে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ৪০ গ্রাম ডায়েট বলা থাকলেও তিনি ১৫ থেকে ২০ গ্রাম দিয়ে খাবার দিয়ে থাকে। এছাড়াও পিসি ক্যান্টিন এ খাবারের মূল্য দ্বিগুণ ধরা হয়। উপরোক্ত বিষয়গুলো সরজমিন তদন্ত করে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যেমে ব্যবস্থাগ্রহণের দাবি জানানো হয়। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জেল সুপার শরীফুল ইসলাম বলেন, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ভিত্তিহীন। অভিযোগকারী রেজাউল করিম বাবু কিছুদিন আগে সাতটি মামলা নিয়ে কারাগারে আসেন। এর মধ্যে ছয়টিতে তিনি সাজাপ্রাপ্ত ছিলেন। কারাগারে আসার পর নিজেকে ভিআইপি দাবি করে নানান সুযোগ-সুবিধা দাবি করেন। নানা বিষয়ে নিয়মের বাইরে গিয়ে সুবিধা দাবি করেন। চাহিদামতো সুবিধা দিতে না পারায় তিনি এমন অভিযোগ করেছেন বলেও জানান তিনি।