ঢাকা, ২৬ জুন ২০২৪, বুধবার, ১২ আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৯ জিলহজ্জ ১৪৪৫ হিঃ

রকমারি

জাপানিরা কেন শান্তি বা ভি চিহ্ন ভালোবাসে?

মানবজমিন ডিজিটাল

(৪ সপ্তাহ আগে) ২৭ মে ২০২৪, সোমবার, ১২:৫২ অপরাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ১২:১৩ পূর্বাহ্ন

mzamin

গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠান, চেরি ফুলের সৌন্দর্য উপভোগে আয়োজিত অনুষ্ঠান কিংবা অন্য কোনো উৎসব আয়োজনে জাপানিদের লক্ষ্য করে ক্যামেরা তাক করলে আপনি অন্তত একজনকে এবং সচরাচর আরও বেশি লোকজনকে দেখবেন, তারা হাতের দুই আঙুল তুলে শান্তির চিহ্ন তৈরি করছেন। কেন এই সংকেত জাপানে এতো জনপ্রিয় হয়ে ওঠে?

স্বতঃস্ফূর্ত ছবির পোজ

এনএইচকে ওসাকার রাস্তায় এলোমেলোভাবে বেছে নেয়া ৫৯ জনকে ছবির জন্য পোজ দিতে বলেছিল। তাদের মধ্যে ৪৭ জন বা ৮০ শতাংশ, স্বতঃস্ফূর্তভাবে শান্তি চিহ্ন তৈরি করেন। এটা তারা কেন করলেন জিজ্ঞাসা করা হলে, একজন নারী বলেন তার মাথায় ‘কেবল এটাই’ এসেছিল। অপর একজন বলেন, ছবি তোলার সময় তিনি সবসময়ই শান্তির চিহ্ন দেখান। কিন্তু এই প্রথার উৎপত্তি আসলে কীভাবে, তা কারোরই জানা ছিল না।

‘ভি ফর ভিক্টরি’

সাংস্কৃতিক নৃতাত্ত্বিক নোমুরা মাসাকাযু ১৯৯১ সালে চুও-কোরোন ম্যাগাজিনে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে এর ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন। তিনি লিখেছেন যে হাতের তালু বাইরের দিকে মুখ করে মধ্যম ও তর্জনী আঙ্গুল দিয়ে ‘ইংরেজি বর্ণ ভি’ গঠন করা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইউরোপ জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল, যা নাৎসি জার্মানির বিরুদ্ধে বিজয়ের প্রতীক ছিল। একইসাথে এটি জোট বাহিনীর মধ্যে সংহতির প্রতীক হয়ে ওঠে।

১৯৬০-এর দশকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিক্ষোভকারীরা ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় শান্তির আহ্বান জানাতে এই চিহ্ন ব্যবহার শুরু করে।

নোমুরা বলেন, ‘মার্কিন হিপ্পি এবং যুদ্ধবিরোধী আন্দোলনকারীরা পুলিশ কর্মকর্তাদের লক্ষ্য করে এই চিহ্ন দেখাত। শান্তি চিহ্ন শুরু হওয়ার পিছনে এটিই হলো প্রধান তত্ত্ব।'

প্রথাটি জাপানে কীভাবে এলো?

পুরানো দিনের সাদা-কালো ছবিতে জাপানিদের বিখ্যাত এই চিহ্ন দেখিয়ে পোজ দিতে দেখা যায় না।

জাপানি সমাজে কীভাবে এই চিহ্ন জনপ্রিয়তা অর্জন করে তার পিছনে বিভিন্ন ধরনের ব্যাখ্যা রয়েছে। প্রধান ক্যামেরা নির্মাতাদের প্রতিনিধিরা এনএইচক'কে বলেছেন যে ১৯৭০ দশকের শুরুতে ক্যামেরার বিজ্ঞাপনে এক হাস্যোজ্জ্বল সেলিব্রিটি সেই চিহ্ন দেখালে তখন থেকেই সম্ভবত এই প্রথা শুরু হয়।

জনপ্রিয় ব্র্যান্ড দ্য স্পাইডার্সের একজন অভিনেতা এবং গায়ক ইনোওউয়ে জুন, ক্যামেরা কোম্পানি কোনিকা মিনোল্টা (যা সেই সময়ে কোনিকা নামে পরিচিত ছিল), সেই কোম্পানির মুখপাত্র ছিলেন।

বিজ্ঞাপন
যুক্তরাষ্ট্রে একটি ক্যামেরার বিজ্ঞাপনে তিনি ‘ভি’ সংকেতটি দেখান।

ইনোওউয়ে বলেন, ‘আমি ১৯৭০ সালের দিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলাম, দেশটিতে তখন যুদ্ধবিরোধী আন্দোলন চলছিল। আমার সাথে সাক্ষাৎ হওয়া প্রতিটি স্থানীয় কর্মী আমাকে শান্তির চিহ্ন দেখান, তাই আমি শুটিং করার সময় সেই চিহ্ন দেখাই।’ ‘আমি আশা করিনি যে তারা আসলে বিজ্ঞাপনে এটি ব্যবহার করবে।’

ইনোওউয়ে বলেছেন, ‘কিছুক্ষণ পর, রাস্তায় লোকেরা আমাকে বলতে শুরু করে শান্তি!' এরপর আরও বেশি লোক আমাকে দেখে শান্তির চিহ্ন দেখাতে শুরু করেন। আমার ধারণা ধীরে ধীরে জাপানি সমাজে এটি ছড়িয়ে পড়েছে।'

ছবির সমালোচক তোরিহারা মানাবু এবিষয়ে একমত যে, এই প্রথার বিস্তারে ইনোওউয়ে প্রধান এক ভূমিকা পালন করেছেন।

তোরিহারা বলেন, ‘সেই বিজ্ঞাপনটি বিরাট প্রভাব ফেলেছিল এবং আমার মনে আছে যে আমি নিজেও এটি অনুকরণ করা শুরু করি।’

ভিয়েতনাম যুদ্ধের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরোধী আন্দোলনের পটভূমি এবং ইনোওউয়ের প্রভাবশালী বিজ্ঞাপনের কারণে জাপানিরা ‘ভি’ চিহ্নটিকে শান্তির চিহ্ন হিসাবে স্বীকার করে নেয় এবং ছবি তোলার সময় এটি দেখাতে শুরু করে।

শান্তির চিহ্নের বিবর্তন অব্যাহত আছে

এখন জাপানের রাস্তায় বিভিন্ন ধরনের শান্তির চিহ্ন দেখা যায়। ফ্যাশন এবং স্টাইল ম্যাগাজিন এগের প্রধান সম্পাদক ওগুমা সেরিনা বলেছেন, তরুণ প্রজন্মের মধ্যে এই সংকেত ক্রমাগত ‘বিবর্তিত’ হয়ে চলেছে।

ওগুমা বলেন, পুরানো ধাঁচের শান্তি চিহ্ন ছাড়া অন্য যে ধরনের শান্তি চিহ্ন আজকাল দেখা যায়, তা হলো: (১) মুখের কাছে রাখা ‘ছোট মুখ শান্তি চিহ্ন’, (২) হাতের তালু পিছনে ঘুরিয়ে ‘পিছনের শান্তি চিহ্ন’, (৩) ‘চিবুক শান্তি চিহ্ন’ এবং (৪) হাত সামনের দিকে উল্টানো ‘গাল শান্তি চিহ্ন’, যা গত বছর খুব জনপ্রিয় হয়েছিল।

‘অতীতে আমরা কেবল একটি নির্দিষ্ট প্রবণতা অনুসরণ করতাম, এখন সময় বদলে গেছে। আজকের তরুণদের প্রবণতা হলো তাদের নিজস্ব পছন্দের কোন একটি চিহ্ন ব্যবহার করা।’

এনএইচকে ছবি তোলার সময় কয়েকজন তরুণ-তরুণী শান্তির চিহ্ন তৈরি করেননি। এর পরিবর্তে কয়েকজন তাদের হাত বাঁকিয়ে এবং অর্ধ-হৃদয়ের মতো গালের পাশে রেখে ‘হার্ট চিহ্ন’ তৈরি করেন। আবার কেউ কেউ তাদের মাথার উপর উল্টো শান্তির চিহ্ন ‘বিড়ালের কানের ভঙ্গি’ তৈরি করেন, যা দেখতে পশুর কানের মতো। কেউ বলেন যে তারা প্রায়শই নিজেদের প্রিয় সেলিব্রিটির তৈরি পোজ অনুকরণ করেন।

 

 

রকমারি থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

রকমারি সর্বাধিক পঠিত

মা-বাবার বিরুদ্ধে মামলা/ 'অনুমতি না নিয়েই কেন জন্ম দিয়েছ?'

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status