রকমারি
নারীদের জন্য সবথেকে কাছের ওয়াশরুমের অবস্থান জানাবে ‘প্রীতিলতা’
নাঈম আহমদ শুভ
১৮ মে ২০২৪, শনিবারশাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীদের স্টার্টআপ ‘প্রীতিলতা’। নারীদের স্বাস্থ্য সচেতনতার লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের চারজন শিক্ষার্থীর সমন্বয়ে এ উদ্যোগ নেয়া হয়। শিক্ষার্থীরা হলেন- মাহবুব আহমেদ চৌধুরী, আবু নাসের শাহ মো. মারুফ আহমেদ, সুরাইয়া তাসনূর তানহা এবং আয়শা আহমদ। এই অ্যাপের মাধ্যমে অনলাইনে পণ্য অর্ডার, ট্রেকিংয়ের মাধ্যমে পিরিয়ডের সময় জানা, এআই চ্যাটবোটের মাধ্যমে যেকোনো প্রশ্নের উত্তর জানা, ভেন্ডিং মেশিনে কিউআর কোড স্ক্যান কিংবা আরএফআইডি কার্ড ব্যবহার করে স্যানিটারি প্যাড, টেম্পুন্স ও প্যান্টি লাইনার প্রাপ্তি, পিরিয়ডকালীন সময়ে স্যানিটারি প্যাড পরিবর্তনের জন্য সবচেয়ে কাছের ওয়াশরুমের অবস্থান ট্রেকিং এবং ব্যবহৃত প্যাড রিসাইক্লিংয়ের ব্যবস্থা করা ইত্যাদি ফিচার নিয়ে কাজ করাই হচ্ছে এ স্টার্টআপের কাজ।
সম্প্রতি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত ইনোভেশন হাব কার্যক্রমের কোহোর্ট-১ এবং ইনোভেশন শৌকেসিং প্রতিযোগিতা উভয় জায়গায় প্রথম হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে ‘প্রীতিলতা’। ‘প্রীতিলতা’ স্টার্টআপের আইডিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে উদ্যোক্তারা বলেন, ২০২২ সালে ক্যাম্পাসে হাল্ট প্রাইজে আইডিয়া কম্পিটিশন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে কি ধরনের আইডিয়া উপস্থাপন করা যায় সেটা নিয়ে আমরা চারজনের টিম আলোচনায় বসি। অনেক ভেবেচিন্তে নারীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়কে ফোকাস করে নারীদের স্যানিটারি প্যাডসহজে প্রাপ্তির জন্য ‘প্রীতিলতা’ স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠা করি। এ আইডিয়া উপস্থাপন করে হাল্ট প্রাইজের সেই প্রতিযোগিতায় আমরা প্রথম রানারআপ হই। প্রীতিলতা’র কার্যক্রম সম্পর্র্কে অন্যতম উদ্যোক্তা আবু নাসের শাহ মো. মারুফ আহমেদ বলেন, আমাদের দেশে ৭৭% নারী পিরিয়ডকালীন পণ্যের সঠিক এক্সেস পাচ্ছেন না এবং প্রায় ৪১% শিক্ষার্থী পিরিয়ডকালীন সময়ে ক্লাসে অনুপস্থিত থাকেন। এ ছাড়া স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন জায়গায় নিরাপদ ও প্রাইভেট ওয়াশরুম ফেসিলিটিজের অভাবে ৮৬% নারীকে স্যানিটারি প্যাড পরিবর্তন করতে সমস্যায় পড়তে হয়। তিনি বলেন, পিরিয়ডকালীন পণ্যের এক্সেস না পাওয়ার প্রধান ও অন্যতম কারণ হচ্ছে ফার্মেসিতে গিয়ে পণ্যের অর্ডার দিতে সংকোচবোধ করেন। বেশিরভাগ ফার্মেসিতে পুরুষ বিক্রেতা থাকেন। তাই নারীরা পুরুষ বিক্রেতাকে পণ্যের কথা বলতে লজ্জাবোধ করেন।
এ বিষয়টিকে মাথায় নিয়ে সহজে পিরিয়ডকালীন ও অন্যান্য ব্যক্তিগত পণ্য সরবরাহ করার উদ্দেশ্যে ‘প্রীতিলতা’র যাত্রা শুরু হয়। মারুফ আহমেদ বলেন, প্রয়োজনীয় যেকোনো ধরনের পণ্য অ্যাপের মাধ্যমে অর্ডার করে মেয়েরা সহজে হাতে পেয়ে যাবেন। এ ছাড়া ভেন্ডিং মেশিনে তুলনামূলক স্বল্পমূল্যে মেয়েরা নিজেরা নিজেদের প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে পারবেন। যে জায়গায় ভেন্ডিং মেশিন স্থাপন করা হবে সেখানে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে আমরা শুধুমাত্র প্রতিমাসে সার্ভিস চার্জ নেয়া হবে। তিনি বলেন, আমরা প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভিন্ন কর্পোরেট জায়গায় ভেন্ডিং মেশিন স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়েছি। ধীরে ধীরে স্কুল, হাসপাতাল, গার্মেন্টস ও বিভিন্ন এনজিও প্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য জায়গায় এ সেবা পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করবো। দ্রুত সময়ের মধ্যে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভেন্ডিং মেশিন স্থাপন করা হবে। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমাদের এ ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। প্রীতিলতা অর্থ হচ্ছে ‘প্রস্ফুটিত ফুল’ আর প্রীতিলতা নামটি মেয়েদেরকে উপস্থাপন করে। এ বিষয়টি মাথায় নিয়ে তারা স্টার্টআপের নাম দেয়া হয় ‘প্রীতিলতা’। এ কার্যক্রমকে সাধুবাদ জানিয়ে শাবিপ্রবি প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. মো. কবির হোসেন বলেন, নারীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় তাদের উদ্যোগ প্রশংসনীয়। তাদের কার্যক্রমে আমরা আনন্দিত। ভবিষ্যতে তাদের কার্যক্রম আরও প্রসারিত হোক এবং সমাজ ও দেশের উন্নয়নে অবদান রাখুক। এই প্রত্যাশা। উল্লেখ্য, ২০২২ সালে বিডিএপ্স কর্তৃক আয়োজিত ন্যাশনাল হ্যাকাথনে পুরো দেশের মধ্যে ষষ্ঠ এবং ২০২৩ সালে আইসিটি ডিভিশনের আইডিয়া প্রজেক্টে গ্রান্ট উইনার হয় ‘প্রীতিলতা’।