বাংলারজমিন
শ্রমিক সংকট
সোনার ফসল নিয়ে চিন্তিত হাওরের কৃষক
শাল্লা (সুনামগঞ্জ) সংবাদদাতা
১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার৮ কিয়ার (৮ বিঘা) জমিন করেছি। কজন মিইল্লা রংপুর থাকি মেশিন আনার চেষ্টা করছিলাম। কাইল (গতকাল) রাইতেও কথা অইছেএ কিন্তু আইজ সকাল থাকি আর ফোন ধরের না হারভেস্টার মালিক। ইবায় ধান পাকি গেছে। দাওয়ালও (শ্রমিকও) পায়রাম না-কোনো সুবিধা করতাম পাররাম না। মিশিনের লাগি হন্যি অইয়া ঘুররাম-পায়রাম না। হাওর সমৃদ্ধ সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার ভান্ডাবিল হাওরপাড়ের হবিবপুর গ্রামের প্রান্তিক কৃষক নীতিশ পুরকায়স্থ মঙ্গলবার দুপুরে চলতি বোরো মৌসুমে ধান কাটার শ্রমিক সংকটের কারণে সোনার ধান ঘরে তোলা নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার বর্ণনা দিতে গিয়ে ভাটিবাংলার প্রচলিত ভাষায় কথাগুলো বলছিলেন তিনি।
এ সময় হবিবপুর নোয়াগাঁওয়ের কৃষক প্রসূন কান্তি দাস জানালেন, তিনি এক হাল (১২ বিঘা) জমিতে ফসল ফলিয়েছেনএ কিন্তু এক কেয়ার জমির ফসলও কাটতে পারেননি। দাওয়াল নেই। বড় কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিনের জন্য পার্শ্ববর্তী আনন্দপুর বাজারে এসেও ধান কাটার মেশিন পাননি তিনি। আনন্দপুরের কৃষক রাধেশ দাস বললেন, হারভেস্টার মেশিন কাগজে অনেক আছে; কিন্তু বাস্তবে তেমন নেই।
কৃষকরা জানান, আগে ফরিদপুর, যশোর, কিশোরগঞ্জ, পাবনা, গোপালগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, রংপুর, দিনাজপুর, কুমিল্লা ও শেরপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ধান কাটার শ্রমিকেরা আসতেন শাল্লা সহ হাওর এলাকার বিভিন্ন উপজেলায়।
শাল্লা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুস ছাত্তার জানালেন, ৯০ বিঘা জমির ধান কাটানো নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। উপজেলা কৃষি অফিস আরও হারভেস্টার মেশিন বরাদ্দ দিতে উর্ধ্বতন কতৃর্পক্ষকে চিঠি দিয়েছিল; কিন্তু সরকার থেকে এখনো কোন বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। ওদিকে আবহাওয়া বার্তায় ঝড়বৃষ্টির খবর রয়েছে, ৮০ ভাগ পাকা ধান কাটার জন্য তাগিদ জানিয়ে এমনটি ফেসবুকে পোস্ট করেন কৃষি অফিসার শাল্লা নামক একটি আইডিতে। তার পোস্টে নেটিজনেরা হাওরাঞ্চলে শ্রমিক সংকটের ব্যাপারে বিভিন্ন মন্তব্য করেছেন ওই পোস্টে। অধিকাংশ মন্তব্য শ্রমিক সংকটের ব্যাপারে। ওই পোস্টের বিভিন্ন মন্তব্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে ধান কাটার মেশিন কম থাকায় ও শ্রমিক সংকট দেখা দেওয়ায় সোনার ফসল বোরোধান নিয়ে চিন্তিত রয়েছেন অধিকাংশ কৃষক।
তবে সব সমস্যা সমাধান করার আশ্বাস দিয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মাসুদ (তুষার) বলেন, কাগজেপত্রে শাল্লায় ৪৯টি বড় হারভেস্টার মেশিন রয়েছে; কিন্তু বাস্তবে ভিন্ন চিত্র। কয়েকটি মেশিন বিকল। বহু কৃষক অভিযোগ করেছেন, কিছু মালিক অধিক মুনাফা পাওয়ার লোভে উপজেলার বাইরে তাদের হারভেস্টার মেশিন ভাড়া করে দিয়েছেন। এ ব্যাপারে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে জানান তিনি।