প্রথম পাতা
ফ্লাইওভার কী কাজে এলো?
স্টাফ রিপোর্টার
৭ এপ্রিল ২০২৪, রবিবার
মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারে দীর্ঘ যানজট। নিচেও একই দৃশ্য -নিজস্ব ছবি
রাজধানীর প্রবেশপথ যাত্রাবাড়ী ও সায়েদাবাদ এলাকার যানজট নিরসনে নির্মাণ করা হয় মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার। দুই হাজার একশ’ কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে নির্মিত ফ্লাইওভারটি এখন নিজেই যানজটে কাবু। ফ্লাইওভারের উপর-নিচ সব জায়গায় যানজট। দিনের বেশির ভাগ সময়ই লেগে থাকা দীর্ঘ যানজটে ভোগান্তি পোহাতে হয় যাত্রীদের। টোল দিয়ে ফ্লাইওভার হয়ে ঢাকা প্রবেশ করা যানবাহন আটকা পড়ছে উড়াল সড়কে ওঠার পরই। পদ্মা সেতু ও এর সঙ্গে যুক্ত এক্সপ্রেসওয়ে চালু হওয়ার পর এই যানজট আরও প্রকট হয়েছে। এই উড়াল সড়কে চলাচল করা যাত্রীরা এখন প্রশ্ন তুলছেন, এত অর্থ খরচ করে এটি নির্মাণ করে কী লাভ হলো?
অতি সম্প্রতি এই ফ্লাইওভার ঘিরে সৃষ্ট যানজট অসহনীয় মাত্রায় পৌঁছেছে। হানিফ ফ্লাইওভারের গুলিস্তানের টোল প্লাজা থেকেই শুরু হওয়া যানজট কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত হচ্ছে। ফ্লাইওভার ব্যবহার করে যানবাহনকে কয়েক মিনিটেই ঢাকায় প্রবেশের কথা। কিন্তু এটি এখন অনেক সময় কয়েক ঘণ্টায় ঠেকছে।
ঈদের আগে সড়কে গাড়ির চাপ বাড়ায় যানজটের মাত্রা বেড়েছে আরও বেশি। এদিকে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা বাড়ার সঙ্গে গুলিস্তান ও যাত্রাবাড়ী এলাকায়ও যানজট বাড়ছে। এতে ঢাকা থেকে বের হতেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকতে হচ্ছে তাদের।
যাত্রাবাড়ীর কুতুবখালী থেকে শুরু হয়ে পুরান ঢাকার নিমতলী মোড় পর্যন্ত ১১ কিলোমিটার দীর্ঘ মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার। ২০১৩ সালে ফ্লাইওভারটির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফ্লাইওভারটি নির্মাণ করতে ২ হাজার ১০৮ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়। তবে এক দশক ধরে চালু হওয়া এই ফ্লাইওভারটি ঢাকাবাসীকে যানজটের যন্ত্রণা থেকে রেহাই দিতে খুব একটা কার্যকর হচ্ছে না। সব সময় এতে যানজট লেগেই থাকে। গুলিস্তানের টোল প্লাজা থেকেই যানজটের শুরু হয়ে তা যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা পর্যন্ত বিস্তৃত। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধীরগতিতে ফ্লাইওভারেই আটকে থাকতে হয় যাত্রীদের। ফ্লাইওভার থেকে নামার পরও চৌরাস্তার সিগনালে আটকে থাকে গাড়ি। এ ছাড়া গুলিস্তান থেকে যেসব গাড়ি মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার দিয়ে ধোলাইপাড় নামে এসব গাড়িও নামার আগ পর্যন্ত ফ্লাইওভারের ওপরে আটতে থাকে দীর্ঘ সময়। যাত্রী ও গাড়ির চালকরা জানিয়েছেন, বছরের সব সময়ই হানিফ ফ্লাইওভারে যানজট লেগে থাকে। পিক আওয়ারে যানজটের মাত্রা থাকে তীব্র।
ঈদের আগে সড়কে গাড়ির চাপও বেশি। এতে যানজটের মাত্রাও বেশি। শহিদুল ইসলাম নামের একজন প্রাইভেটকার চালক বলেন, হানিফ ফ্লাইওভারে এমনিই অনেক যানজট। ঈদের কারণে যানবাহন বেশি। এজন্য জ্যামও বেশি লাগছে। সিয়াম মাহমুদ নামের একজন বাইক চালক বলেন, ফ্লাইওভারের ৩০ থেকে ৪০ মিনিট যানজটে আটকে থাকতে হয়। দুপুরে রোদের কারণে অসহ্য লাগে এই যানজট। মাঝেমধ্যে গাড়ি থমকে থাকে। টোল দেয়ার কারণে বেশি লাগে যানজট। শ্রাবণ ট্রান্সপোর্টের হেল্পার বলেন, যাত্রাবাড়ী থেকে গুলিস্তানে নামার পথে যানজট বেশি থাকে। গাড়িগুলো গুলিস্তানে নেমেও একটানে যেতে পারে না। সেখানে বিভিন্ন গাড়ি রাস্তা দখল করে থাকায় অন্যগাড়ির যেতে অসুবিধা হয়। আর এখন ঈদের কারণে গাড়ি বেশি। যাত্রীরাও উঠানামা করে রাস্তায়। যাত্রীরা বলছেন, ঢাকার ব্যস্ততম সড়কে দীর্ঘ ফ্লাইওভার করেও তা যানজট কমাতে কাজে আসছে না। শফিকুল ইসলাম বলেন, শনির আখড়া থেকে উঠেছি। ফ্লাইওভারে কিছুদূর ওঠার পর থেকেই যানজট। এখানে সব সময় এমন যানজট থাকে। এরমধ্যেই আমাদের যাতায়াত করতে হয়। মিরাজ হাওলাদার বলেন, এতটাকা খরচ করে ফ্লাইওভার বানানোর পরও যদি যানজট থাকে তাহলে তা বানিয়ে কি লাভ হলো। সকালের আর রাতের দিকে তো ভয়াবহ যানজট থাকে। রোজার মধ্যে এমন যানজটে বসে থাকতে থাকতে গলা শুকিয়ে যায়।
গুলিস্তান থেকে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল মাত্র আড়াই কিলোমিটারের রাস্তা। কিন্ত বাসে বা রিকশায় যেতে সময় লাগছে দুই ঘণ্টা। কারণ বাসের অবৈধ পার্কিং, ফুটপাথ ছেড়ে মূল সড়কে দোকান বসেছে। এসব মিলে এবারো ঈদ যাত্রায় ঘরমুখো মানুষকে পোহাতে হচ্ছে চরম দুর্ভোগ। বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে হিমশিম ট্রাফিক পুলিশও। রাজধানীবাসীকে পড়তে হচ্ছে ভোগান্তিতে। অনেক যাত্রী বিরক্ত হয়ে লঞ্চঘাটে পায়ে হেঁটেই ছুটছেন। কেউ যাচ্ছেন রিকশায়, কেউ বা ঘোড়ার গাড়িতে। তবু ১০ থেকে ১৫ মিনিটের রাস্তা যেতে সময় লাগছে দুই থেকে তিন ঘণ্টা। ট্রাফিক পুলিশ বলছে, বাস পার্কিংয়ের কারণে মূলত যানজট হয়। কিন্তু যানজট নিরসনে ট্রাফিক পুলিশ কাজ করছে। প্রতিনিয়তই তারা ফুটপাথ ও রাস্তাকে দখলমুক্ত রাখার চেষ্টা করছে। পদ্মা সেতু হওয়ার কারণে এখন যাত্রাবাড়ীতে গাড়ির চাপ বেড়েছে। দক্ষিণাঞ্চলের গাড়িগুলো যাত্রাবাড়ী দিয়ে মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করে ঢাকা ছাড়ে। এক্সপ্রেসওয়েতে যানজটমুক্ত চলাচল করলেও যাত্রাবাড়ীর মুখে যানজট থাকে গাড়ির। এ ছাড়া যাত্রাবাড়ী মোড় ব্যবহার করে চিটাগাং রোড হয়ে পূর্বাঞ্চলের গাড়িগুলো যাতায়াত করে।
এসব গাড়ি যাত্রী উঠানামার জন্য সায়েদাবাদ, জনপথের মোড় ও যাত্রাবাড়ীর রাস্তা দখল করে থাকে। সোনালী পরিবহনের ইব্রাহিম বলেন, সায়েদাবাদ থেকে গাড়িগুলো যাত্রাবাড়ী থেকে বের হতেই অনেক সময় লেগে যায়। তবে এরপর আর যানজট থাকে না। যাতায়াত পরিবহনের আসলাম বলেন, জনপথের মোড় পার হলে মাঝেমধ্যে যানজট থাকে। তবে যাত্রাবাড়ীর পর যানজট পাওয়া যায় না। আরমান পর্যটনের কাউন্টার ম্যানেজার মো. নাইম বলেন, ধোলাইপাড় পর্যন্ত যানজট পাওয়া যায়। এখান দিয়ে ঈদের শেষ দুদিন আরও বাড়তে পারে। তিশা প্লাসের একজন স্টাফ বলেন, এখন ঈদের মৌসুম তাই ঢাকা থেকে অনেক গাড়ি বের হচ্ছে। যাত্রীদের চাপও বাড়ছে। ঢাকা থেকেই গাড়িগুলো যাত্রীতে পূর্ণ করছে। তাই এই এলাকায় একটু যানজট হয়। এদিকে ঢাকার ভেতর বাস টার্মিনাল কেন্দ্রিক যানজটও বাড়ছে। বিশেষ করে গোলাপবাগ, সায়েদাবাদ, মহাখালী বাস টার্মিনালে বাসের চাপ রয়েছে। টার্মিনালে জায়গা সংকটের কারণে বাসগুলো সড়ক দখল করে রাখে। এতে রাস্তা সংকুচিত হয়ে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। লাবিবা ট্রান্সপোর্টের সুজন ম-ল বলেন, এখন যাত্রী একটু কম। ঈদের সরকারি ছুটি হলে যাত্রীও বাড়বে। সড়কে গাড়ির চাপও বাড়বে।
পাঠকের মতামত
এই দেশের সরকার কি সাধারণ মানুষের উপকারের কথা চিন্তা করে কোন প্রোজেক্ট করে? তারা প্রোজেক্ট করে তাদের নিজেদের পকেট ভারি করতে। পুরা দেশের চিত্র এখন এক। অনিয়ম এখন নিয়মে পরিণীত হইছে। টাকার কাছে সব কিছু বিক্রি হয়ে গেছে। মানুষের মূল্যবোধ উঠে গেছে।
ফ্লাইওভারটি নির্মাণ করে কী লাভ হলো? কেন? আওয়ামীলীগের উঁচু স্তরে কাটব্যাক কমিশন পাওয়া গেল।
এই ফ্লাইওভারটির সুফল পেতে হলে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে আইন করে গুলিস্তানের ফ্লাইওভারের downstream এর আশেপাশের রাস্তা ও ফুটপাত থেকে সব ধরনের দোকান পাট উচ্ছেদ করা জরুরী।
কোথায় সরকারের সফলতা?? সবখানেই অনিয়ম আর বিশৃঙ্খলা। একটি ফুটওভার ব্রিজে দেখলাম মটর সাইকেলও উঠে পড়েছে। দেখার কেউ নেই। প্রশাসন শুধু বিরুধী দল দমনে সজাগ।
টোল আদায়ের কারনে যানজট হচ্ছে। ঢাকার মধ্যে এই অযৌক্তিক টোল বন্ধ করে যানজট কমানো হোক
Newscasters say about flyover, do not say about the roads under it. Always dedicated to pocket money. There is no authority to look after the roads under the flyover for maintenance and traffic control. Half of country's traffic bound to Dhaka east and south enter through this only this flyover, no alternative except the flyover. Development indeed!
এই ফ্লাইওভার বানানোর আগে সাংবাদিক ভাইদের পরামর্শ নেওয়া উচিৎ ছিল।
এই ফ্লাইওভারটির টোল নেয়ার জন্য এই যানজটের অন্যতম একটি কারণ। যাতে নীচে দিয়ে গাড়ী নির্বিঘ্নে না যেতে পারে তার জন্য রাস্তাটি সরু সরু লেন করেছে আর বিভিন্ন জায়গায় নানা প্রতিবন্ধকতা করে রেখেছে এক শ্রেনীর মানুষ। অনেক জায়গায় ফ্লাইওভারের নীচ ভাড়াও দিয়েছে কেউ কেউ। মনে হয় এগুলো দেখার কেউ নেই। মিডিয়াও অঞ্জাত কারনে নীরব। সবকিছুর পিছনে বেশী টোল পাওয়ার চেষ্টাই আমার কাছে মনে হয়েছে।