প্রথম পাতা
লন্ডন এক্সপ্রেসের ১৪ বাস পুড়ে ছাই, নানা প্রশ্ন
শুভ্র দেব
৩ এপ্রিল ২০২৪, বুধবারগ্যারেজে সারিবদ্ধভাবে সাজানো ছিল লন্ডন এক্সপ্রেসের দূরপাল্লার ১৪টি ভলভো বিলাসবহুল বাস। ডেমরার কোনাপাড়ার ধার্মিকপাড়া এলাকার তালাবদ্ধ ওই গ্যারেজে হঠাৎ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। রাত ৮টা ৫০ মিনিটে খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ডেমরা ও সিদ্দিক বাজার ফায়ার স্টেশনের ৫টি ইউনিট তালাকেটে ভেতরে প্রবেশ করে। রাত ৯টা ৪৮ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ততক্ষণে একে একে পুড়ে যায় ১৪টি বাস। প্রাথমিকভাবে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাতের বিষয়ে কেউ সঠিকভাবে কিছুই বলতে পারছে না। এ ঘটনায় মালিকপক্ষ ডেমরা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করে ঘটনার বিবরণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ উল্লেখ করেছেন। পুলিশ বলছে, অন্তত ৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে মালিকপক্ষের।
আর কয়েকদিন পরেই শুরু হবে ঈদযাত্রা। এ সময়টাতে লন্ডন এক্সপ্রেস দূরপাল্লার যাত্রীদের গন্তব্য পৌঁছে দেয়ার কথা। অথচ এ সময়টাতে লন্ডন এক্সপ্রেসের বাস পুড়ে শুধু মালিকপক্ষই ক্ষতিগ্রস্ত হননি বরং লন্ডন এক্সপ্রেসের যাত্রীদেরও ভোগান্তি পোহাতে হবে। কারণ যারা বাড়ি যাওয়ার টিকিট কেটেছিলেন তাদেরকে গন্তব্য পৌঁছে দিতে লন্ডন এক্সপ্রেসকে বিকল্প কিছু ভাবতে হবে। ঈদের আগে লন্ডন এক্সপ্রেসের বাস পুড়ে যাওয়া নিয়ে নানা মহলে নানা আলোচনা-সমালোচনা চলছে। কেউ বলছেন এটি নেহাত নাশকতা ছাড়া আর কিছু নয়। আবার কেউ বলছেন এটি স্রেফ অগ্নিকাণ্ড। তবে স্রেফ অগ্নিকাণ্ডের ধারণা ছাপিয়ে সামনে উঠে আসছে লন্ডন এক্সপ্রেস যে রোডে যাত্রী পরিবহন করে ওই রোডে অন্য কোম্পানির রোষানলে পড়েছে কি না? কারণ দীর্ঘদিন ধরে বেশ সুনামের সঙ্গে যাত্রী পরিবহন করছে লন্ডন এক্সপ্রেস। সড়ক পরিবহন জিম্মি করে রাখা কোনো চক্র এই ঘটনায় জড়িত থাকতে পারে এমন ধারণা করছেন অনেকে।
পুলিশের তদন্ত সংশ্লিষ্টরা প্রাথমিকভাবে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাতের কথা বললেও ফায়ার সার্ভিস সেটি মানছে না। ফায়ার সার্ভিসের একটি সূত্র এটিকে নাশকতা বলেই ধরে নিচ্ছে। যদিও সেটিকে প্রমাণ করার সক্ষমতা সংস্থাটির নাই বলে দাবি করছে সূত্রটি। তবে দীর্ঘদিনের কাজের অভিজ্ঞতা, ঘটনাস্থল পরিদর্শন সবমিলিয়ে এটিকে নাশকতা বলেই ধরে নিচ্ছেন তারা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট এটিকে নাশকতা না বলে উড়িয়ে দিচ্ছে না। ইতিমধ্যে পুলিশের পাশাপাশি ডিবি, র্যাব, পিবিআই, সিআইডি কাজ শুরু করেছে। সিআইডির ক্রাইম সিন আলামত সংগ্রহ করে পরীক্ষা চালাচ্ছে। এ ছাড়া অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে ৩ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ঢাকা বিভাগের উপ-পরিচালক মো. ছালেহ উদ্দিনকে কমিটির প্রধান করা হয়েছে। এ ছাড়া সদস্য সচিব করা হয়েছে ডিএডি মো. শামসুজ্জোহা ও সদস্য ডেমরা ফায়ার স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন অফিসার ওসমান গণিকে। কমিটিকে ১৫ কার্যদিবসের ভেতরে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের ওয়ারী বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) ইকবাল হোসাইন মানবজমিনকে বলেন, এখন পর্যন্ত নাশকতার কোনো সন্দেহ বা তথ্য পাওয়া যায়নি। প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি বাউন্ডারি ছিল টিনের। সেই টিনে বিদ্যুতের লাইন ছিল। কয়েকদিন আগে লাইন ও বাউন্ডারি দুটিই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আগুন নিয়ন্ত্রণের পর কিছু পোড়া তার পাওয়া গেছে। এগুলো তদন্তের বিষয়। তবে আমাদের প্রাথমিক ধারণা বৈদুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। ভেতরে গাড়িগুলো একটা আরেকটার সঙ্গে ঘেঁষা ছিল। এ ছাড়া প্রচণ্ড বাতাস ছিল। বাতাসের কারণে হয়তো আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এ ছাড়া আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। বাস মালিকের কাছেও তথ্য নাই। এ ঘটনায় মালিক পক্ষ থেকে থানায় জিডি করা হয়েছে।
এলিটফোর্স র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ডেমরার কোনাপাড়ার ধার্মিকপাড়া এলাকায় গ্যারেজে থাকা লন্ডন এক্সপ্রেসের (ভলভো কোচ) ১৪টি বাসে আগুনের ঘটনা নাশকতা কিনা তা খতিয়ে দেখছে র্যাব। যে বাসগুলো পুড়েছে, সেই কর্তৃপক্ষ এখনো কোনো নাশকতার সন্দেহ করে আমাদের কাছে অভিযোগ করেননি। তারপরও আমাদের গোয়েন্দারা কাজ করছে, এটা স্বাভাবিক ঘটনা নাকি নাশকতা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আমাদের গোয়েন্দারা ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে যোগাযোগ করবে, তারা কোনো সন্দেহ করলে সেটাকেও সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করা হবে। এটা নাশকতা কিনা সেটা আমরা খুঁজে বের করার চেষ্টা করবো।
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাইন উদ্দিন মানবজমিনকে বলেন, আগুন লাগার খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের টিম তালা কেটে ভেতরে প্রবেশ করে আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ করেছে। ভেতরে সুন্দর করে সারিবদ্ধভাবে বাসগুলো সাজানো ছিল। আগুনের সূত্রপাত কীভাবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে হবে না। আর যদি এটাকে নাশকতা বলি সেটাও ভুল হবে না। তবে এটি প্রমাণ করার মতো কোনো উপায় নাই। সেই সক্ষমতা আমাদের নাই। তবে চাইলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এটা প্রমাণ করতে পারে।
লণ্ডন এক্সপ্রেস এর মালিক কে ? মালিক পক্ষের পরিচয় উল্লেখ নাই ।
যে ধরণের বাসই হোক! সাবোটাজ হলে এটা একটা মারাত্নক অপরাধ। রাষ্ট্রে সম্পদ এভাবে ধ্বংস করা কারো উচিত নয়। জাতী হিসেবে আমরা দিন দিন প্রতিহিংসা পরায়ন হয়ে উঠছি। কবে আমরা সভ্য জাতি হবো??
লন্ডন এক্সপ্রেস কোম্পানির কোন ভলভো বাস নেই। ওদের আছে জার্মান MAN কোম্পানির ও ভারতের Ashok Leyland কোম্পানির বাস। সব মিডিয়া একটি ভুল তথ্য প্রচার করে যাচ্ছে।