বাংলারজমিন
স্বাক্ষর জালিয়াতির মামলায় জামিন পেলেন পাকুন্দিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান রেনু
স্টাফ রিপোর্টার, কিশোরগঞ্জ থেকে
৩ এপ্রিল ২০২৪, বুধবার
উত্তরা ব্যাংকের দুই কোটি ৫ লাখ টাকার ঋণ মওকুফের জন্য প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমানের স্বাক্ষর জাল করার অপরাধে আদালত থেকে দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম রেনু জামিন পেয়েছেন। মঙ্গলবার ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ আস-সামছ জগলুল হোসেন শুনানি শেষে তার জামিন মঞ্জুর করেন। এর আগে গত ২৭শে মার্চ ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত নং-৮ এ আত্মসমর্পণ করেন রফিকুল ইসলাম রেনু। আদালতের বিচারক আরফাতুল রাকিব পরোয়ানা মূলে ওইদিন তাকে কারাগারে পাঠান। পরে গত ৩১শে মার্চ সাজার বিরুদ্ধে মহানগর দায়রা জজ আদালতে মো. রফিকুল ইসলাম রেনু আপিল (ফৌজদারি আপিল নং- ৯১৩/২০২৪) দায়ের করেন এবং আদালত আপিল গ্রহণ করেন। এরপর মঙ্গলবার তিনি জামিনের জন্য আবেদন করলে আদালত জামিন মঞ্জুর করেছেন। জামিন পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে মো. রফিকুল ইসলাম রেনুর আইনজীবী বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এডভোকেট দেলোয়ার হোসেন কোয়েল বলেন, মিথ্যা একটি মামলায় উনাকে সাজা দেয়া হয়েছে। এই সাজার বিরুদ্ধে আমরা গত ৩১শে মার্চ ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে আপিল দায়ের করলে তা গৃহীত হয়েছে। পরে মঙ্গলবার আমরা উনার জামিনের জন্য আবেদন করি। শুনানি শেষে আদালত সন্তুষ্ট হয়ে আমার মোয়াক্কেল রফিকুল ইসলাম রেনুর জামিন মঞ্জুর করেছেন। পাকুন্দিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম রেনু পৌরসভার মরুরা এলাকার মৃত ইমাম উদ্দিনের ছেলে। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, উত্তরা ব্যাংক লিমিটেড মেসার্স এলিট আয়রন অ্যান্ড স্টিল জিপি শিট লিমিটেডের কাছে ঋণের ২ কোটি ৫ লাখ টাকা পায়। পাকুন্দিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান রেনু এই ঋণ মওকুফ করে দেয়ার কথা বলে কোম্পানিটির কাছ থেকে ৩৫ লাখ টাকা নেন। এরপর তিনি প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমানের বরাতে তার জাল স্বাক্ষরে ঋণ মওকুফের ব্যবস্থা নিতে উত্তরা ব্যাংকের এমডি বরাবর একটি চিঠি ইস্যু করেন। চিঠিতে ড. মশিউর রহমানের স্থলে ডা. মশিউর রহমান লিখায় উত্তরা ব্যাংকের এমডির সন্দেহ হয়। তাই চিঠিটি যাচাইয়ের জন্য তারা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠান। সেখানে প্রমাণিত হয় ওই চিঠি ড. মশিউর রহমান ইস্যু করেননি। এ ঘটনায় ২০১২ সালের ২৬শে এপ্রিল রাজধানীর বংশাল থানায় মামলা হয়। ২০১৩ সালের ৬ই অক্টোবর মো. রফিকুল ইসলাম রেনুসহ ৬ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে মামলার চার্জশিট দেয়া হয়। পরে ২০১৫ সালের ১১ই জুন মামলাটির অন্য পাঁচ আসামিকে অব্যাহতি দিয়ে কেবল মো. রফিকুল ইসলাম রেনুর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। দীর্ঘ সাড়ে ১১ বছরেরও বেশি সময় পর ২০২৩ সালের ৫ই ডিসেম্বর এ মামলায় আদালত রফিকুল ইসলাম রেনুকে দণ্ডবিধির ৪৬৮ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ২ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ১৫ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেন। সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় মো. রফিকুল ইসলাম রেনুর বিরুদ্ধে আদালত থেকে গত জানুয়ারি মাসে পরোয়ানা ইস্যু করা হলেও অদৃশ্য কারণে দীর্ঘদিন ওয়ারেন্ট তামিল করা হয়নি। এরই মধ্যে গত ২১শে মার্চ পাকুন্দিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী ১৫ই এপ্রিল নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ তারিখ। এ রকম পরিস্থিতিতে গত ২৫শে মার্চ পরোয়ানা জারির বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়। পরে গত ২৭শে মার্চ মো. রফিকুল ইসলাম রেনু আদালতে আত্মসমর্পণ করলে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।