খেলা
ম্যাচের আগে সমুদ্রযাত্রায় অসুস্থ ক্রিকেটাররা, যে ব্যাখ্যা দিলো বিসিবি
স্পোর্টস ডেস্ক
২ জুলাই ২০২২, শনিবার
সমুদ্রভীতির কারণে তামিম ইকবাল বিসিবিকে আগেই জানিয়ে দেন যে, ফেরিতে চড়ে ডমিনিকা যাবেন না তিনি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি দলে না থাকায় ওয়ানডে অধিনায়কের ডমিনিকা যাওয়া জরুরি ছিলও না। তবে যারা স্কোয়াডে রয়েছেন, তাদের ফেরিতে চড়েই যেতে হয়েছে ডমিনিকায়। ভয়ঙ্কর এই সমুদ্রযাত্রায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন ক্রিকেটাররা। সেন্ট লুসিয়া থেকে ডমিনিকা, ভায়া মার্টিনেক। ভয়ংকর এক সমুদ্রযাত্রা শেষে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার দুপুরে ডমিনিকায় এসে পৌঁছায় বাংলাদেশ দল। শনিবার ডমিনিকার উইন্ডসর পার্কে টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরুর আগে গতকাল ছিলো বিরতি। তার মধ্যে ক্রিকেটাররা সমুদ্রযাত্রার ধকল কাটিয়ে উঠতে পারে কি না, সেটাই এখন চিন্তার বিষয়। টেস্ট সিরিজ শেষে ক্যারিবিয়ানে টি-টোয়েন্টির লড়াইয়ে নামবে টাইগাররা। ডমিনিকার উইন্ডসর পার্কে আজ সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে মুখোমুখি হবে দু’দল। সে উদ্দেশ্যেই সেন্ট লুসিয়া থেকে ফেরিতে আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে ডমিনিকায় পৌঁছায় বাংলাদেশ দল। তবে দীর্ঘ পাঁচ ঘণ্টার সমুদ্র যাত্রায় অসুস্থ হয়ে পড়েন খেলোয়াড়রা। সমুদ্রপথে বিশাল ঢেউয়ের ধাক্কায় ফেরির দুলুনিতে একে একে ‘মোশন সিকনেসে’ আক্রান্ত হতে থাকেন ক্রিকেটাররা। এরইমধ্যে প্রকাশিত ভিডিওতে কয়েক দফা বমিও করতে দেখা গিয়েছে তাদের। প্রথমে সেন্ট লুসিয়া থেকে মার্টিনেকে পৌঁছায় বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে বহনকারী ফেরিটি। দেড় ঘণ্টার যাত্রায়ই অসুস্থ হয়ে পড়েন ক্রিকেটাররা। শারীরিক অবস্থা বেশি খারাপ হয় পেসার শরিফুল ইসলাম, উইকেটকিপার-ব্যাটার নুরুল হাসান সোহান ও ম্যানেজার নাফিস ইকবালের। মার্টিনেকে ৪০ মিনিটের যাত্রা বিরতিতে নাফিস, সোহান কিছুটা সুস্থ হলেও ডমিনিকায় আসার পথে ফের অসুস্থ হয়ে পড়েন শরিফুল। পানিপথে না গিয়ে বিমানে যাওয়ার সুযোগও ছিল বাংলাদেশ দলের। ওয়েস্ট ইন্ডিজে টাইগার বাহিনীই প্রথম দল যারা সমুদ্র পথে এক দ্বীপদেশ থেকে আরেক দ্বীপে গিয়েছে। এমনকি ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলও সমুদ্রযাত্রা করেনি এর আগে। সফরের পরিকল্পনা স্বাগতিক ক্রিকেট বোর্ডের অধিকারে থাকলেও সফরকারী দলের অনুমতি নিতে হয়। আর ক্রিকেট ওয়েস্ট ইন্ডিজের (সিডব্লিউসি) আটলান্টিক মহাসাগর পার হয়ে ক্রিকেটারদের এক দেশ থেকে আরেক দেশে যাওয়ার প্রস্তাব মেনে নিয়েছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। বিসিবির এমন অপরিনামদর্শী সিদ্ধান্তে চটেছেন টাইগার ক্রিকেটাররা। এক খেলোয়াড় এমনও বলেছেন, ‘এখানে অসুস্থ হয়ে মরলে তো আমরা মরবো, কারো তো কিছু হবে না।’ দলের এক সিনিয়র ক্রিকেটার বলেন, ‘এত দেশ সফর করলাম, জীবনে এই অভিজ্ঞতা প্রথম। আমরা কেউই এতে অভ্যস্ত নই। এখন যদি ফেরিতেই কেউ মারাত্মক অসুস্থ হয়ে যায় তাহলে কী হবে, খেলা তো পরের কথা। আমার জীবনের সবচেয়ে বাজে সফর এটি।’ সমুদ্রযাত্রার পর গতকাল বিশ্রামের সুযোগ পায় বাংলাদেশ দল। আজ বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ১১টায় তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। তবে ম্যাচের আগে খেলোয়াড়দের সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়া নিয়েও রয়েছে শঙ্কা।
যা বললেন বিসিবি’র প্রধান নির্বাহী
বাংলাদেশ দলের এই ভয়ঙ্কর সমুদ্রযাত্রা নিয়ে বিসিবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন চৌধুরী সুজন বলেন, ‘আবহাওয়া খারাপ থাকার কারণে এটা হয়েছে। আমাদের অনেক খেলোয়াড় এ ধরনের ভ্রমণে অভ্যস্ত নয়। ওদের খেলোয়াড়েরা অভ্যস্ত বলে তাদের তেমন সমস্যা হয়নি। আসলে রওনা দিতে হয়েছে ভোর রাতে। রাতের ঘুম না হওয়ায় একটু খারাপ লাগা কাজ করেই। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে খারাপ আবহাওয়া। তারপরেও আমরা চেষ্টা করেছিলাম সমুদ্রযাত্রাটা বাদ দেয়ার। দ্রুতই ক্রিকেট ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রধান নির্বাহীর সঙ্গে যোগাযোগ করি। তাকে বলি, আমাদের খেলোয়াড়দের যেন (মধ্যবর্তী দ্বীপ) মার্টিনেকে নামিয়ে রাখা হয়। সে বলল, ওখানে রাখা যাবে না। ওটা ফ্রেঞ্চ উপনিবেশ। ওখানে নামতে হলে ফ্রান্সের ভিসা লাগবে। সেটা তোমাদের নেই। তখন বুঝলাম এ ছাড়া আমাদের কোনো উপায় নেই। দল পৌঁছানোর পর আমাকে সে ভিডিও পাঠিয়ে জানালো দল নিরাপদে পৌঁছেছে। জেনেছি, যাত্রার পরের অংশে (মার্টিনেক থেকে ডমিনিকা) আর সমস্যা হয়নি। প্রথম অংশেই বেশি সমস্যা হয়েছে। এটার ভোগান্তি আমাদের জন্য একটু বেশি হয়ে গেছে।’ প্রশ্ন উঠেছে, বিসিবি কেন এ ধরনের ভ্রমণে রাজি হলো। ওখানে কি বিমানযাত্রার সুযোগ ছিল না? এ বিষয়ে সুজন বলেন, ‘ওরা ফেরিতে ভ্রমণ করার প্রস্তাব দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যে আমরা রাজি হয়েছি, তা নয়। ওরা যখন জানালো আর বিকল্প নেই, তখন তাদের (ব্যবস্থার) ওপর নির্ভর করতে হবে। এই ফেরিতে প্রায় ২৫০ জনের বহর গেছে। কোভিডের কারণে বড় ফ্লাইট বন্ধ হয়ে গেছে ওখানে। অনেক এয়ারলাইনস বন্ধ হয়ে গেছে। ফ্লাইট কমে গেছে। বড় বিমান ভাড়া করা যাচ্ছে না। আর সব দ্বীপের ব্যবস্থাও এক নয়। ৩০-৩৫ জনের ছোট ছোট ফ্লাইট ছিল (সেন্ট লুসিয়া থেকে ডমিনিকা)। ওরা যখন আমাদের জানিয়েছিল যেহেতু দুই দল এক সঙ্গে যাবে, ম্যাচ অফিশিয়ালসহ সমপ্রচারের দায়িত্বে থাকা সবাই একসঙ্গে এভাবে ভ্রমণ করবে, তখন আমরা এটা নিয়ে আপত্তি করিনি।