ঢাকা, ১০ মে ২০২৪, শুক্রবার, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিঃ

শেষের পাতা

দ্য ইকোনমিস্টের নিবন্ধ

ভারতের অর্থনীতি কতোটা শক্তিশালী?

মানবজমিন ডিজিটাল
২৮ এপ্রিল ২০২৪, রবিবার

নরেন্দ্র মোদি ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তৃতীয় মেয়াদেও  জয়ী হবেন বলে আশা করছে দেশের রাজনৈতিক মহল। নেহেরুর পর ভারতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নেতা হয়ে ওঠার  পথ প্রশস্ত করতে চলেছেন তিনি। এই চা বিক্রেতার ছেলের নির্বাচনী সাফল্য তার রাজনৈতিক দক্ষতা, তার হিন্দু জাতীয়তাবাদী আদর্শের শক্তি এবং তার সময়কালে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের অবক্ষয়কে প্রতিফলিত করে। তবে সাধারণ এবং অভিজাত ভোটারদের মধ্যে একটি ধারণাও প্রতিফলিত করে যে তিনি ভারতে সমৃদ্ধি এবং শক্তি নিয়ে এসেছেন। 

মোদির নেতৃত্ব গড়ে ওঠা ভারত প্রমাণ করে কীভাবে ডি-গ্লোবালাইজেশনের মধ্যেও ধনী হয়ে ওঠা যায়। আগামী ১০-২০ বছরে এটি দ্রুত বেড়ে ১.৪ বিলিয়ন মানুষ এবং বিশ্ব অর্থনীতির বাস্তবতাকে রূপ দেয়ার ক্ষমতা রাখে। এই  বিশেষ প্রতিবেদন ব্যাখ্যা করা হয়েছে যে মোদির ফর্মুলা একটি বিন্দু পর্যন্ত কাজ করছে। মোদির ক্ষমতায় থাকাকালীন ভারতের এই সাফল্য তার মেয়াদের পরেও টিকে থাকবে কিনা তা নিয়ে অবশ্য প্রশ্ন রয়েছে। ভারতের মতো বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল দেশে প্রবৃদ্ধির হার বার্ষিক ৬-৭%। নতুন তথ্য দেখায় ২০১০ সাল থেকে বেসরকারি খাতের আস্থা বেড়েছে। ইতিমধ্যেই পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ ভারত ২০২৭ সাল নাগাদ আমেরিকা এবং চীনের পরে তৃতীয় স্থানে উঠে আসতে পারে। 

ভারতের প্রভাব বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে।

বিজ্ঞাপন
আমেরিকান সংস্থাগুলির ভারতে ১.৫ মিলিয়ন কর্মী রয়েছে, যা অন্যান্য দেশের থেকে বেশি। এর স্টকমার্কেট বিশ্বের মধ্যে চতুর্থ স্থানে রয়েছে, বিমান চলাচলের ক্ষেত্রে ভারতের বাজার রয়েছে তৃতীয় স্থানে। ভারতের রাশিয়ার তেলের ক্রয় বৈশ্বিক মূল্যের পরিবর্তনের জন্য দায়ী। ক্রমবর্ধমান সম্পদ মানে ভূ-রাজনৈতিক স্তরে  আরও ওজন বৃদ্ধি। হুতিরা সুয়েজ খালে জাহাজ চলাচল  বিঘ্নিত করার পর, ভারত মধ্যপ্রাচ্যে দশটি যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করেছে। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং ডনাল্ড ট্রাম্প একবাক্যে কোনো বিতর্ক ছাড়াই ভারতকে এক  স্বাধীন খেলোয়াড় হিসেবে বর্ণনা করেছেন।  

চীনের মধ্যে আপনি উৎপাদনশীলতা পাবেন- কিন্তু ভারত সম্পূর্ণ আলাদা। পণ্য বাণিজ্য এবং কারখানার স্বয়ংক্রিয়তার ক্ষেত্রে এক সময়ে স্থবির দেশটি আজ উন্নয়নশীল। দেশের প্রবৃদ্ধির জন্য একটি নতুন মডেলের প্রয়োজন। এর একটি স্তম্ভ হলো অবকাঠামো। যা একটি বিশাল একক বাজারকে একত্রিত করে। ভারতের ১৪৯টি বিমানবন্দর রয়েছে, যা এক দশক আগের সংখ্যার তুলনায় দ্বিগুণ। বছরে ১০ হাজার কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ এবং ১৫ গিগাওয়াটের সৌর শক্তির ক্ষমতা উন্নয়নে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এর পাশাপাশি ডিজিটাল পেমেন্ট, আধুনিক পুঁজিবাজার এবং ব্যাংক এবং একীভূত ডিজিটাল কর ব্যবস্থা নতুন মাত্রা যোগ করেছে ভারতের বাজারে। এই সমস্ত কিছুই জাতীয় অর্থনীতির জন্য প্রয়োজনীয়। 

দ্বিতীয় আরেকটি স্তম্ভ হলো পরিষেবা রপ্তানি, যা ১০% জিডিপিতে পৌঁছেছে। পরিষেবাগুলিতে বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য এখনো বাড়ছে। চটকদার প্রযুক্তি ক্যাম্পাস সত্ত্বেও, ভারতে  এখনো একটি অর্ধ-গ্রামীণ সমাজ বিদ্যমান। কয়েক মিলিয়ন দরিদ্র ভারতবাসী আজ ডিজিটাল ট্রান্সফার পেমেন্টের সুবিধা পাচ্ছে , যা অর্থনৈতিক মডেলের চূড়ান্ত স্তম্ভ।  নতুন তথ্য বলছে  দৈনিক ২.১৫ ডলারের কম আয়ে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা কমছে। ২০১১ দারিদ্র্যের  বৈশ্বিক পরিমাপ ১২% থেকে ৫% এর নিচে নেমে এসেছে। 

এর জন্য মোদি কতোটা কৃতিত্বের যোগ্য? তার সবচেয়ে সফল নীতিগুলি উদারপন্থি এজেন্ডাকে তুলে ধরে যা ১৯৯০ এবং ২০০০-এর দশকের মধ্যে ভারতে আবির্ভূত হয়েছিল। ব্যক্তিগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে মোদি স্থবির অর্থনীতিকে সচল করার এবং বিরোধীদের ঘায়েল করার জন্য কৃতিত্বের দাবিদার। কেউ কেউ বলছেন তিনি ‘ক্রনি ক্যাপিটালিজম’ লালন করেছেন। যদিও কিছু বড় সংস্থা ব্যবসায় সুবিধা পাচ্ছে, তবুও দুর্নীতি হ্রাস পেয়েছে এবং ব্যবসায় একটি বৈচিত্র্য লক্ষ্য করা গেছে। একজন সিইও এবং একজন  পপুলিস্ট মানসিকতার মোদি পাওয়ারপয়েন্ট উপস্থাপনাগুলিকে যেকোনো সমাবেশের মতোই পছন্দ করেন। তিনি  আরও পাঁচ বছরের জন্য ক্ষমতায় থাকলে ভারত আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে। তাহলে কী দেশের  মধ্যবিত্ত ৬০ মিলিয়ন মানুষ ২০২৭ সাল নাগাদ বছরে ১০ হাজার ডলারের বেশি আয় করবে? উত্তর ১০০ মিলিয়ন, রিকন্স গ্লোডম্যান স্যাক্স, এমন একটি ব্যাংক যার এখন ভারতে তার কর্মী রয়েছে ২০%। তবুও ভারতে, বেকারত্ব একটি ভয়ঙ্কর সমস্যা। দেশের ১ বিলিয়নের বেশিরভাগই নৈমিত্তিক কাজে আটকে পড়েছে নতুবা বা বেকার জীবন কাটাচ্ছে।  

যদিও মোদির বলার মতো খুব কমই কিছু আছে। তার ভারতীয় জনতা পার্টির কিছু মতাদর্শগত ধারণা এবং মুসলিম বিরোধী মনোভাব রয়েছে। ক্রমবর্ধমান উদারবাদ রাজনৈতিক বিরোধিতা এবং মুক্ত বক্তৃতার স্বাধীনতাকে হ্রাস করেছে। যে সত্যটি মোদিকে তাড়া করে বেড়ায় তা হলো কেন দেশে বিনিয়োগ এখনো বাড়েনি। ২০৩০-এর দশকে বিশাল সামাজিক পরিবর্তনের জন্য জনসাধারণকে প্রস্তুত করার প্রক্রিয়া সবেমাত্র শুরু হয়েছে। শিক্ষা, শহর এবং কৃষি ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারগুলির সহযোগিতার প্রয়োজন। কারণ যে রাজ্যগুলি বিজেপি দ্বারা পরিচালিত নয় যেগুলি বাধার সম্মুখীন হচ্ছে। মোদির কট্টর রাজনীতি তাদের অনেককে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে।
 

পাঠকের মতামত

ভারত ৫ম স্হানে এবং তার অর্থনীতি ৩.৮৫ ট্রিলিয়ন, প্রথম স্হানে থাকা যুক্তরাষ্ট্রে ২৮+ ট্রিলিয়ন এবং চীন ১৮+ ট্রিলিয়ন, বাংলাদেশ .৫ ট্রিলিয়ন ।স্হান না দেখে অর্থনীতির সাইজ দেখুন তাহলে পরিস্কার হবে কার মুরোদ কত।

Mashud Hasan
২৮ এপ্রিল ২০২৪, রবিবার, ৮:০৬ অপরাহ্ন

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status