ঢাকা, ২০ মে ২০২৪, সোমবার, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিঃ

শেষের পাতা

সিলেটের ট্যাক্স নিয়ে যে ব্যাখ্যা দিলেন আরিফ

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
১০ মে ২০২৪, শুক্রবার
mzamin

সিলেটে ‘বার্নিং ইস্যু’ অস্বাভাবিক হোল্ডিং ট্যাক্স নিয়ে ব্যাখ্যা দিলেন সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। বলা হচ্ছে; এই হোল্ডিং ট্যাক্স তার ১০ বছরের শাসনের শেষদিকে প্রস্তুত করা। ২৭ ওয়ার্ডের জন্য এসেসমেন্ট করে প্রায় ৭৬ হাজার ভবনের জন্য এই ট্যাক্স ধার্য করা হয়েছে। আর সেটি এসে কার্যকর করছেন বর্তমান মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। সম্প্রতি সিলেটের সাংবাদিকদের কাছে পূর্বের ধারাবাহিকতার বিষয়টি উল্লেখ করে বক্তব্য দিয়েছেন বর্তমান মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। গতকাল নিজ বাসভবনে এ নিয়ে সাংবাদিকদের কাছে প্রেস ব্রিফিংয়ে বিষয়টি খোলাসা করেন সাবেক মেয়র আরিফ। পূর্বের ধারাবাহিকতার বিষয়টি তিনিও উল্লেখ করে বলেন; আমার সময়ে হোল্ডিং ট্যাক্স নিয়ে  যে এসেসমেন্ট করা হয়েছিল সেটি আমরা সভায় বসে আলোচনা করেছি। এরপর সেটি মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়। কিন্তু অতিমারী করোনা বিবেচনা করে শেষদিকে এসে সিটি করপোরেশনের এক সভায় এটি স্থগিত করা হয়েছে। ওই সময় ট্যাক্স এসেসমেন্টের নানা অসঙ্গতি তুলে ধরে সাবেক মেয়র বলেন, আমার পরিষদের কাউন্সিলর, স্টেকহোল্ডারসহ সাংবাদিক, আইনজীবী ও ব্যবসায়ীরা ধার্য করা টেক্সের পদ্বতিগত নানা জায়গায় আপত্তি জানিয়েছিলেন।

বিজ্ঞাপন
এই আপত্তিগুলোকে আমাদের পরিষদ আমলে নিয়েছে। সার্বিক বিবেচনা করে ওই সময় হোল্ডিংয়ের বিষয়টি স্থগিত করা হয়েছিল। সিলেট সিটি করপোরেশনের বিগত দিনে হোল্ডিং ট্যাক্স নির্ধারণ ও কার্যকর করা হয়নি উল্লেখ করে আরিফ জানান, সিটি করপোরেশনে ট্যাক্স সরকার কর্র্তৃক নির্ধারণ হয় না। এটা গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের নিয়ম ফলো করে করা হয়ে থাকে। ২০১৭-০৮ সালে সাবেক মেয়র কামরানের সময় একটি এসেসমেন্ট করা হয়। কিন্তু সেটি কার্যকর হয়নি। ২০১১ সালে নতুন করে এসেসমেন্ট করার জন্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা ছিল।  সেটিও সম্ভব হয়নি। নিয়ম হচ্ছে; প্রতি ৫ বছর পরপর এসেসমেন্ট করে হোল্ডিং ট্যাক্স ধার্য করা। কিন্তু বিগত পরিষদ করোনা, বন্যাসহ নানা কারণে সেটি করতে পারেনি। তবে ২০১৭ সাল থেকে একটি এসেসমেন্ট শুরু করা হয়। এরপর ২০১৯ সালে এটি শেষ হয়। তিনি বলেন; ওই এসেসমেন্টে নানা জায়গায় অসঙ্গতি ছিল। দেখা গেছে; কোথাও কোথাও টিনের ঘরের ট্যাক্স বহুতল ভবনের চেয়ে বেশি এসেছে। ফলে পরিষদের নির্বাচিত কাউন্সিলররা সেটি নতুন করে নিরপেক্ষ কোনো ফার্ম দিয়ে এসেসমেন্ট করার দাবি তুলেছিলেন। আমরা সে বিষয়টিকে আমলে নিলেও সময় কম থাকার কারণে করা সম্ভব হয়নি। আরিফ বলেন, সিলেট সিটি করপোরেশনে হোল্ডিং ট্যাক্স প্রদানের ধারাবাহিকতা থাকলে এখন সেটি নিয়ে ক্ষোভ দেখা দিতো না। হঠাৎ করে নগরবাসীর মধ্যে করের বোঝা চাপিয়ে না দিতেই আমরা সেটি স্থগিত করেছিলাম। এতে নাগরিক জীবনে অস্বস্তি তৈরির আশঙ্কা করেছিলাম। এখন সেই অস্বস্তি হচ্ছে। নতুন  হোল্ডিং ট্যাক্স কার্যকরের ব্যাপারে বর্তমান মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে সরাসরি দায়ী করছেন না সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। তিনি বলেন, জনগণকে ট্যাক্স দিতে হবে। সরকার কর্তৃক নির্ধারিত আছে; যে সিটি করপোরেশনে যত বেশি ট্যাক্স আদায় হবে সেখানে তত বেশি বরাদ্দ আসবে। তবে; স্থগিত করা ওই ট্যাক্সকে ওপেন করার আগে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করা উচিত ছিল। এসব বিষয়ে  মেয়রকে পরামর্শ দেয়া উচিত ছিল প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাসহ প্রশাসনে থাকা কর্মকর্তাদের। কিন্তু তারা সে পরামর্শ দেয়নি। এ কারণে ট্যাক্স নিয়ে সিলেটে এবার জটিলতা দেখা দিয়েছে। সাবেক এই মেয়র বলেন, ধার্য করা ট্যাক্স তুলতে হলে পরিষদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এরপর সেটি নিয়ে গণশুনানি করা প্রয়োজন। কিন্তু তা না করে এই ট্যাক্স কার্যকর করার উদ্যোগ নেয়া অনুচিত। তার পরামর্শ; এখনই  হোল্ডিং ট্যাক্স কার্যকরের যে সিদ্ধান্ত করা হয়েছে সেটি স্থগিত করে আলোচনা শুরু করলে সুন্দর সমাধান বেরিয়ে আসবে। নতুবা জনমনে অস্বস্তি বাড়বে। 

সারেগের স্মারকলিপি: সিলেট অ্যাপার্টমেন্ট অ্যান্ড রিয়েল এস্টেট গ্রুপ (সারেগ) গতকাল এ নিয়ে সিটি মেয়রের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে। এসময় তারা বলেছে, করপোরেশন কর্তৃক অতি সমপ্রতি সিলেটের বাসা-বাড়িতে নির্ধারিত হোল্ডিং ট্যাক্স বিষয়ে সিলেট সিটি করপোরেশনের নাগরিকরা হতাশ এবং সংক্ষুব্ধ। সিলেট সিটি করপোরেশন কর্তৃক নির্ধারিত হোল্ডিং ট্যাক্স দেখে জনসাধারণের মাঝে একটি অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে। তারা দাবি জানান, অযৌক্তিক, অযাচিত এবং অকল্পনীয় হোল্ডিং ট্যাক্স বাতিল করে বাস্তবসম্মত এবং বিগত বছরের হোল্ডিং ট্যাক্সের সঙ্গে সমন্বয় করে হোল্ডিং ট্যাক্স পুনঃনির্ধারণ করা হোক। অন্যথায় আমরা রিয়েল এস্টেট গ্রুপের পক্ষ থেকে নগরবাসীকে নিয়ে যেকোনো আন্দোলনে নামবো। স্মারকলিপি প্রদানকালে উপস্থিত ছিলেন সিলেট অ্যাপার্টমেন্ট অ্যান্ড রিয়েল এস্টেট গ্রুপ (সারেগ)’র সভাপতি মাওলানা খায়রুল হোসেন, ১ম সহ-সভাপতি মাহী উদ্দিন আহমদ সেলিম, সাধারণ সম্পাদক দিলওয়ার হোসাইনসহ কর্মকর্তারা। 

সিলেট কল্যাণ সংস্থার অবস্থান কর্মসূচি: একই দাবিতে সিলেট কল্যাণ সংস্থার পক্ষ থেকে নগর ভবনের সামনে ৩০ মিনিটের অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়। পরে মেয়র বরাবর স্মারকলিপিও দেয়া হয়। স্মারকলিপিতে তারা বলেন, মানবিক দিক বিবেচনা করে আরোপিত হোল্ডিং ট্যাক্স আদায় কার্যক্রম স্থগিত করে পূর্বের হোল্ডিং ট্যাক্সের সঙ্গে সমন্বয় করে নতুন  হোল্ডিং ট্যাক্স পুনঃনির্ধারণ করতে হবে। সিলেট কল্যাণ কার্যকরী কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ এহছানুল হক তাহেরের সভাপতিত্বে ও সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ রাসেলের পরিচালনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন  মো. আজিজুর রহমান আজিজ। একাত্মতা পোষণ করে বক্তব্য রাখেন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ট্রাস্ট অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মো. দেলোয়ার হোসাইন খান, ছায়েরা সিদ্দিক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আক্কাছ খান প্রমুখ।
 

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status