ঢাকা, ১৯ মে ২০২৪, রবিবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিঃ

শেষের পাতা

‘পূর্বের রেখে যাওয়া হোল্ডিং ট্যাক্স আমি ইমপ্লিমেন্ট করেছি’

স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট থেকে
৮ মে ২০২৪, বুধবার

দায় নিতে চান না সিলেটের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। হোল্ডিং ট্যাক্স ধার্য তিনিও করেননি। জানালেন, ‘পূর্বের পরিষদ করে গেছে। এখন আমি ইমপ্লিমেন্ট করছি।’ গতকালই তিনি সাংবাদিকদের কাছে খোলামেলাভাবে এ কথা জানিয়েছেন। বিষয়টি জটিল। এত  হোল্ডিং ট্যাক্স সিলেট নগরবাসী কখনোই পরিশোধ করেননি। হিসাব বলছে, যেখানে ১৩ কোটি টাকা হোল্ডিং ট্যাক্স আদায় হতো সেখানে এখন ১১৩ কোটি টাকা আদায় হবে। নতুন করের বোঝার চাপে পিষ্ট নগরবাসী। এতে নগর জীবনে প্রভাব পড়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। বেড়ে যেতে পারে বাসা ভাড়া।

বিজ্ঞাপন
এ নিয়ে সৃষ্টি হতে পারে অস্থিরতা। আন্দোলনও দানা বাঁধছে। এরই মধ্যে দক্ষিণ সুরমায় প্রতিবাদ সভা হয়েছে। বড় আকারে সভা করার ঘোষণা দিয়েছে তারা। সিলেট নগরের বিভিন্ন স্থানে সভা হচ্ছে। হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ানোর বিষয়টি অযৌক্তিক বলে দাবি করা হচ্ছে। এই দাবির পক্ষে যুক্তিও আছে। ২০০৭ সালে ধার্য করা হোল্ডিং ট্যাক্স ছিল খুবই কম। সেখান থেকেও সাবেক মেয়ররা নগরবাসীর স্বার্থ বিবেচনা করে আলোচনাক্রমে কমিয়েছেন। সেই হিসেবে এখন ধার্য করা হোল্ডিং ট্যাক্স প্রায় ৬০ ভাগ বেড়ে যাচ্ছে। এই অবস্থায় মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী গতকাল সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন। মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর কাছে প্রশ্ন ছিল যে হোল্ডিং ট্যাক্স ধার্য রয়েছে সেটি নগরবাসীর জানা উচিত ছিল কিনা। জবাবে মেয়র আনোয়ার জানিয়েছেন- ‘অবশ্যই নগরবাসীর কনসার্ন থাকা উচিত। আমরা যা কিছু করি নাগরিকদের জন্যই করি। আমি যে গাড়ি চালাই, পেট্রোল পাই, অনারিয়াম পাই- এটা কিন্তু ওই নাগরিকদের দেয়া।’ ট্যাক্সের বিষয়টি  দেশের প্রতিটি সিটি করপোরেশনের ট্যাক্সের বিষয়টি স্থানীয় সরকার থেকে নির্ধারণ করে দেয়া উল্লেখ করে মেয়র বলেন, ‘এর ভিত্তিতে আগের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ২০১৯ সালে একটি এসেসমেন্ট করিয়েছিলেন। এসেসমেন্ট করার পর আমাদের তৎকালীন সিলেট সিটি করপোরেশনের ক্যাবিনেটে কাউন্সিলরদের সঙ্গে নিয়ে সেটিকে পাস করেছেন। এরপর তারা সেটি অনুমোদনের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠান। মন্ত্রণালয় আলোচনাক্রমে সেটিকে অনুমোদন দিয়ে আমাদের কাছে পাঠিয়েছে। আমাদের বর্তমান ক্যাবিনেট সেটিকে কন্টিনিউ বা ইমপ্লিমেন্ট করতে যাচ্ছি।’ মেয়র জানান, ‘আমরা নগরবাসীকে দুই সপ্তাহ করে সময় দিয়ে বিষয়টি শুনবো। যদি সেটি বেড়ে থাকে কমানোর সুযোগ আছে।’ তবে যৌক্তিক ট্যাক্স হলে সেটি দেয়ার জন্য তিনি নগরবাসীকে আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘ট্যাক্স না দিলে উন্নয়ন হয় না। সব কিছুর পর টাকার প্রয়োজন। তবে ট্যাক্সের বিষয়টিকে সহনীয় পর্যায়ে রাখতে চাই। এতে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। আমরা আলোচনার ভিত্তিতে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবো।’ মেয়র জানিয়েছেন, ট্যাক্স সহ আনুষঙ্গিক বিষয়ে তিনি তার পরিষদের কাউন্সিলরদের নিয়ে বৈঠক করবেন। প্রাথমিক ভাবে বৈঠকেও এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। এদিকে আরোপিত করের বিষয়ে সিলেট সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মকর্তারা মানবজমিনকে জানিয়েছেন, সরকার কর্তৃক যে কর ২০ শতাংশ হারে হোল্ডিং ট্যাক্স আসে এর কাছাকাছি কিংবা সমপরিমাণ ট্যাক্স অন্যান্য সিটি করপোরেশনের জন্য ধার্য করা আছে। তবে নাগরিক অসন্তোষ কমাতে সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়ররা ধার্য কর অনুপাতে কখনোই গ্রহণ করেননি। আলোচনা ক্রমে হোল্ডিং ট্যাক্স আদায় করেছেন। বর্তমান মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী এখন আপিল গ্রহণ করছেন। এরপর সেটিকে শুনানির পর যৌক্তিক বিবেচনায় সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে ধার্য করা কর কমানোর বিষয়টি নতুন করে বিবেচনায় নেয়ার সুযোগ কম রয়েছে। কারণ উল্লেখ করে কর্মকর্তারা বলেন, মন্ত্রণালয়েরও বেঁধে দেয়া নিয়ম রয়েছে। সেই নিয়ম মেনে চলতে হচ্ছে। এদিকে- হোল্ডিং ট্যাক্সের বিষয়টি নিয়ে ভাবছেন নগরের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। তবে এখনো তিনি এ ব্যাপারে কোনো বক্তব্য দেননি। তার ঘনিষ্ঠজনেরা জানিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে সাবেক মেয়রের সঙ্গে বর্তমান মেয়রের টেলিফোনে কথা হয়েছে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে বৈঠক হতে পারে। নগরবাসীর স্বস্তি বিবেচনা করে এ নিয়ে নতুন কোনো পথ খোঁজা হতে পারে বলে জানান তারা। 
সিলেট জেলা বিএনপি’র বিবৃতি: সিলেট সিটি করপোরেশন নতুন এসেসমেন্টের ওপর ভিত্তি করে নগরবাসীর ওপর ভৌতিক ও অস্বাভাবিক হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে এই অস্বাভাবিক ট্যাক্স প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন সিলেট জেলা বিএনপি’র সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী। মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এই প্রতিক্রিয়া জানান সিলেট জেলা বিএনপি’র নেতৃবৃন্দ। গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে জেলা বিএনপি’র নেতৃবৃন্দ বলেন, অপর্যাপ্ত নাগরিক সুযোগ-সুবিধা ও নগরবাসীকে অবর্ণনীয় দুর্ভোগের মধ্যে রেখেই নতুন এসেসমেন্টের নামে শতকরা ৫ হাজার শতাংশ থেকে শুরু করে ১০-১১ হাজার শতাংশ পর্যন্ত হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ানো হয়েছে। যা সম্পূর্ণ অন্যায়, অমানবিক ও নগরবাসীর প্রতি জুলুম।

বৃহস্পতিবার ৩০ মিনিট অবস্থান কর্মসূচি: মাত্রাতিরিক্ত হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধির প্রতিবাদে আগামীকাল বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সিলেট সিটি করপোরেশন প্রাঙ্গণে ৩০ মিনিট অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা করেছে সিলেট কল্যাণ সংস্থা। এ সময় মেয়র বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করা হবে বলে জানিয়েছেন সংস্থার সভাপতি এহসানুল হক তাহের। তিনি জানান, সংস্থার সদস্যদের নিয়ে সভা করে এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। এ নিয়ে জনগণের সঙ্গে আন্দোলনে থাকবে সিলেট কল্যাণ সংস্থা।
 

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status