বিশ্বজমিন
চিকিৎসক বাড়ানো পরিকল্পনার বিরুদ্ধে দ. কোরিয়ার ডাক্তারদের ধর্মঘট
মানবজমিন ডেস্ক
(১১ মাস আগে) ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, মঙ্গলবার, ১:৩৫ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১২:১৪ পূর্বাহ্ন
স্বাস্থ্যখাতে আরও চিকিৎসক বাড়ানোর প্রতিবাদে কাজ থেকে ওয়াকআউট করেছেন দক্ষিণ কোরিয়ার কমপক্ষে এক হাজার জুনিয়র ডাক্তার। প্রতিবাদে আরও চিকিৎসক যোগ দিতে পারেন। এ অবস্থায় তাদেরকে কাজে ফেরার আহ্বান জানিয়েছে সরকার। কর্মকর্তারা বলছেন, সোমবার পদত্যাগ করেছেন কমপক্ষে ৬ হাজার ইন্টার্ন এবং আবাসিক চিকিৎসক। অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টভুক্ত (ওইসিডি) দেশগুলোর মধ্যে রোগীপ্রতি চিকিৎসকের হার সবচেয়ে কম দেশের মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়া অন্যতম। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এর ফলে বিশাল আকারের যে প্রতিযোগিতা সামনে তার বিরোধিতা করছেন চিকিৎসকরা। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি।
দক্ষিণ কোরিয়ার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা উচ্চ মাত্রায় বেসরকারিভিত্তিক। বেশির ভাগ কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয় ইন্স্যুরেন্স পেমেন্টের হিসাবে। শতকরা কমপক্ষে ৯০ ভাগ হাসপাতালই বেসরকারি। বিশ্বে সবচেয়ে ভাল বেতন দেয়া হয় এখানকার চিকিৎসকদের। ২০২২ সালের ওইসিডির ডাটা অনুযায়ী সেখানে সরকারি হাসপাতালের একজন বিশেষজ্ঞ বছরে গড়ে প্রায় দুই লাখ ডলার বেতন পান। জাতীয় গড় বেতনের চেয়ে অনেক বেশি এই অংক। তা সত্ত্বেও সেখানে প্রতি এক হাজার মানুষের জন্য আছেন মাত্র ২.৫ জন ডাক্তার। ওইসিডিভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে মেক্সিকোর পর দ্বিতীয় সর্বনিম্ন এই দেশটি।
সিউল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সরকারি স্বাস্থ্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞ প্রফেসর সুনমান খৌন বলেন, অধিক সংখ্যক ডাক্তার থাকার অর্থ হলো অধিক পরিমাণ প্রতিযোগিতা। তাতে তাদের আয়ও কমে যাবে। এ জন্য চিকিৎসক বাড়ানোর প্রস্তাবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বিক্ষোভ করছেন চিকিৎসকরা। এমন অবস্থায় সারাদেশের হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসকদের উপস্থিতি কমে যাওয়ায় মঙ্গলবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রোগী ও স্বাস্থ্য বিষয়ক কর্মকর্তারা। ইমার্জেন্সি ওয়ার্ডের গুরুত্বপূর্ণ হলেন জুনিয়র ডাক্তাররা। স্থানীয় একটি মিডিয়া রিপোর্ট করেছে যে, রাজধানী সিউলের বড় বড় হাসপাতালগুলোতে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন শতকরা ৩৭ ভাগ চিকিৎসক।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, সোমবার কাজে যোগ দেননি ১৬৩০ জন চিকিৎসক। অন্যদিকে ৬৪১৫ জনের বিশাল একটি গ্রুপ পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। আজ মঙ্গলবার থেকে সর্বাত্মক ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন আয়োজকরা। এ সপ্তাহের শুরুতে স্বাস্থ্য বিষয়ক দ্বিতীয় ভাইস মন্ত্রী পার্ক মিন-সু বলেছেন, ট্রেইনি ডাক্তাররা কাজে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছেন। এতে আমরা গভীরভাবে হতাশ। তিনি আরও বলেন, চিকিৎসকদেরকে কাজে ফেরাতে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারে সরকার।
দেশটির মেডিকেল সার্ভিসেস অ্যাক্টের অধীনে কর্তৃপক্ষ যেকোনো ডাক্তারের প্র্যাকটিস করার লাইসেন্স বাতিলের ক্ষমতা রাখে। এটাকে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার হুমকি বলে মনে করা হয়। অন্য চিকিৎসকদের প্রতিবাদের বিষয়ে আগেই কর্তৃপক্ষ তাদের বিচারের উদ্যোগ নিয়েছে। মন্ত্রী পার্ক বলেন, আমরা তাদেরকে দলে দলে কাজে যোগ দেয়ার জন্য আন্তরিক আহ্বান জানাচ্ছি।
একই সঙ্গে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে উন্নত করার বিরুদ্ধে চিকিৎসকদের এই বিরোধিতার নিন্দা জানিয়েছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী হ্যান ডাক-সু বলেন, চিকিৎসকরা এমন একটি বিষয়কে বেছে নিয়েছেন, যাতে মানুষের জীবন ও স্বাস্থ্যকে জিম্মি করা হয়েছে। তাদের এই ধর্মঘটের ফলে কি প্রভাব পড়ছে তা এখনও পরিষ্কার নয়। তবে কর্মকর্তারা সতর্ক করেছেন। তারা বলেছেন, সার্জারিতে বিলম্ব ঘটতে পারে। এমন অবস্থায় কিছু হাসপাতাল বিকল্প পরিকল্পনা নিয়েছে। সরকার বিস্তৃত করেছে টেলিহেলথ সার্ভিস। চিকিৎসকদের এই বিক্ষোভ ২০২০ সালের আন্দোলনের মতো। ওই সময় চিকিৎসক নিয়োগে সরকারি পরিকল্পনার বিরোধিতায় ধর্মঘটে যোগ দিয়েছিলেন শতকরা ৮০ ভাগ চিকিৎসক।
দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রবীণের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। এর ফলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ছে। ২০৩৫ সালের মধ্যে সেখানে ১৫ হাজারের বেশি ডাক্তারের ঘাটতি দেখা দেবে। এর প্রেক্ষিতে বিভিন্ন সময়ে চিকিৎসকের সংখ্যা বাড়াতে চেষ্টা করেছেন নীতিনির্ধারকরা।