ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

অনলাইন

বানভাসিরা বাড়ি না ফিরতেই সুনামগঞ্জে ফের বন্যা

এমএ রাজ্জাক, তাহিরপুর (সুনামগঞ্জ) থেকে

(১ বছর আগে) ৩০ জুন ২০২২, বৃহস্পতিবার, ১১:০০ পূর্বাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ২:২১ অপরাহ্ন

mzamin

বানভাসিরা বাড়ি ফিরতে না ফিরতেই ফের সুনামগঞ্জের ২৫ লাখ মানুষের মধ্যে নতুন করে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। গত ১৪ দিন ধরে বন্যার পানির সঙ্গে যুদ্ধ করছেন জেলার ৯০ ভাগ পানিবন্দি মানুষ। বেঁচে থাকার যুদ্ধ এখনও শেষ হয়নি, নতুন করে আবার বাঁচার আকুতি শুরু হয়েছে। গেল কয়েকদিন আকাশে রৌদ এবং পানি কমায় বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হচ্ছিল। আশা নিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে থাকা লোকজন বাড়ি ফিরতে শুরু করছিলেন। চলতি বন্যার পানি ঘরবাড়িতে থাকায় বাড়ি ফিরতে পারেননি জেলার ৬৫ হাজার মানুষ। আশ্রয়কেন্দ্রে এবং বন্যাকবলিত গ্রামগুলোতে মানবেতর জীবনযাপন করছেন ক্ষতিগ্রস্তরা। চলমান বন্যা পরিস্থিতির মধ্যে গত দুদিন ধরে টানা বৃষ্টি এবং পাহাড়ি ঢলে নদী ও হাওরে পানি বৃদ্ধি হওয়ায় আবার বন্যা দেখা দিয়েছে। এতে জেলা, উপজেলা ও গ্রামীণ রাস্তাঘাট আবার বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ভারি বৃষ্টি এবং হাওরের উত্তাল ঢেউয়ে হাওর পাড়ের বাড়িঘর তছনছ করে দিচ্ছে।

বিজ্ঞাপন
বন্যা কবলিত গ্রামবাসীরা গবাদিপশু, ধান চাল ও নিজেদের জীবন নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের দিকে যেতে দেখা গেছে। বুধবার রাত থেকে টানা বৃষ্টি হচ্ছে, থামার কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। আকাশে বজ্রপাতের গর্জন, চারদিকে বৈরী আবহাওয়ায় অন্ধকার হয়ে আছে। তবে, তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রায়হান কবির জানিয়েছেন, আতংকিত হওয়ার কিছু নেই। আগের বন্যার তুলনায় এখনকার পানি এতো হবে না। তিনি বলেছেন, বন্যা মোকাবেলায় জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী, পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো প্রস্তুত রয়েছে। 
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, আগামী ২৪-৪৮ ঘন্টায় বাংলাদেশের উত্তাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং তৎসংলগ্ন ভারতের আসাম মেঘালয় ও হিমালয় পাদদেশীয় এলাকায় ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। এতে নদনদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে আগামী ২৪ ঘণ্টা দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা অবনতি হতে পারে। আবহাওয়া পূর্বাভাস ও ফের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বানভাসি মানুষের মাঝে নতুন করে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় সুনামগঞ্জে বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ১৯৬ মিলিমিটার। ফলে সুনামগঞ্জের সুরমা নদীসহ কয়েকটি নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। 
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, বুধবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত সুরমা নদীর নবীনগর পয়েন্ট দিয়ে বিপদসীমার ১২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। বুধবার রাতে ভারী বৃষ্টিপাত হলে নদীর পানি বৃদ্ধিসীমা অতিক্রম করে জেলার বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা অবনতি হয়েছে। তাহিরপুর উপজেলা সহ জেলার সব কয়টি উপজেলার জেগে উঠা ক্ষতবিক্ষত রাস্তাঘাট এবং বাড়ির উঠানে পানি উঠেছে এবং নিচু এলাকার ঘরে পানি ঢুকেছে। এছাড়া জেলার অধিকাংশ বাজার, মসজিদ, স্কুল মাদ্রাসা, অফিস আদালতে নতুন করে পানি প্রবেশ করেছে।

এদিকে দুই দফা বন্যায় জেলার লক্ষাধিক কাচা-আধা কাচা, টিন শেডের ঘরের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অনেকের ঘরে বেড়া, টিন, বাঁশের বানের পানিতে ভেসে গেছে। হাওরের ঢেউয়ে তছনছ  হয়ে গেছে। বন্যা পরবর্তী পুনবার্সন নিয়ে দুশ্চিন্তায় বানভাসি পরিবার। এক্ষেত্রে সরকারের সরকারি বেসরকারি সহযোগিতা চেয়েছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।

তাহিরপুর উপজেলার গোলাবাড়ী গ্রামের তোষা মিয়া বলেন, বন্যা আমার বাড়িঘর সব নিয়ে গেছে। আমি বড় অসহায় হয়ে গেছি। নতুন করে বাড়িঘর নির্মাণের সামর্থ্য আমার নেই।

বালিয়াঘাট গ্রামের সুহেল বলেন, বন্যায় যে ক্ষতি হয়েছে তার সেরে উঠার সম্ভাবনা, নতুন করে আবার বন্যা শুরু হয়েছে। সরকার যদি সাহায্য না করে তাহলে যাওয়ায় জায়গা নেই আমাদের। সুফিয়া নামে একজন বন্যা পরবর্তী সময়ে বানভাসিদের পুনবার্সন করার দাবি জানান তিনি।

জেলা ত্রাণ ও দুযোগ বিষয়ক কর্মকর্তা মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বলেন, বন্যায় কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা নিরুপণ করা হচ্ছে। আগামী দুয়েকদিনের মধ্যে তালিকা আমাদের কাছে চলে আসবে। প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতির তালিকা চলে আসলে পুনবার্সনের জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ করা হবে। জেলা উপজেলায় সরকারি বেসরকারি খাদ্য সহায়তা অব্যাহত রয়েছে। তবে প্রয়োজনের তুলনায় কম বলে জানিয়েছেন বানভাসিরা।

 

অনলাইন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

অনলাইন সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status