বিশ্বজমিন
ভারতের হস্তক্ষেপে প্রতিবেশীরা কেন ক্ষুব্ধ
লিন মিনওয়াং
(৯ মাস আগে) ২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, শুক্রবার, ১১:১৮ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ৪:৩৫ অপরাহ্ন
সম্প্রতি ‘ইন্ডিয়া আউট’ প্রচারণা গতি পেয়েছে বাংলাদেশে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘ইন্ডিয়া আউট’ প্রচারণায় মূলত বাংলাদেশিদের প্রতি আহ্বান জানানো হচ্ছে ভারতীয় পণ্য বর্জনের জন্য। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতের হস্তক্ষেপের প্রতিবাদে এটা করা হচ্ছে। মালদ্বীপেও একইভাবে ‘ইন্ডিয়া আউট’ প্রচারণা চলছে। একসঙ্গে এই দুটি প্রচারণা ভারতের বিরুদ্ধে প্রতিবেশীদের তীব্র ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। এরই মধ্যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্ভাব্য চীন সফরের খবরে ভারতের মনোযোগ আকৃষ্ট হয়েছে।
এমন ঘটনার প্রেক্ষাপটে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্কর মঙ্গলবার বলেছেন, প্রতিটি প্রতিবেশীরই সমস্যা আছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সবারই সবার প্রয়োজন আছে। ইতিহাস ও ভূগোল অত্যন্ত শক্তিশালী শক্তি। তা থেকে বেরিয়ে আসা যাবে না।
এ থেকে বোঝা যায় মালদ্বীপ ও বাংলাদেশ ঐতিহাসিক ও ভৌগলিকভাবে ভারতের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাই বর্তমান ‘ভারতবিরোধী মনোভাব’ বড় ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি করবে না। তবে মজার ব্যাপার হলো জয়শঙ্কর তার সাম্প্রতিক লেখা বই ‘হোয়াই ভারত ম্যাটারস’-এ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সরকারের ‘প্রতিবেশীই প্রথম’ নীতি নিয়ে বিস্তারিত লিখেছেন। তিনি যুক্তি দিয়েছেন যে, এই নীতি অত্যন্ত কার্যকর হয়েছে। কারণ, এই নীতি তার প্রতিবেশীদের প্রতি পারস্পরিক সহযোগিতা ও উদারতা অনুসরণ করে। এর মূলে এটা ভারতের প্রতিবেশীদের ভারতের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখার সুবিধাগুলোর উপলব্ধি করার একটি উপায়। তবে ‘ইন্ডিয়া আউট’ প্রচারণা এই দাবিতে কিছুটা আঘাত দিয়েছে।
ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলোতে ভারতের প্রতি ব্যাপক ভীতি, শত্রুতা এবং বিরোধিতার মনোভাব বিদ্যমান। এই মনোভাবের শিকড় ঐতিহাসিকভাবে অনেক গভীরে। সাম্প্রতিক ভারতবিরোধী মনোভাবে প্রকাশ পেয়েছে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রতিবেশী দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ও কূটনীতিতে ভারতের জোরালো হস্তক্ষেপের প্রতি বিরক্তি ও বিরোধিতা থেকে। মোদি সরকারের ‘প্রতিবেশীই প্রথম’ নীতির অধীনে প্রতিবেশী দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ ও কূটনৈতিক বিষয়ে অধিক পরিমাণে গভীরভাবে যুক্ত হয়েছে ভারত। এসব দেশের ভিতরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং ধর্মীয় গ্রুপগুলোকে প্রভাবিত করে এবং এসব দেশের অভ্যন্তরে জাতীয়তাবাদী শক্তিগুলোকে দমন করে ভারতপন্থি শক্তির প্রতি সমর্থন দিয়েছে। উপরন্ত ‘অখণ্ড ভারত’ আখ্যান দিয়ে একটি অবয়ব সৃষ্টি করেছে ভারত। ‘অখণ্ড ভারত’ ডোমেইনের আওতায় নেয়া হয়েছে সব প্রতিবেশী দেশকে, যা কেবল অন্য দেশগুলোকে খাটো ও হ্রাস করে না, একই সঙ্গে ভারতের আঞ্চলিক আধিপত্যের ধারণাকেও উন্মোচিত করে।
মূলত, বিদেশি ‘অ্যাকশন’ নির্ধারিত হয় আদর্শিক চেতনা দ্বারা। এই ধারণাটিকে মাথায় রেখে ভারতের রাজনৈতিক অভিজাতরা দক্ষিণ এশিয়াকে তাদের ‘উঠোন’ হিসেবে এবং ভারত মহাসাগরকে ভারতের নিজেদের সাগর বলে মনে করে। দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলকে ভারত তার উত্তরাধিকার জাতিভিত্তিক চিন্তাচেতনা থেকে দেখে থাকে। এ অঞ্চলের গাঠনিক দিক দিয়ে নিজেদেরকে তারা শীর্ষ ‘ব্রাহ্মণ’ হিসেবে বিবেচনা করে। তারা আশা করে অন্য দেশগুলো সেইসব ব্রাহ্মণদের শাসন ও রাজনৈতিক নির্দেশনা মেনে নেবে এবং তা অনুসরণ করবে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর দক্ষিণ এশিয়া থেকে বৃটিশ সাম্রাজ্য প্রত্যাহারের পর দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো আস্তে আস্তে আধুনিক জাতি-রাষ্ট্রে উন্নত হতে থাকে। সার্বভৌম্যের ধারণাটি গভীরভাবে প্রোথিত হয়েছে। ভারতের প্রভাব স্বেচ্ছায় মেনে নিতে রাজি হয়নি কোনো দেশ। প্রতিবেশী কোনো দেশের রাজনৈতিক অভিজাতরা নয়া দিল্লির অধীনস্ত হতেও আগ্রহী নয়। মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজু বলেছেন, আমরা কোনো দেশের ‘ব্যাকইয়ার্ড’ নই। ভারত মহাসাগর কোনো একক দেশের নয়।
যদিও ভারতের শক্তি ও ভৌগোলিক অবস্থা যুক্তরাষ্ট্রের মতো নয়, তবু তারা যুক্তরাষ্ট্রের মতো আঞ্চলিক ‘মনরো ডকট্রিন’ অনুসরণ করতে চায়। ভুটানে ভারতের কারসাজি যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাকইয়ার্ড দেশ পানামার কারসাজির চেয়ে অনেক বেশি। আঞ্চলিক আধিপত্যের জন্য ভারতের পর্যায়ক্রমিক নেতারা দুটি নীতি অনুসরণ করেছেন। তা হলো- বড় কোনো দেশকে হিমালয় অতিক্রম করতে না দেয়া এবং বড় কোনো দেশকে ভারত মহাসাগর শেয়ার করতে না দেয়া। যেসব বড় দেশ দক্ষিণ এশিয়া ও ভারত মহাসাগরে ভারতের আধিপত্যকে মেনে না নেয়, তাদেরকে ভারত দেখে থাকে ভারতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে শত্রুশক্তি হিসেবে। অতীতে যুক্তরাষ্ট্র ছিল একটি শত্রুশক্তি, যা ভারতের আঞ্চলিক আধিপত্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছিল। তবে চীনের উত্থানে এ দেশটিকে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখে থাকে ভারত। তারা বিশ্বাস করে চীনের সমর্থনের কারণে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো ভারতকে চ্যালেঞ্জ দেখানোর সাহস পাচ্ছে।
প্রকৃতপক্ষে, ভারতের আঞ্চলিক আধিপত্যকে খাটো করছে না চীন। এটা করছে ভারতের নিজস্ব নীতি এবং চিন্তাচেতনা। ভারতের বিজ্ঞজন রাজা মোহন বলেছেন, কিছুটা বাস্তব ও সত্য। তাহলো- রাজের মতো ভারতও এ উপমহাদেশে একচেটিয়া প্রভাব বলয়ে রাখতে পারবে এমন ধারণা ছিল ভ্রম। একই সময়ে তিনি আরও বলেছেন, এর ফলে বিশ্বের দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ অর্থনীতি এবং সামরিক শক্তিকে এই অঞ্চলে শক্তির লড়াই থেকে থামাতে পারবে না।
কূটনৈতিক এই ক্ষেত্রে ভারত নিজেকে শারীরিক এবং মানসিকভাবে ক্লান্ত বোধ করতে পারে। এর মূল কারণ হলো, এ অঞ্চলে ভারত নিজেকে খুব বেশি আধিপত্যবাদী হিসেবে দেখে এবং এর ফলে তাদের নিজেদের কাঁধে খুব বেশি দায় নেয়। শুধু মানসিকতাকে শিথিল করে, দক্ষিণ এশিয়া এবং ভারত মহাসাগরকে তাদের নিজেদের প্রভাবের ক্ষেত্রে হিসেবে আর না দেখে এবং অন্য দেশগুলোকে নিয়ে একটি বহুপক্ষীয় দক্ষিণ এশিয়া গড়ে তোলার জন্য কঠোর কাজই পারে সত্যিকার অর্থে ভারতের এই কূটনীতিতে দুর্দশার সমাধান দিতে।
(লেখক ফুদান ইউনিভার্সিটির ইন্সটিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের একজন প্রফেসর। লেখাটি গ্লোবাল টাইমস থেকে অনূদিত)
If all people of our country starting to avoid Indian goods it will be a good steps but the problem is that our present govt is 100% broker for India and India is controlling this country with the help of our present govt and that is the reason India will not face any problem because India will suck our blood in Different way with the help of our govt
অনেক আগে থেকেই ভারতীয় পন্য (আওয়ামী লীগসহ) বর্জন করে আসছি।
সব বাংলাদেশিদের উচিৎ সর্বাবস্থায় ভারতীয় পণ্য বয়কট করা এবং তাতে অনড় থাকা।
চমৎকার বিশ্লেষণ, ধন্যবাদ
অসাধারণ,, ধন্যবাদ,,, আমরা ভারতীয় তাবেদারি মুক্ত হিসেবে থাকতে চাই।
#India Out
ভারতের এই মনোভাবকে কাজে লাগিয়ে ক্ষমতায় টিকে আছে আওয়ামীলী। মূর্খ আমেরিকা ভারতকে দিয়ে যেটা আদায় করতে চাই সেটা কখনোই পারবে না। প্রয়োজন শেষে চীনের সাথে গাটছড়া বেঁধে আমেরিকাকে ধাওয়া দিতে ভারত এক মিনিটও সময় নেবে না।
এখন ভারতের উচিত শুধু নেয়ার মনমানসিকতা থেকে বেরিয়ে এসে প্রতিবেশীদেরও কিছু দেয়া (যেমন বাংলাদেশকে তিস্তার পানি), আসলে দেশ বড় হলেই হবেনা তার মনও বড় করা লাগবে।
ভারতের বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া উচিত।নয়তো ভারত বহুমুখী সমস্যায় পড়বে।
porno borjon korte hobe
ভারতীয় কমলা ও আংগুরও কিনবো না।
দেশ বড়, মন ছোট! দাদাগিরি করাই যাদের চরিত্র! লীগের দোস্ত, কিন্ত জনগণের বন্ধু হতে পারে নাই ভারত।
@মাহফুজার রাহমান >আপনি সত্যিই লিখেছেন। আমার জানামতে বাংলাদেশে "ইন্ডিয়া আউট" মনোভাব বেশ পাকাপোক্ত। প্রতিবেশী বৃহৎ এই দেশটি বাংলাদেশের উপর অত্যন্ত শোষণমূলক মনোভাব পোষণ করে আসছে! যা তাদের বিভিন্ন পদক্ষেপে স্পষ্ট। এতে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্হ হচ্ছে। এই অব্যবস্হাপনার অবসান কাম্য
চমৎকার বাস্তবসম্মত একটি লেখনী।India Out
চমৎকার বাস্তবসম্মত একটি লেখনী।
লেখাটা তথ্য নির্ভর এবং সঠিক পড়ে ভালো লাগলো। পাঠকগন একটু কষ্ট করে পুরো লেখাটা পড়ার চেষ্টা করবেন।
# India Out#
আমার জানামতে বাংলাদেশে "ইন্ডিয়া আউট" মনোভাব বেশ পাকাপোক্ত। প্রতিবেশী বৃহৎ এই দেশটি বাংলাদেশের উপর অত্যন্ত শোষণমূলক মনোভাব পোষণ করে আসছে! যা তাদের বিভিন্ন পদক্ষেপে স্পষ্ট। এতে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্হ হচ্ছে। এই অব্যবস্হাপনার অবসান কাম্য।
চমৎকার বিশ্লেষণ, ধন্যবাদ।
চমৎকার বিশ্লেষণ