ঢাকা, ১৭ মে ২০২৪, শুক্রবার, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৮ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিঃ

অর্থ-বাণিজ্য

দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যে এক নম্বর প্রতিবন্ধকতা দুর্নীতি: সিপিডির জরিপ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

(৪ মাস আগে) ১৭ জানুয়ারি ২০২৪, বুধবার, ২:০২ অপরাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ১২:০১ পূর্বাহ্ন

mzamin

বাংলাদেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা দুর্নীতি বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা। সব ধরনের সেবা প্রাপ্তিতে বৈষম্য রয়েছে। পাশাপাশি সরকারি প্রতিষ্ঠানের অদক্ষতাকেও দায়ী করেছেন তারা।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) জরিপে এসব উঠে এসেছে।
দেশে দুর্নীতি বন্ধে সব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে একজন করে ন্যয়পাল (পার্লামেন্ট কর্তৃক নিযুক্ত কমিশনার বা কর্মকর্তা) নিয়োগের সুপারিশ করেছে সিপিডি।

বুধবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে সিপিডি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন গবেষণা সহযোগী নিশাত তাসনিম আনিকা ও জেবুন্নেসা। 

সিপিডির জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রায় ৬৮ শতাংশ ব্যবসায়ী উচ্চমাত্রার দুর্নীতিকে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে এক নম্বর সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। প্রায় ৫৫ শতাংশ ব্যবসায়ী এটি মনে করেন, দ্বিতীয় স্থানে আছে অদক্ষ আমলাতন্ত্র। আর তৃতীয় বড় সমস্যা হিসেবে বৈদেশিক মুদ্রার স্থিতিশীলতার বিষয়টিকে মনে করেন ৪৬ শতাংশ ব্যবসায়ী।

মোট ব্যবসা-বাণিজ্যে ১৭টি সমস্যা চিহ্নিত করেছে সিপিডি। শীর্ষ তিনটি ছাড়া অন্য সমস্যাগুলো হলো—অপর্যাপ্ত অবকাঠামো, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, অর্থায়নের সীমাবদ্ধতা, জটিল কর নীতি, বারবার নীতি পরিবর্তন, দক্ষ শ্রমশক্তির অভাব, উদ্ভাবনের সক্ষমতায় ঘাটতি, শ্রমশক্তিতে দুর্বল নৈতিকতা, উচ্চ করহার, জলবায়ু পরিবর্তন, সরকারের অস্থিতিশীলতা, অপরাধ ও চুরি, সীমাবদ্ধ শ্রমনীতি ও দুর্বল স্বাস্থ্যব্যবস্থা।

বাংলাদেশে ব্যবসায় পরিবেশ-২০২৩: উদ্যোক্তা জরিপের ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, গত ৬ বছরে ঘুষ পরিস্থিতির কোন পরিবর্তন দেখেননি ব্যবসায়ীরা। অর্থাৎ ঘুষ কমে নাই। পাবলিক কন্টাক্ট, ট্যাক্স পেমেন্ট, আমদানি-রপ্তানি ও বিচার ব্যবস্থায় ঘুষ দিতে হয়েছে। দেশের ট্যাক্স কাঠামো পরিবেশবান্ধব নয় বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা। 

গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, অর্থ পাচার একটা ব্যাপক স্তরে রয়েছে।

বিজ্ঞাপন
অর্থ পাচার ঠেকানো বড় চ্যালেঞ্জ। ৬০ শতাংশ ব্যবসায়ী মনে করেন এখনও ২৩% কর ফাঁকি হচ্ছে। 
সকল ক্ষেত্রে দুর্নীতি বন্ধ করতে ভারতের আধার কার্ডের মতো কার্ডের মাধ্যমে সমন্বিত লেনদেন ব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে বলে মনে করেন খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।

সিপিডির জরিপে ৪৭ শতাংশ ব্যবসায়ী বলেছেন, ক্যাপাসিটি পেমেন্ট তুলে দিলে বিদ্যুৎ খাতে সাবসিডি প্রেসার থাকবে না। এছাড়া জরিপে অংশ নিয়ে, ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাংলাদেশে ব্যবসার বড় বাধা ঘুষ।
'এক্সিকিউটিভ মতামত সমীক্ষা' ২০২৩ সালের মে-জুলাই পর্যন্ত বিভিন্ন সেক্টরের ছোট, মাঝারি ও বড় কোম্পানির ৭১ জন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার উপর পরিচালিত হয়েছিল।

ব্যবসায়ীদের মতামতের ভিত্তিতে জরিপটি করেছে সিপিডি। মূলত ২০২৩ সালে ব্যবসায় পরিবেশ কেমন ছিল, সেটা বিশ্লেষণ করার জন্য এই জরিপ করা হয়। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) সহায়তায় এ জরিপ করা হয়। এ ছাড়া ডব্লিউইএফের ফিউচার অব গ্রোথ রিপোর্ট ২০২৩–এর বাংলাদেশ অংশের জন্য সিপিডি তথ্য–উপাত্ত সংগ্রহ করেছে। তবে ব্যবসা-বাণিজ্যে যে ১৭টি সমস্যার কথা বলা হয়েছে, তা বিশ্বের অন্য দেশগুলোর জন্যও প্রযোজ্য। কোনো দেশে এসব সমস্যার মাত্রা ভিন্ন।

জরিপে আরও উঠে এসেছে, ব্যবসার সব সূচকেই এশিয়ার প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় পিছিয়ে বাংলাদেশ।

সংবাদ সম্মেলনে খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, একজন ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, তিনি একটি পরিষেবা সংযোগ নিতে আবেদন করলে তাঁর কাছে যে পরিমাণ ঘুষ চাওয়া হয়েছিল, তা তাঁর পরিকল্পিত বিনিয়োগের সমপরিমাণ। বড় ব্যবসায়ীরা কোনো না কোনোভাবে ঘুষ-দুর্নীতি সামলে নিতে পারলেও ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের কাছে এটি বড় সমস্যা।

সিপিডির এই গবেষণা পরিচালক বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্যে পুরোনো চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি এবার নতুন কিছু চ্যালেঞ্জ সামনে এসেছে। যেমন বৈদেশিক মুদ্রার সংকট। এসব কারণে ব্যবসায় পরিবেশ আরও জটিল হয়েছে। তিনি আরও বলেন, কিছু ব্যবসায়ীর সক্ষমতা বেড়েছে। কিন্তু এ সংখ্যা খুবই কম। ব্যবসা-বাণিজ্যে সমস্যাগুলোর সমাধান না হলে বৈষম্য বাড়বে। করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো এগিয়ে যাবে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা পিছিয়ে পড়বে।

খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেমের মতে, ঘুষ-দুর্নীতি বন্ধসহ ব্যবসা-বাণিজ্যের সমস্যা সমাধানে রাজনৈতিক শীর্ষ পর্যায়ে সদিচ্ছার প্রতিফলন আছে। নির্বাচনী ইশতেহারেও অঙ্গীকার করা হয়েছে। এর বাস্তবায়ন দরকার।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ তলানিতে আছে। ভিয়েতনাম, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ডসহ এশিয়ার প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর তুলনায়ও বেশ পিছিয়ে আছে দেশটি।

ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশের উন্নতি করতে সিপিডি ১০টি সুপারিশ করেছে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো—ব্যবসায় বাণিজ্যের পরিবেশের উন্নতিতে বিভিন্ন সরকারি কার্যালয়ের ১০০ দিন, ১ বছর, ৩ বছর ও ৫ বছরের পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন; ন্যায়পাল কার্যালয় স্থাপন; সীমিত সময়ের জন্য খাতভিত্তিক কিছু কমিশন গঠন, যেমন ব্যাংক, শেয়ারবাজার, নিয়ন্ত্রক সংস্থার সংস্কার; একটি সমন্বিত আর্থিক লেনদেন খাত প্রতিষ্ঠা; সরকারি কেনাকাটা ব্যবস্থা আধুনিক করা ইত্যাদি।

জরিপের তথ্য উপস্থাপন করে গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, এশিয়ায় ব্যবসায় প্রতিযোগিতায় সবচেয়ে পিছিয়ে বাংলাদেশ। ভিয়েতনাম সব সূচকে বাংলাদেশের ওপরে। ইনক্লুসিভ অর্থনীতি থাইল্যান্ডের। তবে বাংলাদেশ টেকসই সূচকে একটু উপরে রয়েছে।

দক্ষিণ এশিয়ার বিবেচনাতেও বাংলাদেশ এগিয়ে নেই। তবে টেকসই অর্থনীতি বা উন্নয়নের ক্ষেত্রে ভারতের পরই বাংলাদেশ। দক্ষিণ এশিয়ায় প্রবৃদ্ধিতে বাংলাদেশের পারফর্ম ভালো বলা যাবে না। স্কুল শিক্ষায় নেপাল অনেক এগিয়ে। ডেল্টা প্ল্যান থাকলেও বাস্তবায়নে পিছিয়ে বাংলাদেশ।
তিনি বলেন, ৬৬.২০ শতাংশ ব্যবসায়ী মনে করছেন আগামী দুই বছর জ্বালানি সংকটে ভুগবে ব্যবসায়ীরা। তারা এটা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

এ ব্যাপারে তিনি বলেন, আমরা নবায়নযোগ্য জ্বালানির কথা বারবার বললেও সেটা যথাযথভাবে আমলে নেয়নি সরকার। বৈশ্বিকভাবেই জ্বালানির দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। সেখানে এলএনজি আমদানি বড় সংকট তৈরি করেছে। আমরা মনে করি সরকারের উচিত জ্বালানি সংকট নিরসনে নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে বিবেচনায় প্রাধান্য দেওয়া। 

৫৮ শতাংশ ব্যবসায়ী মনে করছেন ব্যাংকিং খাতে নজরদারি ও তদারকির অভাব রয়েছে। ৫০ শতাংশ ব্যবসায়ী বলছেন ডলার সংকটের কারণে তারা পণ্য আমদানি করতে পারছেন না।

অর্থ-বাণিজ্য থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

অর্থ-বাণিজ্য সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status